ফেরোমোন

ফেরোমোন (Pheromone) বিশেষ ধরনের জীব নিঃসৃত এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা তার আচরণ পরিবর্তনকারী বা নিয়ন্ত্রক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফেরোমোন শব্দটি এসেছে দু’টি গ্রিক শব্দ থেকে (Phero) যার অর্থ ‘সহ্য করা’ এবং (Hormon) যার অর্খ ‘উদ্দীপক’। এর অথর্, যখন কোনো একটি জীব এ ফেরোমোন নিঃসৃত করে তখন একই প্রজাতিভুক্ত অন্য জীব তা সনাক্ত করার মাধ্যমে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সাধারণভাবে বলা যায় যে, ফেরোমোন একটি নিয়ন্ত্রক পদার্থ। এটি তার টার্গেটকে সাড়া দিতে বা কাজ করতে প্ররোচিত করে। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি দ্বারা এ হরমোন উৎপন্ন হয় এবং নিঃসৃত হয়। উদ্ভিদে, উদ্ভিদের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ যেমন, বৃদ্ধি ও বয়ষ্কতা (senescence) ফেরোমোন নিঃসরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেরোমোন একটি হরমোন, বিশেষত বহিঃহরমোন, কারণ এটি বহিস্থঃভাবে নিঃসৃত হয় এবং এটি জীবদেহের বাইরে কাজ করে

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এটি ভোমোরোনাসাল অঙ্গ (Jacobson’s organ) দ্বারা চিহ্নিত হয়। এ অঙ্গটি নাকের মধ্যে থাকে যা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের সাথে সংযুক্ত থাকে। মানুষেরও শুধুমাত্র ভ্রুণ অবস্থায় এটি ভোমোরোনাসাল অঙ্গে থাকে, যদিও তা এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। যদিও সেগুলো থেকে থাকে মানুষ সেগুলোকে ভোমোরোনাসাল অঙ্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় বরং এটি সম্ভবত তাদের স্বাভাবিক ঘ্রাণ সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রকারভেদ এখন পর্যন্ত অন্তত ছয় ধরণের ফেরোমোন সনাক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে এগ্রেশান, অ্যালার্ম, রিলিজার, সিগন্যাল, টেরিটোরিয়াল ও ট্রেইল ফেরোমোনের নাম বলা যায়।

জৈবিক গুরুত্ব কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির জীব নিঃসৃত ফেরোমোনগুলি তাদের নিজস্ব প্রজাতির শরীরবৃত্তীয় কাজ বা আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে অনেকগুলো বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীদের আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এদেরকে সেক্স ফেরোমোন বলে। অন্যান্য ফেরোমোনগুলো এলার্ম বা খাদ্যের জন্য সংকেত দিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কিছু ফেরোমোন রয়েছে যা কোনো কোনো প্রাণীর জন্য তার ভূখ- চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ কুকুরের প্রশ্রাবে উপস্থিত ফেরোমোনের নাম বলা যায় যা তার নির্দিষ্ট অঞ্চল চিহ্নিত করে। সুতরাং ফেরোমোন কিছু কিছু জীবের ক্ষেত্রে যোগাযোগের একটি বিশেষ মাধ্যম। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ পোকামাকড় একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য ফেরোমোন হরমোন ব্যবহার করে। [মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী]