বারহাট্টা উপজেলা

বারহাট্টা উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)  আয়তন: ২২০.০০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫১´ থেকে ২৫°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৬´ থেকে ৯১°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কলমাকান্দা ও ধর্মপাশা উপজেলা, দক্ষিণে আটপাড়া ও মোহনগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা, পশ্চিমে নেত্রকোণা সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৮০৪৪৯; পুরুষ ৯০৫৭৬, মহিলা ৮৯৮৭৩। মুসলিম ১৬১১৭৩, হিন্দু ১৯২১৬, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ২৫ এবং অন্যান্য ৩৩।

জলাশয় কংস ও কাওনাল প্রধান নদী এবং নিমলকনা ও সাইদিঘা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বারহাট্টা থানা গঠিত হয় ১৯০৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪৭ ২৩৯ ৭৮৫০ ১৭২৫৯৯ ৮২০ ৬৭.৩ ৩৬.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.২৭ ৭৮৫০ ২৪০১ ৬৭.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আসমা ১১ ৭৩৫৩ ১০৮৩৬ ১০৭১৯ ৩২.২
ছিরাম ৪৭ ৭২২৩ ৯৪৮৪ ৯২৭৪ ৩০.৪
বাউসী ৩৫ ৭১১১ ১২৮১৯ ১৩১৪৩ ৩৭.৫
বায়পুর ৫৯ ৭৮১৪ ১২৪১৫ ১২২৬৫ ৩৮.০
বারহাট্টা ২৩ ৮৬০৪ ১৬৯১৭ ১৬৬৯০ ৪৭.৯
সাহতা ৭১ ৮৮৩৫ ১৪৫৬০ ১৪৫১৩ ৩৪.৫
সিংধা ৮৩ ৭৪২৪ ১৩৫৪৫ ১৩২৬৯ ৩৬.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আমঘাইল পিরিজপুর গ্রামের জোড়াপুকুর, সিংধার দেব মন্দির, সাউদপুরের ভগ্ন ইমারত (মুগল আমল)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে পাকবাহিনীর গতিরোধ করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনী উপজেলার পশ্চিম সীমান্তের ঠাকুরকোণা রেলওয়ে ব্রিজটি মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিধ্বস্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে এ উপজেলাকে পাকবাহিনীমুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ করে এবং উভয়পক্ষের ব্যাপক গুলিবিনিময়ের ফলে কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বারহাট্টা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুকশেদ মিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে বারহাট্টা হতে চন্দ্রপুর গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ হয় ’শহীদ মুকশেদ সড়ক’।

বিস্তারিত দেখুন বারাহাট্টা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৬৪, মন্দির ৬৫, মাযার ৬।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.৬%; পুরুষ ৩৮.৪%, মহিলা ৩৬.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বারহাট্টা সিকেপি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), বাউসী অর্ধচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), নিচিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক মাকড়সা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩০, নাট্যদল ১, মহিলা সংগঠন ২, খেলার মাঠ ১৪।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.৫৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৫%, শিল্প ০.৫৬%, ব্যবসা ১১.৫১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮৫%, চাকরি ২.২৭%, নির্মাণ ০.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৬% এবং অন্যান্য ৬.৩১%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, কলাই, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, তিল, তিসি, খেসারি, মসুরি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ, কুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩৮, গবাদিপশু ১৩, হাঁস-মুরগি ২৮০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৪৬ কিমি; নৌপথ ৭০ কিমি; রেলপথ ১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, বরফকল, করাতকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪, মেলা ২। গোলপুর বাজার, বাউসী বাজার, গেরিয়া বাজার, নৈহাটি বাজার, নিচিন্তপুর বাজার ও মনাষ বাজার এবং অষ্টমীতিথি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, মাছ, ডিম।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৩.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য উৎস ৯.৭%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৩.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন এবং ৪৪.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.৬% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। [মো. আব্দুল শহীদ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বারহাট্টা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।