ভূ-প্রকৃতি

ভূ-প্রকৃতি (Physiography)  সমগ্র পৃথিবী বা তার কোন অংশের প্রাকৃতিক বস্ত্তসমূহের বর্ণনা; বিশেষ করে, তাদের প্রকৃতি, গাঠনিক উপাদান, সজ্জা বিন্যাস, পরিবর্তন প্রভৃতির বিস্তারিত বিবরণ। Huxley ১৮৬৯ সালে ভূগোল শাস্ত্রে ‘প্রাকৃতিক প্রপঞ্চসমূহের সাধারণ বর্ণনা’ অধ্যয়নের জন্য ‘Physiography’ শব্দটির প্রচলন করেন। পরবর্তীতে শব্দটি পৃথিবীর উপরিভাগের চিত্র তথা বায়ুমন্ডল, জলমন্ডল এবং ভূ-মন্ডলের অঙ্গসমূহের উৎপত্তি প্রক্রিয়ার বর্ণনা বোঝাতে ব্যবহূত হতে থাকে। অর্থাৎ, ভূ-প্রকৃতি শব্দটি পরবর্তীতে প্রাকৃতিক ভূগোল শাস্ত্রের (ভূতত্ত্ব, আবহাওয়া বিজ্ঞান এবং সমুদ্র বিজ্ঞান যার অর্ন্তভুক্ত) সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়। আধুনিক কালে ভূ-প্রকৃতি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ভূগোল শাস্ত্রের একটি অংশ তথা, ভূমিরূপের উৎপত্তি ও বর্ণনাতেই সীমিত থাকে। একই ভূতাত্ত্বিক গঠন ও জলবায়ুগত ইতিহাস রয়েছে এবং ফলস্বরূপ একই সমরূপ ভূরূপতাত্ত্বিক ইতিহাস ধারণ করে এমন একটি সমসত্ব অঞ্চলকে ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল বা একক বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই একটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল তার সংলগ্ন অন্য অঞ্চলগুলো থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়।

বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় অর্ধেক অংশ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা  এই তিনটি বৃহৎ নদীপ্রণালীর সর্বনিম্ন ভাটিতে অবস্থিত এবং গড় উচ্চতা ১০ মিটার সমোন্নতি রেখার নিচে। উচ্চতা ও ভূমিরূপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: টারশিয়ারী যুগের পাহাড়, প্লাইসটোসিন সোপান এবং নবীন যুগের প্লাবনভূমি এলাকা। সমুদ্র সমতল থেকে খুব বেশি উঁচু না হওয়ায় প্রতি বছর প্রবল মৌসুমি বর্ষণের ফলে দেশের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।

গনঠ-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) ও মেঘনা নদী এবং তাদের অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী বাহিত কোয়াটারনারি যুগের (প্রায় ২০ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত) পলল বাংলাদেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় সঞ্চিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়কালে পলিজ সমভূমির মধ্য, উত্তর এবং পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। বিগত দুশ বৎসরে গঙ্গা এবং তিস্তা নদীর পূর্বমুখী স্থানান্তর এবং সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের উল্লেখযোগ্যভাবে পশ্চিমমুখী স্থানান্তর সাম্প্রতিক সময়কালেও মহীগাঠনিক ভূ-আলোড়নের (epeirogenic movements) সাক্ষ্য বহন করছে। টারশিয়ারী যুগের টিলা ও পাহাড়সমূহ শিলং মালভূমির দক্ষিণ পার্শ্বীয় শৈলশিরায় একটি সরু চিলতে বরাবর ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং মায়ানমারের সীমানা ঘেঁষে সিলেট জেলার পূর্ব ও দক্ষিণভাগে এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে বিস্তৃত।

আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে সুস্পষ্ট তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: (ক) প্লাবন সমভূমি, (খ) সোপান অঞ্চল এবং (গ) পার্বত্য অঞ্চল। এদের প্রত্যেকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বিস্তৃতভাবে দেশের ভূ-প্রকৃতিকে ২৪টি উপ-অঞ্চলে এবং ৫৪টি এককে ভাগ করা যেতে পারে। প্রধান প্রধান ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ এবং উপ-বিভাগসমূহ নিম্নরূপ:

(১) পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি; (২) তিস্তা প্লাবনভূমি; (৩) পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমি; (৪) যমুনা (নবীন ব্রহ্মপুত্র) প্লাবনভূমি; (৫) হাওর অববাহিকা; (৬) সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবনভূমি; (৭) মেঘনা প্লাবনভূমি - ক) মধ্য মেঘনা প্লাবনভূমি, খ) লোয়ার মেঘনা প্লাবনভূমি, গ) পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি, (ঘ) নবীন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি; (৮) গাঙ্গেয় প্লাবন সমভূমি; (৯) গাঙ্গেয় জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমি; (১০) সুন্দরবন এলাকা; (১১) লোয়ার আত্রাই অববাহিকা; (১২) আড়িয়াল বিল; (১৩) গোপালগঞ্জ-খুলনা পীট অববাহিকা; (১৪) চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমি; (১৫) উত্তর ও পূর্বাংশের পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি; (১৬) প্লাইসটোসিন কালের উঁচুভূমিসমূহ - ক) বরেন্দ্রভূমি, খ) মধুপুর গড়, গ) ত্রিপুরা পৃষ্ঠ; (১৭) উত্তর ও পূর্বাংশের পাহাড়সমূহ- ক) নিম্ন উচ্চতার পর্বতসারি (ডুপি টিলা ও ডিহিং ভূ-গঠনসমূহ), খ) উঁচু পর্বতসারি (সুরমা ও টিপাম ভূ-গঠনসমূহ)।

পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি  পর্বত থেকে সমভূমিতে পতিত বিভিন্ন জলধারা ও নদনদী কর্তৃক হিমালয় পর্বত থেকে বাহিত পলি পর্বতের পাদদেশে অবক্ষেপণের ফলে সুষম ঢালবিশিষ্ট এই পাদদেশীয় সমভূমি গঠিত হয়েছে। হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমির একটি অংশ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে সম্প্রসারিত হয়েছে, যা প্রায় সমগ্র দিনাজপুর অঞ্চলে বিস্তৃত। মোট আয়তন প্রায় ৩,৮৭০ বর্গ কিলোমিটার। এই অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশীয় বালুকারাশি এবং নুড়ি দ্বারা আচ্ছাদিত। এগুলো হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত টেরাই এলাকা থেকে মহানন্দা ও করতোয়া নদী এবং তাদের শাখা-প্রশাখা কর্তৃক আনীত ও পলিজ পাখা হিসেবে সঞ্চিত হয়েছে। পাদদেশীয় সঞ্চয়নসমূহ বিলম্বিত প্লাইসটোসিন (Late Pleistocene) অথবা প্রাথমিক হলোসিন (Early Holocene) সময়কালের মতো পুরানো, তবে  মধুপুর কর্দম থেকে নবীনতর। এই ভূমিরূপের নিষ্কাশন প্রণালী বিনুনি প্রকৃতির এবং একাধিক অগভীর, প্রশস্ত, মসৃণ কিন্তু অনিয়মিত আকৃতির শৈলশিরা বিশিষ্ট। এ সমস্ত শৈলশিরা অসংখ্য প্রশস্ত কিন্তু অগভীর নদীখাত দ্বারা বিভক্ত, যেগুলো ঘন ঘন শাখায়িত হয়েছে, আবার পুনর্যোজিত হয়েছে। যখন এ অঞ্চলটি ধীরে ধীরে উত্থিত হতে শুরু করে তখন থেকেই তিস্তা নদী অঞ্চলটি পরিত্যাগ করে। এলাকাটি উঁচু হয়ে ওঠার কারণেই এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীগুলো বর্তমানে সমভূমির প্রধান মাত্রার নিচে প্রায় ৬ মিটার গভীর পর্যন্ত খাত সৃষ্টি করে প্রবাহিত হচ্ছে (উত্তর থেকে দক্ষিণে এই পরিমাপ ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে)। পাদদেশীয় সমভূমি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে সুষমভাবে ঢালু হয়ে গিয়েছে। ঢালের উত্তর প্রান্ত সমুদ্রসমতল থেকে গড়ে ৯৬ মিটার উঁচু এবং দক্ষিণ প্রান্ত ৩৩ মি। সমগ্র ঠাকুরগাঁও জেলা এবং পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ ভূভাগ এই ভূ-প্রাকৃতিক এককের অন্তর্ভুক্ত। এই সমভূমির অধিকাংশ স্থানই বন্যায় প্লাবিত হয় না।

