পাবনা সদর উপজেলা

পাবনা সদর উপজেলা (পাবনা জেলা)  আয়তন: ৪৩৯.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৩´ থেকে ২৪°০৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৯´ থেকে ৮৯°২৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আটঘরিয়া উপজেলা, দক্ষিণে কুমারখালী ও পাংশা উপজেলা, পূর্বে সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা, পশ্চিমে ঈশ্বরদী উপজেলা। দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল (১৯৫৭) এখানে অবস্থিত।

জনসংখ্যা ৫৯০৯১৪; পুরুষ ২৯৬৮৭০, মহিলা ২৯৪০৪৪। মুসলিম ৫৭৮৩৬৫, হিন্দু ১২২৯৪, বৌদ্ধ ২৭, খ্রিস্টান ২২১ এবং অন্যান্য ৭।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা ও ইছামতি।

প্রশাসন পাবনা থানা গঠিত হয় ১৮৭২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ২৪৩ ২৯১ ১৪৪৪৪২ ৪৪৬৪৭২ ১৩৪৫ ৭৬.২ ৪৩.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
২৭.২৭ ১৫ ৪৬ ১৪৪৪৪২ ৫২৯৭ ৭৬.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আতাইকোলা ১৬ ৯০০২ ২২১১৭ ২১৬৮২ ৩৮.৮
গয়েশপুর ৫১ ৭৯৩৫ ২০২৭২ ১৯৩০৫ ৪৫.৮
চরতারাপুর ২৫ ৭১৯০ ১৪৭২৭ ১৫০৪১ ৩৮.১
দাপুনিয়া ৩৪ ৮২৭৭ ১৭৮৪৯ ১৮১৭৩ ৪৬.৬
দোগাছী ৪৩ ১৪৬০৪ ৪১৫৫৭ ৪২৪৫৮ ৪৫.১
ভাঁড়ারা ১৭ ২০২৯২ ২৫৩৮৮ ২৬৪৭৮ ৩৪.৫
মালঞ্চী ৬৯ ৬৪৮২ ১৫৫৯৭ ১৫৪২৩ ৪৯.১
মালিগাছা ৭৭ ৭০৭০ ২১৮০৯ ২২২৪০ ৪৫.৮
সাদুল্ল¬াপুর ৯৪ ৮২৮৬ ১৬০০৪ ১৫৭৯২ ৩৪.৭
হেমায়েতপুর ৬০ ১২৬৮৭ ২৭৫১১ ২৭০৪৯ ৪৮.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিন গম্বুজবিশিষ্ট ভারারা মসজিদ (১১৭৬ হিজরি), জোড় বাঙ্গালা বা জোড় বাংলা মন্দির (রাঘবপুর, অষ্টদশ শতাব্দী), তাড়াশ ভবন (জমিদার রায় বাহাদুর বনমালীর কাচারি), শিতলাই ভবন (শিতলাই জমিদার যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রের বাড়ি), দুলাই জমিদার বাড়ি, জেলা জজ আদালত ভবন (১৮৮৪)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কম্পাউন্ডে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। উপজেলায় ১টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে; ১টি স্মৃতিস্তম্ভ (দূর্জয় পাবনা) ও গোপালপুরে ১টি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন পাবনা সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬০৯, মন্দির ১২০, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ভাঁড়ারা মসজিদ, জোড়বাংলা মন্দির (রাঘবপুর) ও সৎসঙ্গ আশ্রম (হেমায়েতপুর)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৪%; পুরুষ ৫১.৭%, মহিলা ৫১.২%। কলেজ ১৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৪, মাদ্রাসা ৩৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ (১৮৯৮), সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, পাবনা জেলা স্কুল (১৮৫৩), কৃঞ্চপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৩), জি সি ইনস্টিটিউশন (১৮৯৪), আর এম একাডেমী (১৮৯৯), সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৫), পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (১৮৯১), কৃষ্ণপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), রাধানগর মজুমদার একাডেমী (১৮৯৯), সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল (১৯২৬), জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৬), টাউন গার্লস হাইস্কুল (১৯০৩), সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), পাবনা আলীয়া মাদ্রাসা (১৯২৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: উদ্যোগ বিধায়িনী (১৮৬৩), সাপ্তাহিক: পাবনা দর্পণ (১৮৬৪), বার্তাবহ (১৮৮২), ভ্রমর (১৮৮২-৮৩), ঊষা (১৮৮২), জ্যোৎস্না (১৯০০), পাবনা-বগুড়া হিতৈষী (১৯০২), সুরাজ (১৯১৯), রওশন হেদায়েত (১৯২৪), শ্বাশত সংবাদ, তর্জমানুল হাদীছ (১৯৪৯), মানসী (১৯৫০), পাক হিতৈষী, আমাদের দেশ (১৯৫৮), পাবনা (১৯৬৭), প্রবাহ (১৯৬৮), মেহনতী কণ্ঠ (১৯৭২); মাসিক: আরতি (১৯২৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৬, ক্লাব ৮১, সিনেমা হল ৫, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১৩, কমিউনিটি সেন্টার ১, শিল্পকলা একাডেমী ১, মহিলা সমিতি ৮৪।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৭৭%, অকৃষি শ্রমিক ৬.০৪%, শিল্প ৫.৪৯%, ব্যবসা ১৭.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৯৬%, চাকরি ১০.৬১%, নির্মাণ ৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.০৯% এবং অন্যান্য ১০.৭২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.৬৮%, ভূমিহীন ৫৫.৩২%। শহরে ৩২.২৭% এবং গ্রামে ৫০.৭৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, ডাল, তুঁত গাছ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, চীনা, কাউন, ভুরা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, লিচু, পেঁপে, লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭৬, গবাদিপশু ১০৭, হাঁস-মুরগি ২৮৯, নার্সারি ২৭০, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৪১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ১২১১ কিমি; নৌপথ ৪৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা অয়েল মিল, ফ্লাওয়ার মিল, কটন মিল, টেক্সটাইল মিল, হোসিয়ারি মিল, ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, হোমিওপ্যাথ ল্যাবরেটরি, উইভিং ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বেতশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২১, মেলা ৩। আতাইকোলা, দোগাছী, হেমায়েতপুর, দাশুড়িয়া, সাদুল্লাপুর, হাজির হাট, টেবুনিয়া, কাশিপুর, দুবলিয়া বাজার এবং হেমায়েতপুরের শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মোৎসব মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য হোসিয়ারি সামগ্রী, সুতা, তাঁতবস্ত্র, ধান, ডাল, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৩.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

খনিজ সম্পদ বালি, কয়লা।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৯%, ট্যাপ ৩.৭% এবং অন্যান্য ২.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানসিক হাসপাতাল ১, হাসপাতাল ৫, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, টিবি হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, কমিউনিটি হাসপাতাল ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৫২, স্কুল স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পৌর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পারিবারিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক ১, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ১১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭, ১৮৯৮, ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, টিএমএসএস।  [মো. হাবিবুল্লাহ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পাবনা সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।