বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১
বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ এ বিধিমালায় প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন চাকুরিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া লিপিবদ্ধ আছে। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের অনুবিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ কর্মকমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে উল্লিখিত বিধিমালা অনুমোদন করেন। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি এই বিধিমালা প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার বিধানটি সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদের ২ ধারা অনুযায়ী একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। অবশ্য ১৯৮১ সাল থেকে এই বিধিমালায় বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োগ বা চাকুরির ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান সুযোগ থাকবে। একই অনুচ্ছেদের ২ ধারায় আরও বলা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের যেকোন নিয়োগ বা সরকারি দপ্তরে চাকুরির ক্ষেত্রে কোনো নাগরিককেই শুধু ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, লিঙ্গভেদ বা জন্মস্থানের কারণে অযোগ্য গণ্য করা বা তার প্রতি কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। অবশ্য একই অনুচ্ছেদের ৩ ধারায় রাষ্ট্রের ক্ষমতায় কতিপয় ব্যতিক্রমী শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেমন (ক) প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে দেশের অনগ্রসর কোনো নাগরিক গোষ্ঠীর পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর সপক্ষে বিশেষ বিধান তৈরির ক্ষমতা, (খ) কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠানে ঐ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান প্রণয়ন, (গ) নারী বা পুরুষের জন্য যেকোন ধরনের নিয়োগ বা পদ এই বিবেচনায় সংরক্ষণ করা যে উক্ত নিয়োগ বা পদের ধরন বিপরীত লিঙ্গের উপযোগী নয়।
সরকারি চাকুরি নিয়োগ বিধিমালায় দু’ধরনের নিয়োগ স্বীকৃত হয়েছে। প্রথমটি হলো সরাসরি মনোনয়নের মাধ্যমে নিয়োগ এবং দ্বিতীয়টি পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। এ বিধিমালায় উভয় ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং নিয়োগ প্রাপ্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। মনোনয়নের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর নিম্নবর্ণিত যোগ্যতা থাকতে হবে: (ক) বাংলাদেশের নাগরিক নন এমন কোনো ব্যক্তি সরাসরি চাকুরিতে নিয়োগের যোগ্য হবেন না এবং ঐ ব্যক্তিকেও নিয়োগ দেয়া যাবে না যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন এমন কাউকে বিয়ে করেছেন বা বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; (খ) কোনো মনোনীত ব্যক্তিই চাকুরিতে নিয়োগের যোগ্য হবেন না, যদি বিধি অনুসারে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড কর্তৃক তাকে শারীরিকভাবে যোগ্য ঘোষণা করা না হয়; (গ) যথাযথ সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীর প্রাক-কার্যক্রম তদন্ত করে তা সন্তোষজনক হতে হবে; (ঘ) কোনো ব্যক্তিকে চাকুরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যাবে না যদি ঐ ব্যক্তি সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্ধারিত ফিসসহ নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করে না থাকেন। যেসব ব্যক্তি ইতিমধ্যেই সরকারি চাকুরি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চাকুরিতে বহাল রয়েছেন তাদের যথাযথ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়টি প্রধানত নির্ভর করবে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বা ক্ষেত্রবিশেষে গঠিত বিশেষ পদোন্নতি কমিটির সুপারিশের ওপর। নিম্ন কোনো পদ থেকে ক্যাডারভুক্ত প্রাথমিক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতির নির্দেশ প্রদানের আগেই সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে অপরাপর শর্ত হচ্ছে পদোন্নতি পরীক্ষা ও সন্তোষজনক ফলাফলের রিপোর্ট। সরকারি চাকুরির উচ্চপদে নিয়োগের জন্য প্রথমদিকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিল কমিটির অনুমোদন নিতে হতো। তবে ১৯৯৪ সালে হাইকোর্টের এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ কমিটি বাতিল করা হয়।
সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সব কর্মচারীকেই দুবছর এবং পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে এক বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকুরি করতে হয়। চাকুরিতে নিয়মিতকরণের শর্ত হলো সাফল্যের সঙ্গে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা এবং বিভাগীয় পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া। পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় চাকুরির মান নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি এই প্রক্রিয়া শিথিল করতে পারেন। এক চাকুরি থেকে অন্য চাকুরিতে প্রেষণে নিয়োগেরও বিধান রয়েছে।
মেধা ও জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও উপজাতীয় কোটা সংরক্ষণের ভিত্তিতে চাকুরিতে নিয়োগদান করা হয়। শতকরা ৪৫ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হয় মেধার ভিত্তিতে। ৩০ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকে এবং এক্ষেত্রে প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দান করা হয়। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা ১০ ভাগ, ৫ ভাগ উপজাতীয়দের জন্য এবং অবশিষ্ট ১০ ভাগ জেলাভিত্তিক কোটা হিসেবে সংরক্ষিত। শুধু বিধিসম্মত ক্যাডার সার্ভিসের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। [এ.এম.এম শওকত আলী]