ভেড়া

ভেড়া (Sheep) বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৬.০৭ লক্ষ ভেড়া রয়েছে, যার অধিকাংশই দেশীয়। এর অবস্থান সকল রুমিন্যান্ট প্রাণীর মধ্যে তৃতীয়। প্রান্তিক খামারিরা শুধুমাত্র মাংসের জন্য দেশী ভেড়া পালন করে থাকে। এরা নিম্নমানের আঁশযুক্ত খাদ্য খেয়ে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে। এরা বছরে দুইবার একত্রে একাধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে। এদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তুলনামুলক বেশি। বাংলাদেশের বরেন্দ্র, যমুনা নদী অববাহিকা ও উপকূলীয় অঞ্চলে এদের ঘনত্ব বেশি দেখা যায়। এছাড়া মুজাফফারবাদি/নাগপুরী নামের ভারতীয় একটি জাত পাওয়া যায়। একে ভুলভাবে গাড়ল বলা হয়ে থাকে। যমুনা অববাহিকা অঞ্চলের ভেড়া আকারে ছোট (বাচ্চার গড় জন্ম ওজন ১.৪৫ কেজি, পুরুষ ১৮-২৫ কেজি, ভেড়ী ১৫-২২ কেজি)। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, যমুনা নদীর দুইপাড়ে বেশি দেখা যায়। এদের শরীরে সাদা ক্রিমযুক্ত পশম দেখা গেলেও মাথা ও পায়ে কালো রংয়ের পশম দেখা যায়। এদের কানের দৈর্ঘ্য ৯.১৫ সে.মি বরেন্দ্র ভেড়ার চেয়ে বড়। পা এবং পেটের অংশে কম পশম দেখা যায়। এদের দেহের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা যথাক্রমে ৪৯.৯৪ ও ৫০.৬৩ সে.মি। এটি বাংলাদেশের একটি বাচ্চা প্রসবকারী প্রজাতি যা প্রতি প্রসবে ১-৪টি বাচ্চা প্রসব করে (গড় বাচ্চা সংখ্যা ১.৮৬)।

বরেন্দ্র এলাকার ভেড়া যমুনা অববাহিকার ভেড়ার চেয়ে আকারে বড়। রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলাতে বেশি দেখা যায়। বাচ্চার গড় জন্ম ওজন ১.৫৩ কেজি, পুরুষ ২২-৩০ কেজি, ভেড়ীর ওজন ১৫-২৫ কেজি হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং সাদা, খয়েরী এবং সাদা-খয়েরী মিশ্রিত থাকে। এদের কানের দৈর্ঘ্য ৭.২১ সে.মি। প্রতি প্রসবে ১-৩ টি বাচ্চা প্রসব করে (গড় বাচ্চা সংখ্যা ১.৪০)। দেহের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা যথাক্রমে ৫৫.৩০ ও ৫৩.৬৫ সে.মি। উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়া যমুনা নদী অববাহিকা ও বরেন্দ্র অঞ্চলের ভেড়ার চেয়ে আকারে বড়। পটুয়াখালী, ভোলা, হাতিয়া, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর জেলাতে বেশি পাওয়া যায়। বাচ্চার গড় জন্ম ওজন ১.৭৫ কেজি, পুরুষ ২৫-৩২ কেজি, ভেড়ীর ওজন ১৮-২৬ কেজি হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং সাদা, হালকা বাদামী থেকে গাঢ় বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এদের কানের দৈর্ঘ্য ১২.০৫ সে.মি। প্রতি প্রসবে ১-২টি বাচ্চা প্রসব করে (গড় বাচ্চা সংখ্যা ১.১৭)। দেহের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা যথাক্রমে ৫৭.২৭ ও ৫৫.৩৩ সে.মি হয়ে থাকে। দেশী ভেড়া ভালো উৎপাদন দক্ষতার মাধ্যমে মাংসের চাহিদাপূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। [আবুল হাশেম]