বিলাইছড়ি উপজেলা

বিলাইছড়ি উপজেলা (রাঙ্গামাটি জেলা)  আয়তন: ৭৪৫.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৫৪´ থেকে ২২°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৭´ থেকে ৯২°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে জুরাছড়ি এবং রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, দক্ষিণে রুমা এবং থানচি উপজেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং মায়ানমারের চিন প্রদেশ, পশ্চিমে কাপ্তাই, রাজস্থলী এবং রোয়াংছড়ি উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮৫২৫; পুরুষ ১৫১৭৪, মহিলা ১৩৩৫১। মুসলিম ৩০৭৪, হিন্দু ৪৬৭, বৌদ্ধ ২২০৯৫, খ্রিস্টান ২৭৯৬ এবং অন্যান্য ৯৩। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, বম, মোরং, পাঙ্খো, চাক, রিয়াংখুমি, ম্রো প্রভৃতি আদিবাসী  জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: রাইনখিয়াং।

প্রশাসন বিলাইছড়ি থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫৯ ২৪৫৮ ২৬০৬৭ ৩৮ ৬৬.৭ ২৯.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৩৬ ২৪৫৮ ২৩৭ ৬৬.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কেংড়াছড়ি ৭১ ২৫৬০০ ২৯৪৫ ২৮৩২ ৪৩.১
ফারুয়া ৪৭ ১৩৭৬০০ ৭৪৪৬ ৬৭২৯ ১৭.১
বিলাইছড়ি ২৩ ২১১২০ ৪৭৮৩ ৩৭৯০ ৫০.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা এ উপজেলায় এক সময় প্রায়ই উপজাতীয় বিদ্রোহ দেখা দিত।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের পরাজয়ের পর প্রায় দুহাজার পাহাড়ি রাজাকার বিদ্রোহী মিজোদের সঙ্গে যোগ দেয়। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং শান্তিবাহিনীর গোড়াপত্তন করেন। শান্তিবাহিনী দমনের জন্য সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ফারুয়া থানা। পরে শান্তিবাহিনী ও জনসংহতি সমিতি তাদের মূল ঘাটি ত্রিপুরায় স্থানান্তর করে। ফলে ফারুয়া থানার গুরুত্ব কমে যায় এবং থানাটি বিলাইছড়ির অন্তর্ভূক্ত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শান্তি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার লোক নিহত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বিলাইছড়ি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৬, মন্দির ২, বৌদ্ধ মন্দির ৩৩, গীর্জা ৫, মাদ্রাসা ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩২.৮%; পুরুষ ৪১.৬%, মহিলা ২২.৫%। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২, মাদ্রাসা ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.৭৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯২%, ব্যবসা ৯.২৯%, চাকরি ৫.৮২%, নির্মাণ ০.৪৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৭.৩২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.০২%, ভূমিহীন ৪৩.৯৮%। শহরে ২৮.৩০% এবং গ্রামে ৫৮.৭৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাহাড়ি আলু, তুলা, আদা, বাঁশ।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, কলা, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯.৬১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৫৭.৫৯ কিমি (আদমশুমারি ২০০১)।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা বিলাইছড়ি সদর বাজার, ফারুয়া বাজার, কেংড়াছড়ি বাজার।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   কলা, তুলা, আদা, কাঁঠাল এবং কাঠ, বাঁশ ও বেত শিল্পজাত দ্রব্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ২৪.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ২৮.৪%, ট্যাপ ১.৬% এবং অন্যান্য ৭০.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৮.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪২.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৮.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১।  [আতিকুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বিলাইছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।