মাডিম্যান কমিটি, ১৯২৪

মাডিম্যান কমিটি, ১৯২৪  ১৯১৯ সালে ভারত শাসন আইন বাস্তবায়নের পরপরই কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে বিশেষ করে স্বরাজীদের নেতৃত্ব শাসনতন্ত্র পুনর্বিবেচনা করে ভারতকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত ডোমিনিয়ন মর্যাদা প্রদানের জন্য প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এ ধরনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার স্যার আলেকজান্ডার মাডিম্যান-এর সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রতিবেদন Report of the Reform Enquiry Committee, 1924 নামে পরিচিত। নয় সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির নির্ধারিত দায়িত্ব ছিল ভারত শাসন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেসকল অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কিংবা এর অন্তর্নিহিত যেসকল দোষ-ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে সে সম্পর্কে এবং এই আইনের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকার ও গভর্নর শাসিত প্রদেশসমূহের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় বিধিবিধান সম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান; অনুরূপ অসুবিধা অথবা ত্রুটি তদন্তের সম্ভাব্যতা এবং অ্যাক্টের কাঠামো, নীতি ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অ্যাক্ট ও বিধি-বিধানের অধীনে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অথবা অ্যাক্টের এমন সংশোধনী আনয়ন যা প্রশাসনিক অসম্পূর্ণতা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে প্রতীয়মান হয়। কমিটি দ্রুততার সাথে ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে শুরু করে ডিসেম্বর মাসে এর কাজ সম্পন্ন করে এবং ১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পরিশিষ্টে কমিটিতে সাক্ষ্য দানকারী জননেতা ও ব্যক্তিবর্গের একটি তালিকা, ভারত শাসন আইনের অধীনে আইনগত ও শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির সম্ভাবনা সম্বলিত স্মারকলিপি এবং জনৈক সদস্য বিজয় চাঁদ মাহতাবের একটি দীর্ঘ নোট সংযুক্ত ছিল।

সংস্কারের কার্যকারিতা সম্পর্কে বঙ্গীয় সরকারের মনোভাব ছিল এরূপ: অন্তর্বর্তীকালীন শাসনতন্ত্র বাস্তবায়নের পথে সকল বাধার মূলে ছিল সরকার সম্পর্কে ভারতীয়দের এমন ধারণা যে, এতে জনগণের কোনো অংশীদারিত্ব বা দায়িত্ব নেই এবং এ কারণে সকল প্রগতিশীল রাজনীতিবিদের কর্তব্য হচ্ছে এর সমালোচনা করা ও বাধা দেওয়া। মন্ত্রী বা সদস্যদের কারোরই কোনো ধরনের নীতি নির্ধারণের সুযোগ ছিল না। বেঙ্গল কাউন্সিলের অনেক সদস্যই শাসনতন্ত্রকে অকেজো করার অঙ্গীকার করেছিলেন। বিভিন্ন উপদলের মতপার্থক্য সত্ত্বেও বাংলার শিক্ষিত শ্রেণীর অধিকাংশই যথাসম্ভব শীঘ্র প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন লাভে ইচ্ছুক ছিলেন। সুতরাং, সর্বাগ্রে এটাই প্রয়োজন যে নির্বাচিত সদস্যগণ তাঁদের ক্ষমতা উপলদ্ধি করবেন ও তার প্রয়োগ ঘটাবেন।

বাংলা সরকারের প্রতিবেদনের সঙ্গে স্যার  আবদুর রহিম ও  .কে ফজলুল হক তাদের নিজস্ব মতামত প্রেরণ করেন। আবদুর রহিম মত প্রকাশ করেন যে, যেকোন পশ্চাৎমুখী বা প্রতিক্রিয়াশীল প্রবণতা সর্বসম্মত ভারতীয় মতের বিরোধী হবে এবং রাজনৈতিক অস্তিরতা বৃদ্ধি করবে। অপরদিকে, ফজলুল হক দ্বৈতশাসন বাস্তবায়নের আদর্শকে সমর্থন করতে প্রস্ত্তত ছিলেন না। তিনি মনে করেন যে, পাশ্চাত্য রীতির প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান ভারতের জন্য উপযোগী নয়।

মাডিম্যান কমিটি সর্বসম্মত প্রতিবেদন দাখিল করেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ছিল যে, বর্তমান শাসনতন্ত্র প্রায় সকল প্রদেশে কার্যকর রয়েছে এবং রাজনীতিবিদগণ মূল্যবান রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণীত হয়। সংখ্যালঘুদের মত ছিল যে, দ্বৈতশাসন চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে মোটেও সফল হতে পারবে না। তাদের মতে, শাসনতন্ত্রে শুধুমাত্র মৌলিক পরিবর্তনই রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন করতে পারে।  [এনায়েতুর রহিম]