তিস্তা প্লাবনভূমি  পশ্চিমে হিমালয়ের পাদদেশীয় সমভূমি এবং পূর্ব দিকে উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বৃহৎ ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল। দক্ষিণে বগুড়া জেলার শেরপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল প্রাচীন তিস্তা নদীগঠিত একটি প্লাবনভূমি। মোট আয়তন প্রায় ১৩,২৮৩ বর্গ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ভূমিই বর্ষা মৌসুমে অগভীরভাবে প্লাবিত হয়। তবে ঘাঘট নদী বরাবর একটি অগভীর অবভূমির (Depression) অবস্থান রয়েছে, যেখানে বন্যার গভীরতা মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে। তিস্তা, ধরলা এবং দুধকুমার  এই তিনটি বৃহৎ নদী তিস্তা প্লাবনভূমিকে ছেদ করেছে। এই নদীত্রয়ের সক্রিয় প্লাবনভূমিসমূহ তাদের বালুতট ও দিয়ারা প্রভৃতিসহ সচরাচর ছয় কিলোমিটারের চেয়ে কম প্রশস্ত।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমি  ১৭৮৭ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিধারায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সংঘটিত হয়। সে বছর ব্রহ্মপুত্র মধুপুর গড়ের পূর্ব পার্শ্ব থেকে গতি পরিবর্তন করে পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ব্রহ্মপুত্র নদের এই নতুন গতিপথ যমুনা নামে অভিহিত হতে থাকে। বাহাদুরাবাদ এবং ভৈরবের মধ্যবর্তী ব্রহ্মপুত্রের পূর্বতন প্রবাহটি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে খুবই সংকীর্ণ একটি ধারায় পরিণত হয়। পলি সঞ্চয়নের দরুন এটি মাত্র দুই কিলোমিটার প্রশস্ত একটি ক্ষুদ্র মৌসুমি নদীখাত হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমি গারো পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে শুরু করে মধুপুর গড়ের পূর্ব প্রান্ত বরাবর হয়ে নিম্নে মেঘনা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত এবং প্রশস্ত শৈলশিরা ও অবভূমি সমন্বয়ে সুষম ভূমিরূপ প্রদর্শন করে। অবভূমি অঞ্চলসমূহ সাধারণত এক মিটারের অধিক গভীরতায় প্লাবিত হয়। কিন্তু শৈলশিরাসমূহ কেবলমাত্র বর্ষার সময় অগভীরভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। মোট আয়তন প্রায় ৯,৪৩১ বর্গ কিলোমিটার।

যমুনা (নবীন ব্রহ্মপুত্র) প্লাবনভূমি  পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং অপেক্ষাকৃত নতুন যমুনা নদীকে পৃথক করার জন্য এই প্লাবনভূমি দ্বৈত নামকরণ করা হয়ে থাকে। ১৭৮৭ সালের পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ পূর্বমুখী বর্তমানের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বরাবর প্রবাহিত হতো। সে বছর ব্রহ্মপুত্রে প্রবল বন্যা সংঘটিত হওয়ায় নদীটি তার পুরাতন গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণমুখী ঝিনাই ও কোনাই নদী বরাবর প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং প্রশস্ত ও বিনুনি (braided) বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যমুনা নদী গঠন করে। ব্রহ্মপুত্রের এই গতি পরিবর্তন প্রক্রিয়া ১৮৩০ সাল নাগাদ সম্পন্ন হয়। বরেন্দ্র ভূমি ও মধুপুর গড় এই দুটি প্লাইসটোসিন সোপানের উত্থানের ফলে মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে গ্রস্ত উপত্যকার (rift valley) সৃষ্টি হয়েছিল তার মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের নতুন প্রবাহ বৃহৎ যমুনার রূপ ধারন করে। যমুনা নদীর উভয় তীরের অঞ্চলগুলি এই ভূ-প্রাকৃতিক উপ-অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত। মোট আয়তন প্রায় ৭,০৭৪ বর্গ কিলোমিটার।

এই প্লাবনভূমিকে আবার বাঙ্গালী-করতোয়া প্লাবনভূমি, যমুনা-ধলেশ্বরী প্লাবনভূমি এবং দিয়ারা ও চর প্রভৃতি কয়েকটি উপ-বিভাগে বিভক্ত করা যায়। যমুনার ডানতীর, তথা একসময়কার তিস্তা প্লাবনভূমির একটি অংশ বৃহত্তর প্লাবনভূমিরই একটি অংশ হিসেবে বিদ্যমান ছিল। যমুনার কয়েকটি শাখানদী যমুনা প্লাবনভূমির বামতীর অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, যাদের মধ্যে ধলেশ্বরী বৃহত্তম। যমুনা ও ধলেশ্বরী মিলিতভাবে যমুনা-ধলেশ্বরী প্লাবনভূমি নামে একটি উপশ্রেণী গঠন করেছে। এই উপশ্রেণীর দক্ষিণাংশ একসময় গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির অংশ ছিল। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গার প্রবাহ বরাবর বহু সংখ্যক দিয়ারা ও চর গড়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের অন্য যে কোন নদীর চেয়ে যমুনা নদীতে চরের সংখ্যা বেশি এবং বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত যমুনায় চরের একটি ধারাবাহিকতা সৃষ্টি হয়েছে। উভয় তীর প্রচুর সংখ্যক দিয়ারার উপস্থিতি দ্বারা বিভক্ত। চর এবং দিয়ারার মৃত্তিকা ও ভৃমিরূপে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ সকল পরিবৃদ্ধির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উত্থানের মধ্যকার পার্থক্য প্রায় ৫ মিটারের মতো। যে কোন পাড়ে উচ্চতর পাড়সমূহ এবং এদের মধ্যকার ব্যবধান ৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কিছু কিছু শৈলশিরা অগভীরভাবে প্লাবিত হলেও অধিকাংশ শৈলশিরা এবং প্লাবনভূমির অববাহিকাসমূহ বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার মাসাধিককাল (মধ্য জুন থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত) ০.৯১ মিটারেরও অধিক গভীরতায় প্লাবিত হয়ে থাকে।

