মনোহরদী উপজেলা

মনোহরদী উপজেলা (নরসিংদী জেলা)  আয়তন: ১৯৩.৮৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৪´ থেকে ২৪°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাকুন্দিয়া উপজেলা, দক্ষিণে শিবপুর উপজেলা, পূর্বে বেলাবো এবং কটিয়াদি উপজেলা, পশ্চিমে কাপাসিয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৭৫১১২; পুরুষ ১৩১৩১৬, মহিলা ১৪৩৭৯৬। মুসলিম ২৬২৩০২, হিন্দু ১২৭৩২, খ্রিস্টান ৬, বৌদ্ধ ১৭ এবং অন্যান্য ৫৫।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন  ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ। গোটাসিয়া বিল, জরিয়া বিল এবং পারইল বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মনোহরদী থানা গঠিত হয় ১৯০৪ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১২৪ ১৬৫ ২১৪২২ ২৫৩৬৯০ ১৪১৯ ৫৩.৩ (২০০১) ৪৮.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ১২ ১৭৬৩৫ - ৬৩.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৮৩ (২০০১) ৩৭৮৭ ১৭৭০ (২০০১) ৫০.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
একদুয়ারিয়া ৫৪ ৪৫২৩ ১৩৭৭০ ১৪৯৭১ ৫১.৮
কঞ্চিকাটা ৬৭ ৪৮০৪ ১১৩৮৯ ১২৬৬০ ৪৬.৯
খিদিরপুর ৭৪ ৫০৭৮ ১৩৬৪০ ১৪৯৯৮ ৪৮.৪
গোটাসিয়া ৬১ ৫১২১ ১১৮৬৬ ১৩২৮০ ৪৭.৬
চন্দনবাড়ী ৩৩ ২৪৪৬ ৬৬৭৫ ৭৬৬০ ৫৮.১
চর মানদালিয়া ৪০ ৩৭৩১ ১২৬৯৬ ১৩৫৪৮ ৪০.৪
চালাকচর ২৭ ২৪৪৬ ৯২৯৫ ১০১২৬ ৪৮.৬
দৌলতপুর ৪৭ ৩৫৫২ ৯৬৭৯ ১০৫৭৩ ৫৩.৬
বড়চাপা ২১ ৫৪২৫ ১৩৩২৭ ১৪২০৫ ৪৭.২
লেবুতলা ৮১ ৫১৩২ ১১৩৯৫ ১২৭৪৭ ৪৯.৯
শুকুনদি ৯৪ ৪২৭৯ ৮৯৭৫ ১০০০২ ৫১.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মিয়াবাড়ির এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ (১৮৯০), শুকুনদি আবদুল হাই মৌলভীর মসজিদ (১৯০০)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর গণআন্দোলনে হরতাল চলাকালে হাতিরদিয়া বাজারে জনতার পিকেটিং ও বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত ও বহুলোক আহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মনোহরদী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকসেনা ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং মুক্তিবাহিনী কিছুকাল ক্যাম্পটি দখল করে রাখে। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুকুনদি ইউনিয়নের দশদোনা গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। পরদিন পাকবাহিনী গ্রামটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

বিস্তারিত দেখুন মনোহরদী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬৪৫, মন্দির ২৬, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বিলাগী মিয়াবাড়ি মসজিদ, শুকুনদি আবদুল হাই মৌলভীর মসজিদ, নারান্দী আশক মোল্লার মসজিদ, আসাদনগর মাযার, মনোহরদী পাগলনাথ আশ্রম।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৯%; পুরুষ ৪৯.৭%, মহিলা ৫০.২%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাতিরদিয়া রাজিউদ্দিন কলেজ (১৯৭২), খিদিরপুর কলেজ (১৯৮৭), খিদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (সাবেক জর্জ মেরী একাডেমী, ১৯১২), চালাকচর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), হাতিরদিয়া সাদত আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), মনোহরদী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), এলকে ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), শেকেরগাঁও সিনিয়র মাদ্রাসা, ধরাবান্দা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৬), দশদোনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত: দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ (১৯৮৪); সাপ্তাহিক: মশাল (১৯৮৭)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৬৮, অডিটোরিয়াম ১, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ৪০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৭৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪%, শিল্প ০.৭৩%, ব্যবসা ১১.৮১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৭২%, চাকরি ৭.০৪%, নির্মাণ ০.৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৮% এবং অন্যান্য ৬.৬৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭১.৩৬%, ভূমিহীন ২৮.৬৪%। শহরে ৫৮.২৬% এবং গ্রামে ৭২.০৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, পান, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, তিসি, চীনাবাদাম, অড়হর, নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, গবাদিপশু ৩২, হাঁস-মুরগি ৩০০, হ্যাচারি ১, পশু প্রজনন কেন্দ্র ৪।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩১১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪.৪৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৫৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৭, মেলা ৫। হাতিরদিয়া হাট, মনোহরদী হাট, চালাকচর হাট, সাগরদী হাট এবং মনোহরদী খালপাড় মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, কলা, পান, রসুন, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৬.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ২.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৫.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩১.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, দাতব্য চিকিৎসালয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [মো. ইফতেখার উদ্দিন ভূঞা]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মনোহরদী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।