বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি (Bangladesh Petroleum Corporation-BPC)  অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্ট আমদানি, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন এবং জ্বালানি তেল লুব্রিকেন্ট ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য বিতরণ ও বিপণনের জন্য ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ (নং-৮৮, ১৩/ ১১/১৯৭৬) বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম অ্যাক্ট (আইন) ১৯৭৪ অনুযায়ী দেশে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিশোধন এবং বিপণনের ক্ষমতা কেবলমাত্র সরকারের ওপর ন্যস্ত।

আইন অনুযায়ী বিপিসির সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসমূহ হলো: অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ সংগ্রহ ও আমদানি; অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম প্রক্রিয়াকরণ এবং বিভিন্ন মানের পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন; পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি ও সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধাসমূহ প্রতিষ্ঠা করা; বেইসস্টক (basestock) ও প্রয়োজনীয় অ্যাডিটিভসমূহ (aditives) উৎপাদন এবং লুব্রিকেন্টসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করা; ব্লেন্ডিং-এর মাধ্যমে লুব্রিকেন্ট তেল উৎপাদন; ব্যবহূত লুব্রিকেন্টসমূহ পুনঃ ব্যবহার উপযোগী করার ব্যবস্থা, রিফাইনারির অবশিষ্টসমূহ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা; পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য মজুতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন; আন্তঃমহাদেশীয় তেলবাহী জাহাজ (অয়েল ট্যাংকার) সংগ্রহ ও নির্মাণ; পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও তার সম্প্রসারণ; দেশে পেট্রোলিয়াম আমদানি, মজুত, বিতরণ এবং বিপণনের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর বা কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করা; বিপিসির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকান্ড সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ করা সহ সরকার নির্দেশিত অন্য যে কোন দায়িত্ব পালন করা।

বিপিসির অধীনে আটটি কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে: দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইষ্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল); তিনটি তেল বিতরণ ও বিপণন কোম্পানি যথা- পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এবং মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড; দুটি লুব্রিকেন্ট ব্লেন্ডিং প্লান্ট- ইষ্টার্ন লুব্রিকেন্ট ব্লেন্ডার্স লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড; একটি এলপিজি বোতলজাতকরণ ও বিতরণ প্লান্ট- এলপি গ্যাস লিমিটেড এবং একটি বিটুমিন উৎপাদন কোম্পানি- অ্যাসফল্টিক বিটুমিন প্লান্ট।

বিপিসির উপরিউক্ত আটটি অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে মোট ৩,৪০৮ জন এবং বিপিসিতে মাত্র ১৬৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করে। বিপিসি তার অধীনস্থ কোম্পানিসমূহের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল মজুতের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যাতে সময়মত জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। বিপিসির অধীনস্থ কোম্পানিসমূহ স্থানীয় বাজারে তার পণ্যসমূহ বিপণনের জন্য মার্কেটিং এজেন্টদের ব্যবহার করে। দেশের প্রধান প্রধান জ্বালানি তেলের মজুতক্ষেত্র বা ডিপোগুলি গোদনাইল (নারায়ণগঞ্জ), দৌলতপুর (খুলনা), ফতুল্লা (ঢাকা) এবং বাঘাবাড়িতে (পাবনা) অবস্থিত। মাঝারি আকৃতির ডিপোসমূহ রয়েছে রংপুর, পার্বতীপুর (দিনাজপুর), ভৈরব বাজার, আশুগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠিতে। ছোট ডিপোসমূহের অবস্থান হলো: চিলহাটি (কুড়িগ্রাম), বালাসি (গাইবান্ধা), রাজশাহী, হরিয়ান, নাটোর, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বিপিসির কেন্দ্রীয় মজুতক্ষেত্রসমূহ ২,০৬,০০০ টন এবং দেশের অন্যান্য ডিপোসমূহ প্রায় ৬,৮৮,০০০ টন জ্বালানি তেল মজুত ক্ষমতা গড়ে তুলেছে।

স্থানীয় বাজারের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন এবং বিতরণের দায়িত্ব ছাড়াও বিপিসি নিকট অতীতে জ্বালানি তেলের মান উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৯৯ সালের জুলাই থেকে বিপিসি সীসামুক্ত পেট্রোল তেল এবং সামান্য পরিমাণ সালফার সমৃদ্ধ ডিজেল তেল দেশের বাজারে বিপণনের জন্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।  [মুশফিকুর রহমান]