হাওর অববাহিকা  বৃহৎ, সুষম অবনমিত ভূ-প্রকৃতি যা পশ্চিমে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, উত্তরে মেঘালয় মালভূমির পাদদেশ, পূর্বে সিলেটের উঁচু সমভূমি এবং দক্ষিণে পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি দ্বারা বেষ্টিত। পূর্ব-পশ্চিম এবং উত্তর-দক্ষিণে এই অববাহিকার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১১৩ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলটিকে সিলেট অববাহিকা নামেও অভিহিত করা হয়। অসংখ্য হ্রদ (বিল) ও বৃহদাকৃতির জলাশয় (হাওর) দ্বারা ৫,০২৫ বর্গ কিলোমিটারের এই এলাকা গঠিত। বৃহৎ পিরিচাকৃতির এই অববাহিকা অবনমনশীল এবং ভূতত্ত্ববিদদের মতে এই অবনমন প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে মধুপুর গড়ের উত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিগত ২০০ বছরে এই এলাকা ৯ থেকে ১২ মিটার অবনমিত হয়েছে বলে পরিমাপ করা হয় এবং বর্তমানেও তা সক্রিয় রয়েছে। এই অববাহিকা বর্ষাকালে নিয়মিতভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। শিলং স্তূপ-পর্বতের দক্ষিণের অভিক্ষিপ্ত পার্শ্বীয় শাখা বরাবর অবস্থিত পাহাড়সমূহ ছাড়াও বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্বতমালা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত রয়েছে। ভূরূপতাত্ত্বিক গঠনগত দিক থেকে ছোট পর্যায়ের তবে উল্লেখযোগ্য এই ক্ষুদ্র পাহাড়সমূহকে স্থানীয়ভাবে টিলা বলা হয়ে থাকে। কৈলাস টিলা, ডুপি টিলা এবং বিয়ানীবাজারের টিলাসমূহসহ সিলেটের টিলাসমূহ সাধারণত প্লায়ো-প্লাইসটোসিন যুগের কর্করীয় পলল (clastic sediments) দ্বারা গঠিত এবং এদের সর্বোচ্চ উচ্চতা গড় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬০ মিটার।

সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবনভূমি  হাওর অববাহিকা তথা সিলেট অববাহিকার পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীসমূহ দ্বারা গঠিত। মোট আয়তন প্রায় ৪,৮৬৫ বর্গ কিলোমিটার। সিলেট অঞ্চলের নিকটবর্তী কিছু ক্ষুদ্র পাহাড় এবং পাদদেশীয় এলাকাসমূহ এই প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত। অন্যত্র এই ভূমিরূপ সাধারণভাবে সুপ্রশস্ত শৈলশিরা ও অববাহিকা দ্বারা গঠিত একটি সুষম গঠনবিশিষ্ট ভূমিরূপ। কিন্তু স্থানীয়ভাবে নদীখাতসমূহ বরাবর এই ভূমিরূপ অনিয়মিত। মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য শৈলশিরা এলাকায় প্রধানত ভারি পলিগঠিত এবং অববাহিকা এলাকায় কর্দমগঠিত। প্রাক-মৌসুমি বায়ু, মৌসুমি বায়ু এবং মৌসুমি বায়ু-উত্তর - এই তিন সময়কালেই এই প্লাবনভূমিতে আকস্মিক বন্যা সংঘটিত হয় এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে প্লাবন গভীরতায় ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। স্বাভাবিক প্লাবনমাত্রা শৈলশিরাসমূহে প্রধানত অগভীর এবং অববাহিকা এলাকায় গভীর।

মেঘনা প্লাবনভূমি  ভূ-প্রকৃতির এই এককটি চারটি উপ-এককে বিভক্ত: (ক) মধ্য মেঘনা প্লাবনভূমি, (খ) লোয়ার মেঘনা প্লাবনভূমি, (গ) পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি এবং (ঘ) নবীন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি।

মধ্য মেঘনা প্লাবনভূমি  উজানে মেঘনার মূল প্রবাহ থেকে ভৈরব বাজারের কাছে পদ্মা ও ধলেশ্বরীর প্রবাহের সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত নদীখাত মধ্য মেঘনা নামে অভিহিত। মধ্য মেঘনা গঠিত প্লাবনভূমি একাধিক বিস্তৃত চর ও বহু প্রশস্ত সর্পিলাকার প্রবাহ বিশিষ্ট একটি নিম্নস্থিত ভূ-প্রকৃতি। দুই শতাব্দী পূর্বে ব্রহ্মপুত্র তার গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনার গতিপথ বরাবর প্রবাহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গঠিত প্লাবনভূমির অংশবিশেষ এই প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত। এই প্লাবনভূমির পলল প্রধানত পলিকণা ও কর্দম সমৃদ্ধ। উত্তরের কিছু শৈলশিরার পৃষ্ঠভাগে বালুকাময় ব্রহ্মপুত্র পলল বিদ্যমান। এই ভূমিতে মেঘনাসৃষ্ট মৌসুমি বন্যার (seasonal flood) মাত্রা প্রধানত গভীর। অববাহিকা এলাকাসমূহ বর্ষা ঋতুর শুরুতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং নিষ্কাশিতও হয় বিলম্বে। এই ভূ-প্রাকৃতিক উপ-এককের মোট আয়তন প্রায় ৯৭২ বর্গ কিলোমিটার।

লোয়ার মেঘনা প্লাবনভূমি  পদ্মা ও মেঘনার সঙ্গমস্থল থেকে দক্ষিণমুখী মেঘনার মোহনা পর্যন্ত অংশকে লোয়ার মেঘনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। লোয়ার মেঘনা নদীর বামতীরের পলি গঙ্গা, যমুনা এবং মেঘনাবাহিত মিশ্র পলল দ্বারা গঠিত। এসকল সঞ্চয়ন পলিকণার প্রাধান্য দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। নদীতীরের নিকটবর্তী প্লাবনভূমিতে গাঙ্গেয় উপাদান অনুপ্রবেশের কারণে সামান্য পরিমাণে চুনযুক্ত। স্থলভাগের অভ্যন্তরে পলল চুনবিহীন এবং এদের বেশিরভাগই পদ্মা নদী-আড়িয়াল খাঁ নদী বরাবর গতিপথ থেকে ১৮৪০ সাল নাগাদ বর্তমানের লোয়ার মেঘনা বরাবর প্রবাহিত হওয়ার পূর্বেই সঞ্চিত হয়েছে। এই প্লাবনভূমিতে অল্পসংখ্যক অনিয়মিত শৈলশিরা এবং অববাহিকা ধরনের ভূমিরূপ বিদ্যমান, কিন্তু অধিকাংশ এলাকাই ঢিবি আকৃতির এবং বসতি ও চাষাবাদে ব্যবহূত। পূর্বে মৌসুমি প্লাবনমাত্রা ছিল পরিমিত পরিমাণে গভীর এবং দক্ষিণ অংশে দৈনিক দুবার জোয়ারভাটার কারণে এই গভীরতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতো। বর্তমানে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সুরক্ষিত ও নিষ্কাশিত এলাকাসমূহে বন্যার মাত্রা প্রধানত অগভীর এবং প্রধানত বৃষ্টির পানি দিয়েই তা সংঘটিত হয়। ভূ-প্রকৃতির এই উপ-এককটির আয়তন প্রায় ৭৯৭ বর্গ কিলোমিটার।

পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি  বিস্তৃত এই ভূমিরূপ মেঘনার নদীজ এবং জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি থেকে পুরোপুরি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। অববাহিকা এলাকা এবং শৈলশিরা এলাকার মধ্যে উচ্চতার সামান্য পার্থক্য ছাড়া পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি প্রায় সমতল। এই ভূ-প্রকৃতির দক্ষিণাংশে প্রাকৃতিক নদনদী এবং জলধারার উপস্থিতি না থাকায় খাল খনন করে নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রধানত গভীর এবং পলিকণাসমৃদ্ধ, তবে কিছু কিছু অববাহিকার কেন্দ্রে মৃত্তিকা অগভীর কর্দম স্তর দ্বারা আবৃত থাকে। দক্ষিণ-পূর্বাংশ ব্যতীত সর্বত্র মৌসুমি বন্যার মাত্রা প্রধানত গভীর। অববাহিকার কেন্দ্রগুলোতে শুষ্ক ঋতু জুড়েও আর্দ্র অবস্থা বিরাজ করে। বাইরের নদীসমূহ যখন উচ্চমাত্রায় প্রবাহিত হতে থাকে তখন মূলত বৃষ্টিপাতের ফলে ভূভাগে সঞ্চিত পানি দ্বারা এই এলাকায় বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদনদীর (যেমন, গোমতী) আশপাশের প্লাবনভূমিসমূহ নদীর পানি দ্বারা প্লাবিত হয়। এই ক্ষুদ্র নদীগুলোই প্রায় ৭,৩৮৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমিকে সংলগ্ন পাহাড় এবং পাদদেশীয় এলাকাসমূহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

নবীন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি  মেঘনা মোহনা এবং তৎসংলগ্ন এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সমতলপ্রায় ভূমি। মোহনা সংলগ্ন দ্বীপসমূহ এবং মূল ভূখন্ড এলাকা এই প্লাবনভূমির অন্তর্গত। সব মিলিয়ে এই উপ-এককটির আয়তন প্রায় ৪,৬৩৭ বর্গ কিলোমিটার। প্লাবনভূমির প্রান্তীয় এলাকায় বিরামহীন নব নব পলি সঞ্চয়ন ও ক্ষয়কার্যের ফলে ভূমির আকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত রূপ লাভ করে। সঞ্চিত পললসমূহ সামান্য পরিমাণে চুনযুক্ত গভীর পলিকণা, যেগুলি পরিশেষে স্তরীভূত হয়ে যায়। এই প্লাবনভূমির বহু স্থানে মৃত্তিকার পৃষ্ঠভাগ শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ত হয়ে পড়ে, তবে সকল অংশে এই ঘটনা ঘটে না। মৌসুমি প্লাবনমাত্রা প্রধানত অগভীর, তবে জোয়ারভাটার কারণে গভীরতা ওঠানামা করে। বৃষ্টিপাত অথবা নদনদীর স্বাদুপানির দ্বারাই মূলত এই বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। মৌসুমি ঋতুতে অপ্রত্যাশিত উচ্চ জোয়ারভাটা অথবা ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সময় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানি দিয়ে এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের একেবারেই প্রান্তীয় এলাকায় বন্যা সংঘটিত হয়।

'গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি'  গঙ্গা নদী কর্তৃক সৃষ্ট সক্রিয় প্লাবনভূমি এবং সংলগ্ন সর্পিলাকার বিস্তীর্ণ প্লাবনভূমি নিয়ে গঠিত, যার আয়তন প্রায় ২৩,২১৩ বর্গ কিলোমিটার। সর্পিলাকার প্লাবনভূমি প্রধানত শৈলশিরা, অববাহিকা এবং পুরাতন নদীখাত সমন্বয়ে গঠিত একটি সুষম ভূমিরূপ। গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি স্থানীয়ভাবে বর্তমান এবং পরিত্যক্ত নদীর গতিপথ বরাবর অনিয়মিতভাবে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে, পশ্চিমাঞ্চলে মাঝে মাঝে পর্যায়ক্রমে রৈখিক নিম্ন শৈলশিরা এবং অবনমনসমূহের একটি ধারা গড়ে উঠেছে। সক্রিয় প্লাবনভূমিতে গঙ্গা নদী প্রতিবছর বন্যার সময় অব্যাহতভাবে ক্ষয়কার্য এবং নতুন নতুন বৃহৎ চরাভূমি গঠনের মাধ্যমে তার গতিপথ পরিবর্তন করে চলেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার তুলনায় এই নদী কম চরোৎপাদী। সঞ্চয়নকালে গাঙ্গেয় পলল চুনযুক্ত, তবে অধিকাংশ অববাহিকা কর্দম শ্রেণীর। কিছু পুরাতন শৈলশিরার মৃত্তিকা ঊর্ধ্বস্তরে অ-চুনীকৃত এবং অম্লীকৃত, এধরনের মৃত্তিকার কেবলমাত্র অন্তঃস্তরে চুনের উপস্থিতি দেখা যায়। অববাহিকাগুলোতে এবং অধিকাংশ শৈলশিরার মধ্যভাগে কর্দম মৃত্তিকার প্রাধান্য রয়েছে। শৈলশিরার শিখরদেশে প্রধানত দো-অাঁশ মৃত্তিকা এবং কখনও কখনও বালুকা মৃত্তিকার প্রাধান্য বিদ্যমান।

গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির পশ্চিম এবং উত্তরভাগে মৌসুমি বন্যার মাত্রা প্রধানত অগভীর এবং উঁচু শৈলশিরার শিখরদেশ স্বাভাবিক বন্যার আওতামুক্ত থাকে। তবে পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকে বন্যার গভীরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। প্রধানত বৃষ্টিপাত এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উত্থিত হওয়ার ফলে বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। সক্রিয় গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি এবং এর নিকটবর্তী উপনদী খাতসংলগ্ন এলাকায় বর্ষা ঋতুতে নদীর প্রবাহমাত্রা বেড়ে গেলে অনেক সময় এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। উত্তর-পশ্চিমের মহানন্দা প্লাবনভূমি এবং দক্ষিণ-পূর্বের পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমির কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকা এই ভূ-প্রাকৃতিক এককের অন্তর্ভুক্ত। তিস্তা ও গঙ্গার মিশ্র পলল দ্বারা সৃষ্ট সকল অনিয়মিত ভূ-প্রকৃতি নিয়ে মহানন্দা প্লাবনভূমি গঠিত। মেঘনা প্লাবনভূমির বিচ্ছিন্ন অংশসমূহ সুষম এবং প্রধানত পলিমাটি দ্বারা গঠিত, যা মৌসুমি ঋতুতে বৃষ্টিপাতের কারণে গভীরভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও যশোর জেলার বেশিরভাগ এলাকা; সমগ্র কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলা; মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার অংশবিশেষ গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত। ভূ-প্রাকৃতিক এই এককটি আকৃতির দিক থেকে প্রায় ত্রিকোণাকার এবং দক্ষিণে রয়েছে গাঙ্গেয় জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমি। গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি তার দক্ষিণ প্রান্তে গোপালগঞ্জ-খুলনা পীট অববাহিকাকে আবদ্ধ করে রেখেছে।

গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি  গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির দক্ষিণাংশ গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি নামে পরিচিত। অসংখ্য স্রোতজ নদনদী (tidal rivers) ও খাড়ি (creeks)-র সমন্বয়ে দাবার ছক-কাটা ঘরের মতো কর্তিত অনুচ্চ শৈলশিরা এবং অববাহিকা নিয়ে গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি গঠিত। স্থানীয় ভূমির উচ্চতার পার্থক্য সাধারণত ১ মিটারেরও কম, যেখানে গাঙ্গেয় প্লাবনভূমিতে এই পার্থক্য ২ থেকে ৩ মিটারের মতো। ভূমি গঠনকারী পলল প্রধানত চুনবিহীন কর্দম জাতীয়, তবে নদী তীরসমূহে এবং পূর্বদিকে লোয়ার মেঘনা প্লাবনভূমি সংলগ্ন অবস্থান্তরিত অঞ্চল পলিকণাসমৃদ্ধ এবং সামান্য পরিমাণে চুনযুক্ত। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার অধিকাংশ এলাকা এবং সমগ্র ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলা গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমির অন্তর্গত। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সুন্দরবন এই প্লাবনভূমির বহির্ভূত। এই ভূ-প্রাকৃতিক এককটির আয়তন প্রায় ১০,৯৮১ বর্গ কিলোমিটার।

