বেঙ্গল স্পেক্টেটর
বেঙ্গল স্পেক্টেটর একটি মাসিক পত্রিকা। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রামগোপাল ঘোষ। তিনি প্যারীচাঁদ মিত্র এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকাটি ১৮৪২ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে স্বল্প সময়ের জন্য দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় এর সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হন। এ পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল শিক্ষার উন্নয়ন সাধন করা এবং ‘সরকারের নিকট স্থানীয় অধিবাসীদের অভাব ও দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরা, এবং তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকারী তা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা’।
বিধবা মহিলাদের পুনর্বিবাহের সপক্ষে বক্তব্য প্রদান ছিল বেঙ্গল স্পেক্টেটরের পরিবেশিত সংবাদসমূহের মধ্যে অন্যতম। এ পত্রিকা অভিমত ব্যক্ত করে যে, মহিলারা পুনর্বার বিবাহ করতে পারবে যদি তাদের স্বামী তাদের কথা না শোনে, তারা যদি মৃত হয় কিংবা সন্ন্যাসবরণ করে অথবা খোঁজা বলে প্রমাণিত হয় কিংবা সত্যিকার অর্থে জাতিচ্যুত হয়। পত্রিকাটি বিধবা নারীদের বিশুদ্ধ নিরামিষ খাদ্যাভাস পরিবর্তন করে তাদের শারীরিক শক্তি ও জীবনীশক্তি বৃদ্ধির জন্য মাছ ও মাংস খাওয়ার পক্ষে বক্তব্য প্রদান করে।
পত্রিকায় বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপকৃত অন্যান্য দাবিগুলির মধ্যে ছিল ভূমিসংস্কার আইনের প্রবর্তনসহ প্রশাসনিক ক্রমাধিকারের উচ্চস্তরে স্থানীয়দের অন্তর্ভুক্তি। বাস্তবিকপক্ষে এটি বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটি এর মুখপত্র হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ সোসাইটিও একই ধরনের সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছিল।
স্পেক্টেটর সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, পক্ষপাতিত্বমূলক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রিটিশ প্রশাসকদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন একচেটিয়া প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এবং এরূপ ক্ষতিকারক প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতাই দেশকে নিঃস্ব করার অন্যতম একটি কারণ। তাই পত্রিকাটি কোর্ট অব ডাইরেক্টর্সকে সম্পূর্ণরূপে এ পদ্ধতির পুনর্গঠনে এবং দেশীয়দের এ পদ প্রাপ্তির বাধাসমূহ তুলে নেওয়ার আহবান জানায়।
বেঙ্গল স্পেক্টেটর বাংলার বিদ্যমান ভূমি আইনের সমালোচনা করে। বিদ্যমান আইনের কারণে ভূমিমালিক এবং রায়তদের মধ্যে চিরশত্রুতা বিরাজমান। এ অবস্থা কৃষির উন্নতিকে দারুণভাবে ব্যাহত করে।
ক্রমাগত অর্থনেতিক দুরবস্থার কারণে পত্রিকাটি ১৮৪৩ সালের ২০ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। বাংলার শিক্ষিত ও সংস্কারমুক্ত যুবকগণ, যাদের ওপরই বেঙ্গল স্পেক্টেটরের সমর্থন ও সাফল্যের আশা ছিল, তারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পত্রিকাটির নিয়মিত প্রকাশনায় আর্থিকভাবে এবং সম্পাদকীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন অবদান রাখতে পারেন নি। [অভিজিৎ দত্ত]