বেড়া উপজেলা

বেড়া উপজেলা (পাবনা জেলা)  আয়তন: ২৪৩.৪৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৮´ থেকে ২৪°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৫´ থেকে ৮৯°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শাহজাদপুর ও চৌহালি উপজেলা, দক্ষিণে গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা, পূর্বে চৌহালি, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা, পশ্চিমে সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫৬৭৯৩; পুরুষ ১২৮৩৯৭, মহিলা ১২৮৩৯৬। মুসলিম ২৪৬৪৬৩, হিন্দু ১০৩২০, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ৬।

জলাশয় পদ্মা, যমুনা, ইছামতি ও হুরসাগর প্রধান নদী এবং ধলাই বিল, ইছার বিল ও নন্দীয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মথুরা থানা গঠিত হয় ১৮২৮ সালে। থানা কার্যালয়টি যমুনা নদীর ভাঙনকবলিত হলে তা বেড়া নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয় ১৯২৭ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩০ ১৬২ ৫০০৬৮ ২০৬৭২৫ ১০৫৫ ৫২.২ ৩৮.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লার সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.৪২ ২৬ ৫০০৬৮ ৩০৪৯ ৫২.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কৈতলা ৪৭ ২৩৩৩ ৬৭৯৮ ৭০৭৩ ৪২.০
চাকলা ১৫ ৩৬৩৮ ৭৭১৯ ৭৩৫২ ৪০.১
জাতসাখনি ৪২ ৮৫৭৯ ২৬৪৭৩ ২৬০৯০ ৪৬.২
ধলার চর ২১ ৯৪০৬ ৯২০৯ ৮৬৪৫ ১৪.৯
নতুন ভারেঙ্গা ৬৩ ৩২৫৪ ৯৯১০ ১০৩৪৮ ৩৬.২
পুরান ভারেঙ্গা ৭৩ ৬৫৩১ ৬১২৫ ৬০৮১ ৩৪.৬
মাসুন্দিয়া ৫২ ৭১৩১ ১১৩২৫ ১১২২৪ ৪০.৩
রূপপুর ৮৪ ৭৩৫৪ ৯১৫২ ৯০৭৩ ৪১.০
হাটুরিয়া-নাকালিয়া ৩১ ৭৪১২ ১৬৫৬৮ ১৭৫৬০ ৩৬.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধারা নগরবাড়ি ফেরিঘাটে পাকসেনাদের প্রতিরোধ করে। ৯ এপ্রিল নগরবাড়ি ফেরিঘাটে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভাঙ্গার জন্য বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করলে কিছু সংখ্যক নিরীহ লোক নিহত হয়। ১৯ এপ্রিল বেড়া-সাঁথিয়ার সংযোগস্থল পাইকরহাটিতে নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কের উপর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং প্রায় ১৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে নকশালরা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে ৫৭ টি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়। ১৪ ডিসেম্বর বেড়া পাকসেনা মুক্ত হয়। উপজেলার চরপাড়া ও দয়ালনগরে বধ্যভূমি এবং দয়ালনগরে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; পাইকর হাটে ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে

বিস্তারিত দেখুন বেড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৫৫, মন্দির ৪৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: দরগাবাড়ি মসজিদ, বেড়া বাজার জামে মসজিদ এবং বুড়োমাতা মন্দির, হরিবাড়ি মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.২%; পুরুষ ৪৪.২%, মহিলা ৩৮.৩%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩, কিন্ডার গার্টেন ১৫, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বেড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৪), ভারেঙ্গা একাডেমী (১৮৫৮), বেড়া বি বি হাইস্কুল (১৮৯৯), বেড়া হাইস্কুল (১৯০৬), ধোবাখোলা করোনেশন হাইস্কুল (নটিয়াবাড়ী, ১৯১২), নাকালিয়া সাঁড়াশিয়া বনিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), ভোকেশনাল বি বি স্কুল, ভোকেশনাল বেড়া পাইলট গার্লসস্কুল, বেড়া আলিম মাদ্রাসা (১৯৩৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক ‘এ যুগের দীপ’ অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২৬, লাইব্রেরি ৩, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ২, অডিটোরিয়াম ৩, খেলার মাঠ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪০.০৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৯৪%, শিল্প ৭.৯২%, ব্যবসা ২১.৮০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৯২%, চাকরি ৫.৭৭%, নির্মাণ ১.০৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৮% এবং অন্যান্য ১৩.৮১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.৬০%, ভূমিহীন ৫৫.৪০%। শহরে ২৮.৫২% এবং গ্রামে ৪৮.৪২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, ডাল, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, ভুরা, কাউন, পাট, চীনা, তুলা, মিষ্টি আলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, পেয়ারা, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৫৬ কিমি; নৌপথ ২৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি, গরু ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, বরফকল, ওয়েল্ডিং  কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ৩। বেড়া হাট ও বাজার, বাঁধের হাট, চতুর হাট,খানপুরা বাজার এবং খানপুরা বাজারের মহাকাল ভৈরবীর মেলা ও রাখসা বাজারের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  লুঙ্গি, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি, আখের গুড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭০.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬%, ট্যাপ ২.২% এবং অন্যান্য ১.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৫.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, দাতব্য চিকিৎসালয় ১, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালের বন্যায় এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দী হয় এবং ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [আবদুস সাত্তার]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বেড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।