গঙ্গা নদী সারাবছর উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বদিকে স্বাদুপানি বহন করলেও লবণাক্ত পানি স্থলভাগের দিকে শুষ্ক মৌসুমে পশ্চিমে এবং প্রায় সারা বছরই কিংবা বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ক্রমেই অনুপ্রবেশ করছে। গঙ্গার শাখানদীসমূহ এবং লোয়ার মেঘনা নদী উচ্চ প্লাবনমাত্রায় থাকাকালীন অবস্থায় প্রধানত বৃষ্টির পানি ভূভাগে আবদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে উত্তর-পূর্বাংশে মৌসুমি ঋতুতে পরিমিত গভীরতার বন্যা সংঘটিত হয়। অন্যত্র সারাবছর অথবা মৌসুমি ঋতুতে ভরা জোয়ারের সময় প্রধানত অগভীর প্লাবন সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে যেসকল বিস্তৃত এলাকায় বাঁধ বা পোল্ডার দিয়ে জোয়ারসৃষ্ট বন্যা প্রতিরোধ করা হয়েছে, সেসকল এলাকা এর ব্যতিক্রম। অনেক সময় অবশ্য বাঁধের অভ্যন্তরে আবদ্ধ বৃষ্টির পানি দ্বারা সাময়িক বন্যা সংঘটিত হয়। উত্তরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকা এবং পূর্বাংশের মাটি সারাবছর লবণমুক্ত থাকে, কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মাটি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ত হয়ে পড়ে।

সুন্দরবন অঞ্চল গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বিস্তৃত ভূমি যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ০.৯১ মি উঁচু। ৪,৭০৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই অত্যধিক নিম্নভূমি জুড়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন এবং সুন্দরবন একক নামে পরিচিত পুনরুদ্ধারকৃত চাষের জমি। অত্যধিক নিচু এই বৃহদাকৃতির মোহনাজ এলাকার বিদ্যমানতার পেছনে সম্ভবত দুটি কারণ রয়েছে  গঙ্গার শাখাসমূহ কর্তৃক অপর্যাপ্ত সঞ্চয়কার্য অথবা ভূ-অবনমন। গঙ্গার প্রধান প্রধান শাখাসমূহের কেনটিই কখনো এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হতো না, বরং কেবলমাত্র ছোট ছোট কিছু শাখাই বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে সঞ্চয়কার্য পরিচালনা করে আসছে। এই মোহনা এলাকার গঠনকার্য এখনও সম্পূর্ণ হয় নি। আবার এটাও ধারণা করা হয় যে, সম্ভবত ভূ-অবনমন প্রক্রিয়া এই এলাকার অত্যধিক নিম্ন হওয়ার পেছনে ভূমিকা পালন করেছে। এই ধারণার পেছনে বহু সাক্ষ্য-প্রমাণও রয়েছে, যেমন, জলমগ্ন এই এলাকার মধ্যভাগে শেখেরটেক ও বেদকাশি এলাকায় বৃহৎ ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব রয়েছে। উল্লিখিত এলাকাসমূহে সমুদ্রপৃষ্ঠের অনেক নিচে নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং গাছপালার গুঁড়ি পলি দ্বারা চাপা পড়ে গিয়েছে। চকোরিয়া সুন্দরবন নামে পরিচিত সুন্দরবনের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ কক্সবাজারে মাতামুহুরী নদীর মোহনায় অবস্থিত।

লোয়ার আত্রাই অববাহিকা  মোটামুটি ৮৫৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি ক্ষুদ্র ভূ-প্রাকৃতিক একক, যা আত্রাই এবং গঙ্গা নদীর মিশ্র পললগঠিত নিম্নস্থিত এলাকায় অবস্থিত। এই অববাহিকা ভর অববাহিকা নামেও পরিচিত; ‘ভর’ শব্দের অর্থ নিচু ভূমি। আত্রাই নদীর উত্তরের ভূমিরূপ প্রধানত সমতল, তবে নদীর দক্ষিণে অবস্থিত ভূ-প্রকৃতিতে প্লাবনভূমি শৈলশিরাসমূহ এবং সুবিস্তৃত অববাহিকা বিদ্যমান। মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্যে ভারি কর্দমের প্রাধান্য রয়েছে, তবে দক্ষিণ এবং পশ্চিমের শৈলশিরাসমূহের মৃত্তিকা দো-অাঁশ প্রকৃতির। বর্ষায় যমুনার অতিরিক্ত প্রবাহ হুরাসাগর নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়কালে এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের নিষ্কাশন ব্যবস্থা আবদ্ধ হয়ে পড়ে। পূর্বে মৌসুমি বন্যার মাত্রা ছিল গভীর এবং চলন বিলের বিস্তৃত এলাকা সারাবছরই জলমগ্ন থাকতো। পরবর্তীতে ১৯৬০ সাল থেকে পোল্ডার নির্মাণের ফলে এই এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থা অনেকাংশে উন্নতি লাভ করে। তা সত্ত্বেও কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কিংবা আত্রাই নদীতে অথবা বরেন্দ্রভূমির সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার ফলে বাঁধ ভেঙ্গে পোল্ডারের ভিতরে ও বাইরে প্রবল বন্যা সংঘটিত হয়।

আড়িয়াল বিল  ঢাকার দক্ষিণে পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত প্রায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি অবভূমি। প্রায় সমগ্র এলাকাই ভারি কাদা দিয়ে আবৃত। দুটি বৃহৎ নদীখাত কাছাকাছি থাকার পরও বৃষ্টিপাতের সঞ্চিত পানি দ্বারা এখানে গভীর মাত্রায় মৌসুমি প্লাবন সংঘটিত হয়ে থাকে, কেননা নদীগুলির প্রবাহ সে সময় পরিপূর্ণ থাকার কারণে তারা এই সঞ্চিত পানি নিষ্কাশন করতে ব্যর্থ হয়। শুষ্ক ঋতুতেও এই এলাকার বেশিরভাগ আর্দ্র থাকে।

