বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পৃথিবী বর্তমানে একটা তথ্য, যোগযোগ ও প্রযুক্তি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশ ক্যাবল ও টাওয়ার নির্ভর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের সীমাবদ্ধতা এড়াতে কৃত্রিম উপগ্রহ নির্ভর তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের যুগে প্রবেশ করেছে। একটি স্যাটেলাইট ডাটাবেজ-এর হিসাব অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল ২০২১-এ ৪০৪৮টি স্যাটেলাইট মহাকাশে সচল অবস্থায় ছিল এবং অনেক দেশই মহাকাশে নিজেদের স্যাটেলাইট ব্যবহারের প্রত্যাশা করে।

জিওস্টেশনারিঅরবিটে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট (ছবি: Thales Alenia Space)

বাংলাদেশ স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫ রকেট ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার ৩৯ থেকে ১২ মে ২০১৮ প্রথম জিওস্টেশনারি যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করে। বাংলাদেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনকারী ৫৭তম দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নাম অনুসারে স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু-১’। স্যাটেলাইটটি জিওস্টেশনারি অরবিটের অতি নিকটে ৩৫৭৮৯.৩ কিলোমিটার উচ্চতায় সরাসরি বিষুব রেখার উপর এবং ১১৯.০৯ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে স্থাপন করা হয়েছে। এর অরবিটাল গতি ও আবর্তনের সময় পৃথিবীর আবর্তনের সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে আকাশে নির্দিষ্ট স্থানে স্থির মনে হয় এবং ভূপৃষ্টের এনটেনা স্যাটেলাইটমূখী করে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা যায়। দুইটি সোলার এ্যারে ও ব্যাটারি স্যাটেলাইটটির শক্তি যোগাচ্ছে। ফ্রান্সের থেলসএলেনিয়া স্পেস স্যাটেলাইটটি ডিজাইন ও নির্মাণ এবং বাংলাদেশ টেলিকমুনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন এইচএসবিসি হোল্ডিং পিএলসি থেকে ১৮৮.৭ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার ঋণসহ সর্বমোট ২৪৮ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার ব্যয় করে এটি বাস্তবায়ন করেছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর প্রাথমিক গ্রাউন্ড স্টেশন গাজীপুর এবং দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশন রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় অবস্থিত। স্যাটেলাইট-টি ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন ২৪ কেইউ ও ১৬ সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার ধারন করে এবং এটির প্রত্যাশিত আয়ুস্কাল ১৫ বৎসর। বাংলাদেশ এবং বঙ্গোপসাগরসহ নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, ভারতের পূর্ব দিকের রাষ্ট্রসমূহ, ইন্দোনেশিয়া এবং এর বাইরেও স্যাটেলাইটটির সেবা প্রদানের সম্প্রসারিত সক্ষমতা আছে।

সরকারি মালিকাধীন বাংলাদেশ কমুনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্যাটেলাইটটি পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ নিজেদের স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পূর্বে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার ব্যয় করত তা সাশ্রয় করবে। এছাড়াও স্যাটেলাইটটির বাংলাদেশ ও নিকটবর্তী দেশে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ সেবা প্রদানের মাধ্যমে যথেষ্ট আয় করার সুযোগ আছে। [এম. ফিরোজ আহমেদ]