পলিমার

পলিমার (Polymer) হলো প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম পদার্থ যা বৃহৎ অণু বা macromolecules নামে পরিচিত এবং ছোট অণু বা মনোমারের সমন্বয়ে গঠিত। কখনও কখনও polymer এবং macromolecule শব্দ দুটো সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পলিমারে উপস্থিত মনোমার ইউনিটের সংখ্যা অনির্ধারিত, এবং উচ্চ সংখ্যক মনোমার বিশিষ্ট পলিমারসমূহকে প্রায়শই ‘High Polymers’ নামে অভিহিত করা হয়। পলিমারের দীর্ঘ-শৃঙ্খল প্রকৃতি তার বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার কারণ যা তাদের অন্যান্য অণু থেকে আলাদা করে তোলে। প্রাকৃতিক পলিমারের মধ্যে রয়েছে চুল, সিল্ক, সেলুলোজ, প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড ইত্যাদি। আবার কৃত্রিম পলিমারগুলির মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক, রাবার, কাচ, কাগজ, গ্রাফিন ইত্যাদি। পলিমারসমূহের বিস্তর প্রযোজ্য তার কারণে তা বিভিন্ন শিল্পে সহজে প্রয়োগ উপযোগী। শিল্প, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, এবং বায়োমেডিকাল সেক্টরে পলিমারসমূহের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করার জন্য অপরিহার্য। পলিমার সংশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পলিমারাইজেশন কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি পলিমারের যান্ত্রিক, কাঠামোগত এবং কার্যকরী প্রয়োগ মূলত সেই পলিমারে উপস্থিত মনোমার ইউনিটগুলোর গঠন, প্রকার, আণবিক আকার, ওজন এবং ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, যেমন: মুদি ব্যাগ, পানির বোতল, খেলনা, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স, অটোপার্টস থেকে শুরু করে পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, আধুনিক ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা, কৃত্রিম টিস্যু বা অঙ্গ বিকাশ পদ্ধতি ইত্যাদিতে পলিমার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

গঠন প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে পলিমারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। হোমোপলিমার এক প্রজাতির মনোমার দিয়ে তৈরি, এবং কোপলিমার একাধিক প্রকৃতির মনোমার সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গঠিত একটি দীর্ঘ-শৃঙ্খল। আকৃতি অনুসারে, পলিমার হতে পারে: (১) রৈখিক দুটি প্রান্ত খোলা, (২) শাখা বিশিষ্ট; বিশেষ শাখা বিন্দুতে প্রধান শৃঙ্খলের সাথে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের শৃঙ্খল সংযুক্ত থাকে (৩) চক্রাকার, আবদ্ধ প্রকৃতির এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং (৪) নেটওয়ার্ক পলিমার, রৈখিক শৃঙ্খল নির্দিষ্ট সংযোগ বিন্দুদ্বারা অন্যান্য শৃঙ্খলের সাথে আড়াআড়িভাবে যুক্ত থাকে এবং নেটওয়ার্ক পলিমারগুলোর বৈশিষ্ট্য আড়াআড়ি সংযোগের ঘনত্ব এবং শৃঙ্খলের দৈর্ঘ্যের সাথে পরিবর্তিত হয়।

পলিমারগুলোকে ভৌত রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং তাদের অন্তর্নিহিত আণবিক কাঠামো অনুসারে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। থার্মোপ্লাস্টিক সাধারণত প্লাস্টিক নামে পরিচিত, রৈখিক বা শাখাযুক্ত পলিমার যা তাপ প্রয়োগের ফলে তরলে রূপান্তরিত হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে থার্মোপ্লাস্টিকগুলোকে কার্যত যেকোনো আকারে ঢালাই বা পুনর্নির্মাণ করা যেতে পারে। অনুপাত বিবেচনায় পলিমারের এই ধরণটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পলিমারের মধ্যে বৃহত্তম। ইলাস্টোমার হল স্থিতিস্থাপক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কম আড়াআড়ি সংযোগের ঘনত্ব বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক পলিমার। থার্মোসেটগুলোও নেটওয়ার্ক পলিমার কিন্তু উচ্চ আড়াআড়ি সংযোগের ঘনত্ব বিশিষ্ট, তাই অনমনীয়। আণবিক গঠন, পলিমার শৃঙ্খল বা নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য এবং আড়াআড়ি সংযোগ ঘনত্বের মাত্রার বৈচিত্র্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের পলিমারের শক্তি, নমনীয়তা, তাপ প্রতিরোধের ক্ষমতা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য তারমাত্রায় ভিন্নতা দেখা যায়। [শহীদুল ইসলাম]