মশা

মশা  Diptera বর্গের Culicidae গোত্রের পতঙ্গ। এই গোত্রের গুরুত্বপূর্ণ গণ  Anopheles, Mansonia, Culex, Aedes, Psorophora ও Haemogogus। মশা ম্যালেরিয়া, গোদ, পীতজ্বর, ডেঙ্গু, ভাইরাসঘটিত এনসেফালিটিস ও কতিপয় চর্মরোগসহ বহু রোগজীবাণুর বাহক। স্ত্রী মশা সুইয়ের মতো ছেদন ও চোষণ উপযোগী মুখোপাঙ্গ দিয়ে মেরুদন্ডী পোষক প্রাণীর রক্ত চুষে থাকে। ডিমপাড়ার আগে রক্তপান মশার জন্য অত্যাবশ্যক। পুরুষ মশা ফুল-ফলের নির্যাস খায়। গোটা পৃথিবীতে বিদ্যমান তিন সহস্রাধিক মশা প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১৩ প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে।

এডিস মশা

বাংলাদেশে Anopheles-এর চার প্রজাতি ম্যালেরিয়ার রোগজীবাণু বহন করে। প্রজাতিগুলি Anopheles dirus, An. philippinensis, An. minimus ও An. sundaicus। আরও যে চার প্রজাতির মশাকে ম্যালেরিয়া পরজীবীবাহক বলে মনে করা হয় সেগুলি Anopheles aconitus, An. vagus, An. annularis ও An. maculatus var willmorei। বাংলাদেশে সাধারণত বছরে দুবার ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে: একবার প্রাক-বর্ষায় (মে-জুন), পরের বার বর্ষা-পরবর্তী (অক্টোবর-নভেম্বর) সময়ে। ম্যালেরিয়া ছাড়া অন্য রোগের মধ্যে গোদ সংক্রমণ ঘটায় Culex quinquefasciatus (bancroftian type) ও Mansonia প্রজাতি (brugian type)। দীর্ঘকাল অবগুপ্ত ও সম্প্রতি শনাক্ত ভাইরাসজনিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটায় Aedes aegypti ও Ae. albopictus এবং আরও স্বল্পজ্ঞাত ভাইরাসজনিত জাপানী এনসেফালিটিস ছড়ায় Culex tritaeniorhynchus মশা।

এনোফিলিস মশা

ম্যালেরিয়াবাহী হিসেবে সুপরিচিত চারটি মশাই গ্রামাঞ্চলে ও শহরতলীতে বংশবৃদ্ধি করে। শহরাঞ্চলে ম্যালেরিয়া ছড়ায় গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে আসা কিছু নবাগত সন্দেহজনক মশা, বিশেষত Anopheles vagus, যে সারা দেশে বংশবৃদ্ধি করে। ডেঙ্গুবাহী মশা কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক উভয় জলাধারে ডিম পাড়ে যত্রতত্র। Aedes aegypti শহুরে প্রজাতি, কিন্তু Ae. albopictus-এর পছন্দ গ্রামীণ পরিবেশ। গোদরোগের জীবাণুবাহী প্রজাতি Cx. quinquefasciatus সর্বত্রগামী, ডিম পাড়ে যত্রতত্র, কামড়ানোর ধরনও বহুবিধ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলেই গোদরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। গোদরোগের প্রায় ৮০ ভাগই Cx. quinquefasciatus দংশনজনিত। Mansonia জলজ উদ্ভিদে ডিম পাড়ে, আর Cx. tritaeniorhynchus পছন্দ করে ধানক্ষেত।

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মশা নিধনে কীটনাশক ছড়ানোর পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে ডেল্টামেক্রনযুক্ত মশারি ব্যবহূত হচ্ছে। এতে মানুষ-মশা সংযোগ যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। সরকারি কর্মচারীরা লার্ভানাশক হিসেবে অর্গ্যানোফসফেট (ম্যাল্যাথিয়ন) ব্যবহার করেন, আর পৌরসংস্থা শহরের নালানর্দমায় ছিটায় ম্যাল্যারিয়ল বা ব্ল্যাক অয়েল। সরকারি উদ্যোগে কীটনাশক ছিটানোর কর্মসূচি প্রায়শই অপ্রতুল ও অকার্যকর।

মশা বিশেষজ্ঞরা দেশে সফল মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ নিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলাভূমি ও খানাখন্দ পরিষ্কার করার ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। গৃহে ব্যবহূত পাত্রে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া এবং প্রাকৃতিক জলাধারের যত্ন সুপারিশ করা হয়েছে। স্থানীয় বিজ্ঞানীরা মশার লার্ভাভুক কতকগুলি দেশীয় প্রাণী প্রজাতি শনাক্ত করেছেন। এছাড়া মাছ ও নানা প্রকার জলজ কীটপতঙ্গ থেকেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে। দেশীয় কিছু উদ্ভিদজাত দ্রব্য মশার লার্ভানাশক বলে প্রমাণিত হয়েছে। মশার লার্ভা ফাঁদে ধরতে সমর্থ এমন একটি উদ্ভিদ প্রজাতি বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট আগ্রহ জাগিয়েছে। জাতীয় মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে এসব জৈব নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে।  [কে.এম নূরুল হুদা]

আরও দেখুন কালাজ্বর; ডেঙ্গুজ্বর; ম্যালেরিয়া