ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা (সিলেট জেলা)  আয়তন ১১৪.০৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৪৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°২র্ থেকে ৯১°৫৩´পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিলেট সদর, দক্ষিণে রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা, পূর্বে গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে বালাগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ১০৪৭৪১; পুরুষ ৫১০৭৭, মহিলা ৫৩৬৬৪। মুসলিম ৯৩৪৩১, হিন্দু ১১২৯৬, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ৮।

জলাশয় প্রধান নদী: কুশিয়ারা; হাকালুকি হাওর, ধুবড়িয়া হাওর; বারাইয়া বিল ও টেংরা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ফেঞ্চুগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯০৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮০ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ২৯ ৮৯ ২১৮৪১ ৮২৯০০ ৯১৮ ৪৫.৭ ৫১.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কি.মি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৯২ ২১৮৪১ ২২০২ ৪৫.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গিলাছড়া ৪৭ ১০৬৪৮ ১৫৪৪০ ১৬৬৯৯ ৪৪.৮
ফেঞ্চুগঞ্জ ২৩ ২৬১২ ২০৮৪৩ ২২০১৮ ৪৪.৭
মাইজগাঁও ৭১ ৪২৫০ ১৪৭৯৪ ১৪৯৪৭ ৬৪.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজঘাট।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মে মাসে সিলেট থেকে পাকবাহিনী প্রথমে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সার কারখানা চত্বরে ঢুকে কারখানার প্রথম ফটকে ২ জন মালিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকবাহিনী মনিপুর চা কারখানায় ঢুকে ২ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। মেজর সি আর দত্তের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টরের অধীনে থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন অপারেশনে ও প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। উপজেলার কাইয়ার গুদামে ১টি বধ্যভূমি রয়েছে; উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং গিলাছড়ায় ১টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১৩১, মন্দির ৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: দেলোয়ার হোসেন জামে মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৫%; পুরুষ ৫১.২%, মহিলা ৪৯.৮%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৬, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৫, কিন্ডার গার্টেন ৯, মাদ্রাসা ২৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), ফরিদা খাতুন বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬২), হাটুভাঙ্গা দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা (১৯৬২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার (অবলুপ্ত), ফেঞ্চুগঞ্জ বার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৮, শিল্পকলা একাডেমী ১, খেলার মাঠ ৬।

দর্শনীয় স্থান ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা,  হাকালুকি হাওর, চা বাগান।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ৯.১৯%, শিল্প ০.৫৫%, ব্যবসা ১৩.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৭%, চাকরি ১১.৩৪%, নির্মাণ ১.২৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৯.১৩% এবং    অন্যান্য ১৭.৩৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৫.০৭%, ভূমিহীন ৬৪.৯৩%। শহরে ২৫.৯৭% এবং গ্রামে ৩৭.৩৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, চীনাবাদাম, সরিষা, মসুরি,  আলু।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, পাট, মাষকলাই।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচু, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২, গবাদিপশু ১৮, হাঁস-মুরগি ২৮।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫১ কিমি, কাঁচারাস্তা ১০৬ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি; কালভার্ট ১৩৬; ব্রিজ ৪।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সার কারখানা ১ (ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা), চা কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র (বরকতউল্লাহ ইলেকট্রো ডাইনামিক্স লিমিটেড)।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, শীতলপাটিশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৩। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার, মাইজগাঁও বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য প্রাকৃতিক গ্যাস, চা, সার, শীতলপাটি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ থানার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লি¬বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৮.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮১.০%, ট্যাপ ১২.৬% এবং অন্যান্য ৬.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৩.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ৭, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও  ব্র্যাক, আশা, ভার্ড।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০১১।