গোপালগঞ্জ-খুলনা পিট অববাহিকা  গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি এবং গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি এলাকার মধ্যে অবস্থিত একাধিক নিম্ন এলাকা নিয়ে ২,৭৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল। এই এলাকার প্রধান দুটি বিল হচ্ছে বাঘিয়া বিল ও চান্দা বিল। বর্ষস্থায়ী আর্দ্র অববাহিকাসমূহ জুড়ে ভারি পিট মৃত্তিকা বিদ্যমান, তবে প্রান্তীয় এলাকায় এই মৃত্তিকা কর্দম দ্বারা আবৃত। বিল এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গার শাখানদীসমূহ বরাবর এলাকা চুনযুক্ত পলিকণাবিশিষ্ট পলল দ্বারা আবৃত থাকে। এই এলাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম পিট মজুতকারী অববাহিকা। বর্ষায় এই অববাহিকা অঞ্চল বৃষ্টির পানির দ্বারা গভীরভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। খুলনার কাছাকাছি অবস্থিত বিলসমূহে বন্যার পানি ঈষৎ লবণাক্ত হয়ে থাকে। এই ভূ-প্রাকৃতিক এককে ভূ-অবনমন প্রক্রিয়া এখনও সক্রিয়।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমি  সমুদ্র উপকূল বরাবর চট্টগ্রাম জেলার সংকীর্ণ স্থান জুড়ে অবস্থিত একটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল। উত্তরে ফেনী নদী থেকে শুরু করে দক্ষিণে মাতামুহুরী নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত এ সমভূমি ১২১ কিমি দীর্ঘ। গড় প্রস্থ ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত, তবে কর্ণফুলি নদীর মোহনায় প্রায় ২৬ কিলোমিটার। এই ভূ-প্রাকৃতিক এককটির আয়তন প্রায় ৩,০২৭ বর্গ কিলোমিটার। পার্বত্য এলাকার কাছাকাছি এই ভূমি সুষম ঢালবিশিষ্ট পাদদেশীয় সমভূমি গঠন করেছে। ফেনী, কর্ণফুলী, হালদা এবং অন্যান্য নদীর গতিপথ বরাবর গঠিত হয়েছে নদীগঠিত প্লাবনভূমি; নদীগুলোর নিম্ন প্রবাহ বরাবর গঠিত হয়েছে জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমি; উত্তরাংশে গঠিত হয়েছে নবীন মোহনাজ ক্ষুদ্র প্লাবনভূমি ও সংলগ্ন উপ-একক নবীন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি; এবং দক্ষিণে সাগর উপকূল বরাবর গঠিত হয়েছে বালুকাময় উপকূলীয় শৈলশিরাভূমি। পার্বত্য এলাকার কাছাকাছি পললের বৈশিষ্ট্য প্রধানত পলিকণাময় ও স্থানীয়ভাবে বালুসমৃদ্ধ এবং প্লাবনভূমি অববাহিকাসমূহে অধিকতর বিস্তৃত কর্দমবিশিষ্ট। সমগ্র মূল ভূখন্ড আকস্মিক বন্যার শিকার। বন্যার মাত্রা প্রধানত অগভীর এবং বন্যার গভীরতা জোয়ারভাটার সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামা করে। তবে উপকূলীয় বাঁধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং নদীর কারণে যেসকল এলাকায় জোয়ারভাটা বাধাগ্রস্ত হয় সেসকল এলাকায় বন্যা জোয়ারভাটার প্রভাবমুক্ত থাকে। জোয়ারভাটার দৈনিক গড় ব্যবধান প্রায় ২ মিটার। শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারভাটা এবং মোহনাজ প্লাবনভূমির মৃত্তিকা লবণাক্ত হয়ে পড়ে।

উত্তর ও পূর্বের পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি  উত্তর এবং পূর্বের পাহাড়সমূহের পাদদেশীয় সীমানা ঘেঁষে ঢালু প্রকৃতির এই পাদদেশীয় সমভূমি অবস্থিত। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়সমূহের পাদদেশ সংলগ্ন একই প্রকার ভূমিকে চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পলিজ পাখাগঠিত এই সমভূমি পাহাড়ের কাছাকাছি এলাকায় প্রধানত পলিকণা অথবা বালুকাময় অবক্ষেপ দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। আশপাশের প্লাবনভূমির নিকটবর্তী অববাহিকাসমূহে কাদার প্রাধান্য রয়েছে। সমগ্র এলাকা বর্ষা ঋতুতে আকস্মিক বন্যার শিকার হয়ে থাকে। উচ্চতর অংশে সংঘটিত বন্যা প্রধানত অগভীর এবং থেকে থেকে সংঘটিত হয়, তবে অববাহিকা এলাকায় বন্যার মাত্রা পরিমিত গভীর থেকে গভীরতর হয়ে থাকে। এই ভূ-প্রকৃতির আওতায় রয়েছে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা, সিলেট অঞ্চলের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, মাধবপুর, হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ এবং কুলাউড়া। ভূ-প্রাকৃতিক এককটির আয়তন প্রায় ৪,০৬৬ বর্গ কিলোমিটার।

প্লাইসটোসিন কালের চত্বরসমূহ  পূর্বে কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড় এবং সংলগ্ন টিলাসমূহ থেকে শুরু করে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত প্রসারিত। মেঘনা এবং যমুনা নদীপ্রণালী প্লাইসটোসিন চত্বরসমূহকে ত্রিধারায় বিভক্ত করায় তিনটি উত্থিত অংশের সৃষ্টি হয়েছে, যারা মসৃণ আন্দোলিত ভূ-প্রকৃতি প্রদর্শন করছে। উত্থিত অংশ তিনটি হচ্ছে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যথাক্রমে বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর গড় এবং তিপারা পৃষ্ঠ। পশ্চিমাংশে গঙ্গা এবং যমুনার দুই শাখানদী বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী প্লাইসটোসিন কালের চত্বরসমূহের দক্ষিণ সীমা রচনা করেছে। রাজশাহী বিভাগের উত্তর প্রান্তে প্লাইসটোসিন চত্বরের বরেন্দ্র অংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় সমভূমির সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে এবং ময়মনসিংহ জেলায় ক্রমশ পলিগঠিত সমভূমির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। বাংলাদেশের মোট প্রায় ১১,৪০১ বর্গ কিলোমিটার ভূভাগ জুড়ে প্লাইসটোসিন চত্বরসমূহ বিস্তৃত, যাদের গড় উত্থান গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ মিটারেরও অধিক।

বরেন্দ্রভূমি  গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের মধ্যবর্তী অবস্থানে রাজশাহী বিভাগের মধ্য এবং লোয়ার পশ্চিমাংশ জুড়ে এই ভূ-প্রাকৃতিক উপ-এককটি বিস্তৃত (৭,৩৮৭ বর্গ কিমি)। এটি পূর্বে করতোয়া এবং পশ্চিমে মহানন্দা নদী দ্বারা বেষ্টিত। পুনর্ভবা, আত্রাই ও ছোট যমুনা বরেন্দ্রভূমিকে প্রধান চারটি অংশে বিভক্ত করেছে। মহানন্দা-পুনর্ভবার মধ্যবর্তী অংশটি ব্যতীত অবশিষ্ট তিনটি অংশই বাংলাদেশের অন্তর্গত। বঙ্গীয় অববাহিকায় প্লাইসটোসিন কালে উত্থিত সোপানসমূহের মধ্যে বরেন্দ্রভূমি বৃহত্তম। এর দক্ষিণাংশের অপেক্ষাকৃত পুরাতন চত্বরভাগটি সমতল মালভূমি সদৃশ এবং অন্যত্র সামান্য পরিমাণে তরঙ্গায়িত ভূ-পৃষ্ঠ বিশিষ্ট। স্থানীয় ভাষায় তরঙ্গায়িত এলাকার উঁচু অংশ ‘ডাইং’ এবং নিচু অংশ ‘কান্দর’ নামে পরিচিত। কান্দর অংশের জমিগুলি সর্বাপেক্ষা উর্বর। এই চত্বরভূমি লালচে ও হলুদাভ এবং আংশিক ছোপ ছোপ কর্দম দ্বারা গঠিত। বরেন্দ্রভূমির নিষ্কাশন প্রণালী পল্লবিত বা প্রশাখী নদীমালার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। খাড়ি নামে পরিচিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতধারাগুলোর খাত গভীর এবং সর্পিল। সাধারণ প্লাবনভূমির তুলনায় অত্যধিক উঁচু (সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে প্রায় ৪৫ মি উঁচু) বলে এই ভূমি বার্ষিক প্লাবনের আওতামুক্ত থাকে। বরেন্দ্রভূমিকে উত্তর-পূর্বে বেষ্টন করে করতোয়া নদী বরাবর ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যুতি বিদ্যমান। এই চ্যুতি করতোয়া নদীর গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। অন্যান্য ক্ষুদ্র স্রোতধারাগুলি বরেন্দ্রভূমির পূর্বাংশকে বিধৌত করে দক্ষিণ-পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীতে পতিত হচ্ছে। বরেন্দ্রভূমির দক্ষিণ-পূর্বের অবভূমিকে ভর অববাহিকা নামে আখ্যায়িত করা হয়। রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভর অববাহিকা গঠিত এবং এর কেন্দ্রভাগের বিশাল জলমগ্ন এলাকা চলন বিল নামে সুপরিচিত।

