বিরল উপজেলা

বিরল উপজেলা (দিনাজপুর জেলা)  আয়তন: ৩৫৩.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩১´ থেকে ২৫°৪৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৬´ থেকে ৮৮°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বোচাগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলা, দক্ষিণে দিনাজপুর সদর উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে দিনাজপুর সদর উপজেলা ও পুনর্ভবা নদী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বোচাগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫৭৯২৫; পুরুষ ১৩০১৬০, মহিলা ১২৭৭৬৫। মুসলিম ১৮৮৯০৯, হিন্দু ৬৪৪৫৩, বৌদ্ধ ৭৭, খ্রিস্টান ৯৩২ এবং অন্যান্য ৩৫৫৪। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, মালো, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পুনর্ভবা ও টাংগন নদী এবং নাল বিল ও কড়াই বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বিরল থানা গঠিত হয় ১৯১৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ২৩৭ ২৩৭ ৯০৫৯ ২৪৮৮৬৬ ৭২৯ ৫৬.২ ৪৭.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.১১ ৯০৫৯ ১৪৮৩ ৫৬.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আজিমপুর ১৩ ৭৭৯১ ৯৯৪৫ ৯৯৪৪ ৪৩.৩
ধর্মপুর ৫৭ ১০৪৩২ ১২৮৮৩ ১২৩৭৮ ৩৬.৮
ধামইর ৪৭ ৮১৪৮ ১০৪১৫ ১০২২৮ ৪৭.২
ফরক্কাবাদ ৬৬ ৬৬৮৯ ১৪৯৫৯ ১৪৩৭১ ৪৭.০
বিজোড়া ৩৮ ৪৮৬১ ১৭৭৮৮ ১৭১৪১ ৫৪.৩
বিরল ২৮ ৮৫৭৫ ১৭৫৬৫ ১৭১৭১ ৪৮.৭
ভাণ্ডারা ১৯ ৯৬২৯ ১১৪২০ ১১৫৯৪ ৪৭.৭
মঙ্গলপুর ৭৬ ৭১৪০ ৯৭১২ ৯৭৮৬ ৪৫.২
রাণীপুকুর ৮৫ ৮৫৩২ ১২৮২৭ ১২৪৪৮ ৪৯.৯
শহরগ্রাম ৯৫ ৯৬০৬ ১২৬৪৬ ১২৭০৪ ৪৮.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  সেনদীঘি, মুল্লুক দেওয়ান মাযার ও দীঘি, মেহেরাবীয়া জামে মসজিদ।

ঐতিহাসিক ঘটনা এ উপজেলায় সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৬) সংঘঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী বিজোড়া ইউনিয়নের বহলায় ৩৭ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর বগুলাখারীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও উপজেলার বহবল দীঘিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ১০০ পাকসেনা নিহত হয়। উপজেলায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বিরল উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধমীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪৩৪, মন্দির ৮২, মাযার ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মেহেরাবীয়া জামে মসজিদ,  বিরল জামে মসজিদ, মুন্সিপাড়া মসজিদ, মুল্লুক দেওয়ান মাযার, সেনদীঘি কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৩%; পুরুষ ৫০.৭% এবং মহিলা ৪৩.৯%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৭, মাদ্রাসা ১৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিরল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), বিরল মহিলা কলেজ (১৯৯৪), ধুকুরঝাড়ী কলেজ (১৯৯৪), মঈনুল হাসান মহাবিদ্যালয় (১৯৯৪), বিজোড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), উত্তর বিষ্ণুপুর ভি এম এস সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বিরল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), করলা মাধবাটি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), বিরল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৭), কানাইবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, মোহনা-মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিরল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলভার জুবিলি এম সি বিদ্যালয়, দেওয়ানদীঘি দাখিল মাদ্রাসা, মঙ্গলপুর সিনিয়র মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা  বিরল বার্তা (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৭, লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ১, মহিলা সমিতি ৬, খেলার মাঠ ৮।

বিনোদন কেন্দ্র কড়াই বিল।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৪৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৬%, শিল্প ১.০৩%, ব্যবসা ১২.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮৬%, চাকরি ৪.৪৬%, নির্মাণ ১.৭৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৩% এবং অন্যান্য ৪.০০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৬১%, ভূমিহীন ৪৯.৩৯%। শহরে ৫৪.০৭%  এবং গ্রামে ৫০.৫০% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, আখ, আলু, তিল, পিঁয়াজ, তৈলবীজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, তামাক, ডাল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, জাম।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৭.৩১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১.৩৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৮৭.৩৬ কিমি; রেলপথ ৩৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, স’মিল, হাসকিংমিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৩। বহবল হাট, কাশিডাঙ্গা হাট, ধুকুরঝাড়ী হাট, নাড়াবাড়ি হাট, বিরল হাট, কালিয়াগঞ্জ হাট, কামদেবপুর হাট, চকের হাট, বোর্ডের হাট এবং ধুকুরঝাড়ী মেলা ও নাড়াবাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   লিচু, ভুট্টা, চাল, পিঁয়াজ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩০.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.২%, ট্যাপ ০.৯% এবং অন্যান্য ১.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৬.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪১.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৩, ইসলামিক মিশন হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যেগ  ১৯৬৮ সাল ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার বহু ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, প্রশিকা, দীপশিখা, সিডিএ।  [মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বিরল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।