বন্দর উপজেলা

বন্দর উপজেলা (নারায়ণগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৫৪.৩৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৫´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩১´ থেকে ৯০°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সোনারগাঁও উপজেলা, দক্ষিণে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে সোনারগাঁও উপজেলা এবং পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং শীতলক্ষ্যা নদী।

জনসংখ্যা ৩১২৮৪১; পুরুষ ১৫৮৪৯১, মহিলা ১৫৪৩৫০। মুসলিম ২৯৮৮৫৯, হিন্দু ১৩৮৫৭, বৌদ্ধ ২৫, খ্রিস্টান ৮৮ এবং অন্যান্য ১২।

জলাশয় প্রধান নদী: শীতলক্ষ্যা।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৬৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৯৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৭৯ ১৫৭ ১৬৬২৯১ ১৪৬৫৫০ ৫৭৫১ ৬১.৮ ৫৫.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.২৮ ৬১ ১৬৬২৯১ ১৪৭৪২ ৬১.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কলাগাছিয়া ৪৭ ২৩৬৮ ২১৫৮০ ২১৯৭৬ ৬০.৫
ধামগড় ৩১ ২৩৪৯ ১৩৩৬২ ১২৮৪৮ ৫৪.৩
বন্দর ১৫ ১৮৭৬ ১৪৯৬২ ১৪৬১৬ ৫৫.৪
মদনপুর ৬৩ ১৫৩৮ ১১১৫৪ ১০১১৯ ৫৬.৫
মুসাপুর ৭৯ ২৫০৮ ১৩১৭১ ১২৭৬২ ৪৭.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  বন্দর শাহী মসজিদ (১৪৮১), বাবা সালেহ মসজিদ ও মাযার (১৫০৪), নবীগঞ্জ কদমরসুল দরগাহ (১৫৮০), সোনাকান্দা কেল্লা (১৬০০), দেওয়ানবাগ মসজিদ, ফরাজীকান্দা মসজিদ ও লাঙ্গলবন্দ স্নানতীর্থ উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এক সময় এ অঞ্চলে মুগলবাহিনীর সঙ্গে মুসা খাঁন, আব্দুল্লাহ খাঁন, দাউদ খাঁন ও অন্যান্যর নেতৃত্বে কয়েকবার পাঠানবাহিনীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল পাকবাহিনী সিরাজদ্দৌলা ক্লাব মাঠে ৫৪ জন নিরীহ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২২ নভেম্বর বন্দর থানার ধামগড় এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াই হয়। ২৭ নভেম্বর এক লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর একটি গানবোট নিমজ্জিত করে এবং কয়েকজন পাকসেনাকে হত্যা করে। ১২ ডিসেম্বর পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পরাজিত হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে পালিয়ে যায়। এছাড়াও ১৫ ডিসেম্বর বন্দর রেলস্টেশন এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে বিপুল সংখ্যক পাকসেনা হতাহত হয় এবং পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৫ ডিসেম্বর বন্দর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন বন্দর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫২, মন্দির ১৪, গীর্জা ৫, তীর্থস্থান ২, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বন্দর শাহী মসজিদ, ফরাজীকান্দা মসজিদ, বাবা সালেহ মসজিদ, কদম রসূল দরগাহ শরীফ, ফতেহ শাহের মাযার, রাজঘাট মন্দির, সাবদী মন্দির, প্রেমতলা মন্দির, লাঙ্গলবন্দ স্নানতীর্থ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.৯%; পুরুষ ৬১.১%, মহিলা ৫৬.৬%। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ১, কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬, কিন্ডার গার্টেন ৫, মাদ্রাসা ৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বন্দর বি এম ইউনিয়ন হাইস্কুল (১৯০০), ইব্রাহীম আলম চান হাইস্কুল (১৯৪৭), বন্দর গার্লস হাইস্কুল, মদনপুর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মালিবাগ কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন হাইস্কুল, ঢাকেশ্বরী মিল হাইস্কুল, নবীগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল, সামছুজ্জোহা ইউনিয়ন হাইস্কুল, হাজী আব্দুল মালেক হাইস্কুল, সোনাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দর ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, মদনপুর রিয়াজুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ২, ক্লাব ২২, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ১৭, মহিলা সংগঠন ২৬, কমিউনিটি সেন্টার ১, নাট্যদল ১, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭.১৮%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০৯%, শিল্প ৫.২৯%, ব্যবসা ২৩.৪৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.২৯%, চাকরি ২৯.০৫%, নির্মাণ ২.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৭.১১% এবং অন্যান্য ১৫.৭৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ২৯.৮৪%, ভূমিহীন ৭০.১৬%।

প্রধান কৃষি ফসল আলু, ধান, সরিষা, গম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, পাট, পান, মিষ্টি আলু, কাউন, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯, হাঁস-মুরগি ১২৩, গবাদিপশু ১৪১, নার্সারী ৩০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২১৩ কিমি; নৌপথ ০.৭২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি।

শিল্প ও কলকারখানা জুটমিল, টেক্সটাইল মিল, অয়েল মিল, ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, বিদুৎ কেন্দ্র, পার্টিকেল বোর্ড মিল, নিউজপ্রিন্ট মিল, ইন্টারকন ফেব্রিক্স।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৫। সোনাকান্দা হাট, লাঙ্গলবন্দ হাট, মদনগঞ্জ হাট, ইসলামীয়া সুপার মার্কেট, ইস্পাহানী বাজার, চৌধুরী বাড়ি বাজার, সাবদী বাজার এবং কদমরসুল দরগাহ মেলা, লাঙ্গলবন্দ মেলা ও মদনগঞ্জের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আলু, সরিষা, পাটজাত দ্রব্য, হার্ডবোর্ড, ভোজ্যতেল, ঢেউটিন।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৭.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানিয়জলের উৎস নলকূপ ৭৪.৩%, ট্যাপ ২২.৭% এবং অন্যান্য ৩.০%। এ উপজেলায় ১৮৬৪৭ টি অগভীর নলকূপের মধ্যে ৩৪.১৭% নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮১.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪, মেডিকেল সাব সেন্টার ৩, ক্লিনিক ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬৯ সালের ঘুর্ণিঝড় এবং ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, সিডা, সেবা পরিষদ, ওডিপি।  [ইফতেখার উদ্দিন ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বন্দর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।