মধুপুর গড়  বাংলাদেশের কেন্দ্রভাগে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অবস্থানে বৃহত্তর ঢাকা এবং ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লাইসটোসিন চত্বর অবস্থিত। দক্ষিণে ভূ-প্রাকৃতিক এই উপ-এককটি রাজধানী ঢাকার প্রান্তভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গড়ের আয়তন প্রায় ৩,৯৮৭ বর্গ কিমি। প্রধানত লাল বর্ণের এবং চিত্রবিচিত্র কাদামাটি দিয়ে মধুপুর গড় গঠিত। লাল রঙের মাটি দিয়ে গঠিত মালভূমি সদৃশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিলার (স্থানীয় ভাষায় যাদেরকে ‘চালা’ বা ‘চালা জমি’ নামে আখ্যায়িত করা হয় এবং উচ্চতা ৯ থেকে ১৮.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে) সমন্বয়ে এই গড় গঠিত। টিলাগুলি পাকে পাকে জড়ানো স্রোতধারা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। স্রোতধারাগুলির অববাহিকাসমূহ বেশিরভাগই সমতল এবং এগুলিতে সাম্প্রতিক কালের কালো রঙের পলল বিদ্যমান। স্থানীয় ভাষায় এদেরকে ‘বাইদ’ বলা হয়। বাইদগুলি মধুপুর গড়ের সর্বাপেক্ষা উর্বর এলাকা এবং এগুলিতে ধান চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য প্লাইসটোসিন চত্বরের মতো মধুপুর গড়ের নিষ্কাশন প্রণালীও প্রশাখী বা বৃক্ষসদৃশ। গড়ের উত্তর প্রান্তরকে বেষ্টন করে বানার নদী গড়ের পূর্বাংশ বরাবর প্রবাহিত হয়ে পরে দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মধুপুর বনভূমিতে প্রচুর শাল গাছ (Shorea robusta) জন্মে থাকে। মানের দিক থেকে সেগুন কাঠের পরেই শালের স্থান।

তিপারা পৃষ্ঠ  পশ্চিমে মেঘনা প্লাবনভূমি এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড় দ্বারা আবদ্ধ এই ভূ-প্রাকৃতিক উপ-এককটি। এই উপ-একক এলাকাটি সাম্প্রতিক সময়কালের প্রথমার্ধে উত্থিত হয়েছে বলে ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা। এই ভূ-প্রাকৃতিক একক পূর্বদিকে লালমাই প্লাইসটোসিন চত্বরভূমি এবং প্লাইসটোসিন উত্তরকালে গঠিত বদ্বীপীয় সমভূমি নিয়ে গঠিত। এই বদ্বীপীয় সমভূমি সাম্প্রতিক সময়কালের প্রথমার্ধের মোহনাজাত পলল দ্বারা গঠিত। তিপারা পৃষ্ঠের আয়তাকার নিষ্কাশন প্রণালী সেচকার্যের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। পশ্চিম প্রান্তে এই ভূ-পৃষ্ঠ ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে মেঘনা প্লাবনভূমির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ত্রিপুরা পাহাড়সমূহের পশ্চিম ঢালে অবস্থিত লালমাই চত্বর লাল বর্ণের চিত্রবিচিত্র প্লাইসটোসিন মধুপুর কর্দম দ্বারা গঠিত। বরেন্দ্রভূমি এবং মধুপুর গড়ের মতো লালমাই চত্বরও প্লাইসটোসিন চত্বরসমূহের আদর্শ বৃক্ষসদৃশ নিষ্কাশন প্রণালী প্রদর্শন করে। লালমাই পাহাড়সমূহ ব্যতীত লালমাই চত্বরের ভূ-পৃষ্ঠ কিছুটা তরঙ্গায়িত এবং গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উত্থান ৬ থেকে ৫০ মিটার। হলোসিন ভূতাত্ত্বিক যুগে (১ লক্ষ বৎসর পূর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) এই ভূমির উত্থান ঘটেছে।

উত্তর ও পূর্বাংশের পাহাড়সমূহ  বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাসমূহ দুটি প্রধান ধরনের ভূ-প্রকৃতি নিয়ে গঠিত (ক) স্বল্প উচ্চতার পাহাড়সমূহ (ডুপি টিলা ও ডিহিং স্তরসমষ্টি) এবং (খ) অধিক উচ্চতার পাহাড়সমূহ (সুরমা এবং টিপাম স্তরসমষ্টি):

স্বল্প উচ্চতার পাহাড়সমূহ  উঁচু পাহাড়সমূহের মধ্যবর্তী স্থানে এবং বহির্ভাগ জুড়ে অবস্থিত। এই পাহাড়সমূহ প্রধানত অসংহত বেলেপাথর এবং কর্দমশিলার উপর গঠিত। এসকল পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা সাধারণত সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০ মিটারের কম। বেশিরভাগ এলাকাই সংক্ষিপ্ত খাড়া ঢাল দ্বারা বিচ্ছিন্ন, কিন্তু কিছু কিছু এলাকা খাড়া থেকে ক্রমশ ঢালু হয়ে সমতল ভূ-প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়েছে (সিলেট অঞ্চলের উৎকৃষ্ট চা-উৎপাদনকারী এলাকাসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত)। সিলেট অঞ্চলের উত্তরাংশে চারটি প্রধান টিলাসারি এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ছয়টি পাহাড়সারি সিলেট জেলার দক্ষিণভাগে অভিক্ষিপ্ত হয়েছে। দক্ষিণ দিক থেকে সমভূমিতে অভিক্ষিপ্ত পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত পাহাড়সারিসমূহ হচ্ছে: পাথারিয়া, হারারগঞ্জ, রাজকান্দি-ইটা, ভানুগাছ, তারাপ এবং রঘুনন্দন।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বল্প উচ্চতার পাহাড়সমূহের মধ্যে রয়েছে সীতাকুন্ড ও মারা তং পাহাড়সারি এবং দক্ষিণ ও মধ্য রামগড় সহ ফেনী নদী উপত্যকার পূর্বাংশে অবস্থিত যৌগিক পাহাড়সারি। সীতাকুন্ড পাহাড়সারি মধ্যভাগে ৩২ কিমি দীর্ঘ এবং সীতাকুন্ড চূড়ার উচ্চতা ৩৫২ মিটার। উত্তরে এই পাহাড়সারির উঁচু চূড়াসমূহ হচ্ছে রাজবাড়ী টিলা (২৭৪ মিটার) এবং সাজিধলা (২৪৪ মিটার)। দ©র্ক্ষণে এই পাহাড়সারি হঠাৎ নিচু হয়ে গেছে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৯২ মিটারেরও কম উচ্চতায় এসে ঠেকেছে। মারা তং পাহাড়সারির সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র ১১৩ মিটার। আরও উত্তর-পূর্বে পাহাড়সমূহের উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। এই ভূ-প্রকৃতি গভীরভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পাহাড়সমূহ গোলাকৃতি লাভ করেছে। উপত্যকাসমূহ তরঙ্গায়িত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একক ও বিচ্ছিন্ন টিলার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। কর্ণফুলি নদী এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ শীর্ষবিন্দুর মধ্যে পাঁচটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়সারি বিদ্যমান রয়েছে। বাকখালি নদীর দক্ষিণে কক্সবাজারে এই পাহাড়সমূহ সাগরে গিয়ে মিশেছে। অতঃপর টেকনাফ উপদ্বীপে টেকনাফ পাহাড়সারি প্রধান পাহাড়সারির অংশ হিসেবে শেষ হয়েছে। পশ্চিমে রেজুখাল উপত্যকা বরাবর সামান্য একটি বিরতি রয়েছে। টেকনাফ পাহাড়সারির উত্তরাংশ তুলনামূলকভাবে স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট (৬১ থেকে ৯১ মিটার)। হোয়াইকং থেকে একটি উঁচু শৈলশিরা দক্ষিণ বরাবর চলে গিয়েছে, যার প্রধান চূড়াসমূহ হচ্ছে বাড়াগং (১১৯ মিটার), টাউনগঙ্গা (২৬৮ মিটার) এবং নাইতং (১৬৮ মিটার)। এই সারির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত নোয়াখালী নামক একটি গ্রামে এসে শেষ হয়েছে, যেখানে একটি ধারাবাহিক দৃষ্টিনন্দন খাড়াপাড়ের (cliffs) সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটির উচ্চতা ৩০ মিটার পর্যন্ত। টেকনাফ বাজারের কাছে এসে এই পাহাড়সারি শেষ হয়েছে। টেকনাফ উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত গর্জনিয়ার দক্ষিণে এই পাহাড়সমূহ মায়ানমারে প্রবিষ্ট হয়েছে। রেজুখাল উপত্যকা এই ভগ্ন ভূ-প্রকৃতির একটি অন্যতম অঙ্গ। সব মিলিয়ে প্রায় ৮,০৮৪ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে এই উপ-এককটি বিস্তৃত।

