মল্লিক, কুমুদরঞ্জন
মল্লিক, কুমুদরঞ্জন (১৮৮৩-১৯৭০) শিক্ষাবিদ, কবি। ১৮৮৩ সালের ১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কোগ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস একই জেলার শ্রীখন্ড গ্রামে। পিতা পূর্ণচন্দ্র মল্লিক ছিলেন কাশ্মীর রাজসরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
কুমুদরঞ্জন ১৯০১ সালে এন্ট্রান্স, ১৯০৩ সালে রিপন কলেজ থেকে এফএ এবং ১৯০৫ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পরে বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন এবং সেখান থেকেই ১৯৩৮ সালে প্রধান শিক্ষকরূপে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম ওই স্কুলে তাঁর ছাত্র ছিলেন।
কুমুদরঞ্জনের কবিত্বশক্তির বিকাশ ঘটে বাল্যকালেই। পল্লীর মানুষ ও প্রকৃতি তাঁর কাব্যের প্রধান বিষয়। তাঁর কবিতায় নির্জন গ্রামজীবনের সহজ-সরল রূপ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। পল্লী-প্রবণতার সঙ্গে বৈষ্ণবভাবুকতা যুক্ত হয়ে তাঁর কবিতার ভাব ও ভাষাকে স্নিগ্ধতা ও মাধুর্য দান করেছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘কুমুদরঞ্জনের কবিতা পড়লে বাঙলার গ্রামের তুলসীমঞ্চ, সন্ধ্যাপ্রদীপ, মঙ্গলশঙ্খের কথা মনে পড়ে।’ তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা: উজানী (১৯১১), বনতুলসী (১৯১১), শতদল (১৯১১), একতারা (১৯১৪), বনমল্লিকা (১৯১৮), নূপুর (১৯২০), রজনীগন্ধা (১৯২১), অজয় (১৯২৭), তূণীর (১৯২৮), স্বর্ণসন্ধ্যা (১৯৪৮) ইত্যাদি।
কুমুদরঞ্জন বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের প্রতিষ্ঠান সাহিত্যতীর্থের ‘তীর্থপতি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘বঙ্কিমচন্দ্র স্বর্ণপদক’ (১৯০৫) ও ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [ওয়াকিল আহমদ]