বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২৪৮.৬৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০১´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১২´ থেকে ৯১°২৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে সুনামগঞ্জ সদর ও জামালগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৫৬৩৮১; পুরুষ ৭৮১৭৫, মহিলা ৭৮২০৬। মুসলিম ১৩৮৫৯৭, হিন্দু ১৭৬৭৮, খ্রিস্টান ৫৮, বৌদ্ধ ১ এবং অন্যান্য ৪৭। এ উপজেলায় হাজং, গারো ও মনিপুরি প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: ধামালিয়া ও যদুকাটা। কাছাড়িয়া হাওড়, জমিরতলা বিল, আঙ্গারুলি বিল ও  কানু বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৯৭৯ সালে বিশ্বম্ভরপুর থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৬১ ১৮৪ ৩১৫৬ ১৫৩২২৫ ৬২৯ ৫২.৯ ৩৪.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৭৩ ৩১৫৬ ২৯৪ ৫২.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
দক্ষিণ বাদাঘাট ১৭ ৯৫৮৬ ১২৪৩৫ ১২৫৬৫ ২৯.৫
ধনপুর ২০ ১৪৩৭২ ১৮৪০৮ ১৮৯৬৮ ৩৯.৬
পলাশ ৭৭ ১১০১৪ ১৪৪০৭ ১৪৪৮৬ ৪০.৯
ফতেহপুর ৩৪ ১০৭৯৩ ১৩৮৭৭ ১৩৮৬০ ৩৩.৫
শলুকাবাদ ৮০ ১৫৬৭৫ ১৯০৪৮ ১৮৩২৭ ২৮.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার গৌরাবং, টিলাউড়া, বইসের পাড়, উবারখান্দা ও ভাটেরটেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। উপজেলার রাজপাড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২০৩, মন্দির ৬১, গির্জা ১, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পলাশ জামে মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.৬%; পুরুষ ৩৫.৪%, মহিলা ৩৩.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দিগেন্দ্রবর্মন কলেজ (১৯৯২), সাতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), ফতেহপুর মুরারী চাঁদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), পলাশ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), বিশ্বম্ভরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৮), কাটাখালী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), বিশ্বম্ভরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৮)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.১১%, অকৃষি শ্রমিক ৬.২৩%, শিল্প ০.৩১%, ব্যবসা ৮.৩২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৯৩%, চাকরি ২.১৫%, নির্মাণ ০.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩০% এবং অন্যান্য ৯.০০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫২.৪৬%, ভূমিহীন ৪৭.৫৪%। শহরে ৫৭.৫২% এবং গ্রামে ৫২.৩৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, কাউন, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৮, কাঁচারাস্তা ১৭০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ২। বিশ্বম্ভরপুর বাজার, চিনাকান্দি বাজার, ধনপুর বাজার, বাগবেড় বাজার, স্বরূপগঞ্জ বাজার, কাটাখালী বাজার, বাদামঘাট বাজার  উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, মাছ, চুনাপাথর।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২১.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ  মাছ, বালু ও চুনাপাথর।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৫.০%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১৪.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২২.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬২.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প এবং ২০০৪ সালের সুনামিতে অনেক লোক প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।