ভ্রুণ

ভ্রুণ (Embryo) একটি বহুকোষী জীবের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়। সাধারণভাবে, ভ্রুণের বিকাশ জীবন চক্রের একটি অংশ যা নিষিক্তকরণের ঠিক পরে শুরু হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণু ছয় থেকে সাত দিন পর্যন্ত আকৃতির কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ক্রমাগত বিভাজিত হয় এবং তা ইমপ্লান্টেশন এর স্থানে পৌঁছাবার জন্য ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের দিকে যেতে থাকে। প্রতি বিভাজনে শুধুমাত্র কৌলিক বস্তুর (ক্রোমাটিন) সংশ্লেষণ ঘটে এবং সাথে সাথে কোষস্থ সাইটোপ্লাজমের পরিমাণ কমতে থাকে। একটি প্রজাতির প্রাণীকুলের মধ্যে ক্লিভেজের ধরন একই রকম কিন্তু প্রজাতি ভেদে এর যথেষ্ঠ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পর পর কয়েকবার বিভাজনের ফলে জাইগোটটি একটি ফাঁপা বলের আকৃতি ধারন করে ব্লাস্টুলায় পরিণত হয়। গবাদিপশুর জরায়ুতে ব্লাস্টুসিস্ট প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয় নিষেকের ১৪ থেকে ১৬তম দিনের মধ্যে। ব্লাস্টুসিস্ট ভ্রুণে পরিণত হলে এর চারদিকে তরলপূর্ণ এমনিয়োটিক থলে দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। মাতৃগর্ভ দ্বারা ভ্রুণ সনাক্তকরণ সম্পন্নের পর প্লাসেন্টা গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় যা নাভীরজ্জুর মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান মা থেকে বর্ধনশীল ভ্রুণে স্থানান্তরিত করে। গাভীতে প্লাসেন্টা গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় নিষেকের ২১তম দিনে। অপরদিকে পাখি ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীতে ডিমের কুসুম ভ্রুণের পুষ্টি উপাদান যোগান দেয়। গাভীতে গর্ভাবস্থার ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে ভ্রুণ তিন ধরনের কলাতে বিন্যস্ত হয় যা এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম নামে পরিচিত। এক্টোডার্ম চামড়া, স্নায়ুতন্ত্র ও দাঁত গঠন করে। মেসোডার্ম থেকে সংযোজন কলা, সংবহনতন্ত্র, পেশীসমূহ এবং হাড় তৈরি হয়। অন্যদিকে এন্ডোডার্ম থেকে তৈরি হয় পরিপাকতন্ত্র, ফুসফুস এবং মূত্রাদার প্রণালী। গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহে ভ্রুণ বাচ্চায় পরিনত হয় এবং প্রসবের পূর্বপর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজমান থাকে। এ সময়ে দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের পরিপক্কতা ঘটে। [মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঞা]