বাহাই

বাহাই  একটি ধর্মমত। এর প্রতিষ্ঠাতা মির্জা হুসায়ন আলী (১৮১৭-১৮৯২)। তিনি বাহাউল্লা নামে পরিচিত। বাহাউল্লা ছিলেন ‘বাব’ নামে সমধিক পরিচিত সৈয়দ আলী মুহাম্মদের অনুসারী। বাব আপনাকে মেহদী বলে ঘোষণা দেন এবং দাবী করেন যে, একজন রসূল আসবেন যাঁর মাধ্যমে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করবেন। ১৮৫০ সালে বাবকে তাঁর বহু অনুসারিসহ ইরানের তাবরীয শহরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। মির্জা হুসায়ন আলী তখন নিজেকে প্রতিশ্রুত রসূল বলে ঘোষণা করেন এবং বাহাই ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। বাহাউল্লাকে বন্দি করে ফিলিস্তিনের আক্কা জেল শহরে চিরজীবনের জন্য নির্বাসিত করা হয়। বাহাউল্লা তখন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ‘আবদুল বাহাকে (১৮৪৪-১৯২১) বাহাই সম্প্রদায়ের নেতা মনোনীত করেন। বাহাইদের সদর দফতর ইসরাঈলের হাইফা শহরে। ১৯৬৩ সাল থেকে এ ধর্মের সকল বিষয় নির্বাচিত পরিষদসমূহের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের পরিষদকে বলা হয় Spiritual Assembly এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পরিষদকে বলা হয় Universal House of Justice।

বাহাইদের বিশ্বাস, মানব-সমাজে যখন সংকট দেখা দেয় তখন আল্লাহ নিজের একজন প্রতিভূ পাঠান। তারা বিশ্বাস করে যে, বাহাউল্লা ছিলেন আল্লাহর সর্বশেষ প্রতিভূ এবং তাঁর আগে যাঁরা প্রতিভূ হিসেবে এসেছিলেন তাঁরা হলেন কৃষ্ণ, বুদ্ধ, মূসা, জোরোথুস্ট্র, যিশুখ্রিস্ট, মুহাম্মাদ (স.) এবং বাব। উনিশদিন পরপর Spiritual Assembly এবং বাহাই সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সভা ও খানাপিনা হয়। সেখানে তাঁরা জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক সমস্যা সমাধানের আলাপ আলোচনা করেন। বাহাইরা সমগ্র মানব জাতির ঐক্য এবং নারীপুরুষের সমতায় বিশ্বাস করে। এদের উপাসনালয়ে সকলের প্রবেশাধিকার আছে এবং সকলে সেখানে রক্ষিত সকল ধর্মের উল্লেখযোগ্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ পড়তে পারেন। বাহাই ধর্মের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থের নাম কিতাবুল আকদস।

১৮৭৮ সালে একজন বাহাই প্রচারক কলকাতা থেকে বার্মা যাওয়ার পথে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তিনি যখন বার্মায় ছিলেন তখন চট্টগ্রামের একদল বাঙালি এ ধর্মে দীক্ষিত হয়। বাংলাদেশে বাহাই ধর্মের প্রচার শুরু হয় চট্টগ্রামে। বাংলাদেশে বাহাইদের প্রথম Spiritual Assembly (The Dhaka Assembly) গঠিত হয় ১৯৫২ সালে। ১৯৭১ সালে ঢাকার শান্তিনগরে ন্যাশনাল বাহাই সেন্টার স্থাপিত হয়। বাহাইরা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরক্ষতার বালাই নেই।  [মীর মোবাশ্বের আলী]