অধিক উচ্চতার পাহাড়সমুহ  উত্তর-দক্ষিণে প্রায় সমান্তরালভাবে বিস্তৃত পর্বতমালা। এই গিরিশ্রেণীর চূড়াসমূহের উচ্চতা ৩০০ থেকে ১,০০০ মিটার পর্যন্ত। পর্বতসমূহ অত্যধিক খাড়া ঢালবিশিষ্ট এবং সাধারণত ৪০%-এর উপর কিংবা প্রায়ই ১০০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। অত্যধিক ঢালের কারণে এখানে প্রায়ই ভূমিধস সংঘটিত হয়। এসকল পর্বতে অভ্যন্তরভাগে সুদৃঢ় কর্দমশিলা, পলিপাথর এবং বেলেপাথরের উপস্থিতি রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ, হবিগঞ্জের দক্ষিণভাগের কিছু অংশ এবং মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্ত জুড়ে এই পর্বতমালা বিস্তৃত। উপ-এককটির মোট আয়তন প্রায় ১০,৩২৪ বর্গ কিমি। পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্বতমালাসমূহ অনেকটা অর্ধবৃত্তাকারে সাজানো। পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে খাড়াভাবে ক্রমবর্ধমান উচ্চতাবিশিষ্ট এই পর্বতমালাসমূহ সুদীর্ঘ অপ্রশস্ত শৈলশিরা হিসেবে সম্প্রসারিত এবং এগুলোর শিখরদেশ বড়জোড় ৩০ মিটার প্রশস্ত। অধিকাংশ পর্বতমালারই খাড়া ঢাল এবং ছোট ছোট জলপ্রপাত রয়েছে। এসকল খাড়া ঢাল অসংখ্য জলবিভাজিকা গঠন করে জালিকা সদৃশ নিষ্কাশন প্রণালী গড়ে তুলেছে। পশ্চিমের গোলাকৃতি নিচু পর্বত পাদদেশ থেকে এই নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভিন্ন ধরনের। পর্বতসারিগুলোর মধ্যভাগে রয়েছে বিস্তৃত নিচু পাহাড় ও টিলার উপস্থিতি। এই অঞ্চলের উত্তরভাগে উত্তর-দক্ষিণাভিমুখী ৩০০ মিটারের অধিক উচ্চতার চারটি পর্বতসারি বিদ্যমান। সর্বপশ্চিমে রয়েছে ফরমানি পর্বতসারি, যার উচ্চতা ফরমানিতে ৪৬৩ মিটার, রামপাহাড়ে ৪৩৬ মি এবং ভাঙামুড়াতে ৪১৭ মি। পূর্বে রয়েছে দোলাজেরী পর্বতসারি, যার সর্বোচ্চ চূড়া লংত্রাই ৪২৯ মি উঁচু। এই পর্বতসারির পূর্বদিকে কয়েকটি জলপ্রপাত রয়েছে, যাদের মধ্যে একটি ৬০ মিটার এবং আরেকটি ৪০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট। আরও পূর্বে মাইনি উপত্যকা অতিক্রম করে রয়েছে ভুয়াছড়ি পর্বতসারি, যার চাংপাই চূড়ার উচ্চতা ৬১১ মিটার। সর্বপূর্বে বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে রয়েছে বরকল পর্বতসারি। উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত এই পর্বতসারির কয়েকটি উঁচু চূড়া হচ্ছে খানতলাং (৬৮৩ মি), থাংনাং (৭৩৫ মি), লুং টিয়ান (৬৭৯ মি), চিপুই (৪৮০ মি), বড় তোউং (৪৪৭ মি) এবং বরকল (৫৭২ মি)।

কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাতটি প্রধান পর্বতমালা বিদ্যমান। হারবাং-এর ৫ কিলোমিটার পূর্বে চুনোটি পাহাড়সারির পর থেকে মুরাঞ্জা পর্বতমালা উত্থিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অভিমুখে অগ্রসর হয়েছে। এই পর্বতমালার উল্লেখযোগ্য চূড়াসমূহ হচ্ছে মুরাঞ্জা (৫০২ মি), নাশপো তং (৫৮৬ মি) এবং বাসিতং (৬৬৪ মি)। মুরাঞ্জা পর্বতমালার পূর্বদিকে এর সঙ্গে প্রায় সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয়েছে তিয়ানবাং, বাটিমাইন এবং পোলিতালি পর্বতসারি। তিয়ানবাং অথবা চিম্বুক পর্বতমালা সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে উত্থিত হয়ে মায়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এর প্রধান শৃঙ্গগুলো হচ্ছে লুলাইং (৭২০ মি), থ্যংক্ষিয়াং (৮৯৪ মি), ক্রো (৮৬৮ মি), রুংরাং (৮৪৯ মি) এবং তিন্দু (৮৯৮ মি)। লুলাইং পর্বতশৃঙ্গের সন্নিকটে লুলাইংখালের একটি শাখায় প্রায় ১০৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট একটি জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। তজিং ডং (৪২০০ মিটার) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যার অপর নাম ‘বিজয়’। অন্যান্য উঁচু পর্বতশৃঙ্গসমূহ হচ্ছে ওয়াইবুং (৮০৮ মি), রেং তলাং (৯৫৮ মি), মোদোক তলাং (৯০৫ মি), মোদোক মুয়াল (১,০০৩.৪ মি) এবং কেওক্রাডং (১২৩২.৩ মি)। মোদোক মুয়াল দক্ষিণ-পূর্বদিকে মায়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। [মাসুদ হাসান চৌধুরী]

আরও দেখুন পার্বত্য চট্টগ্রাম

গ্রন্থপঞ্জি  FH Khan, Geology of Bangladesh, University Press Limited, Dhaka, 1991; Haroun Er Rashid, Geography of Bangladesh, University Press Limited, Dhaka, 1991; Klaus-Ulrich Reimann, Geology of Bangladesh, Gebrüder Borntraeger, Berlin-Stuttgart, 1993; Hugh Brammer, The Geography of the Soils of Bangladesh, University Press Limited, Dhaka, 1996।