পত্নীতলা উপজেলা

পত্নীতলা উপজেলা (নওগাঁ জেলা)  আয়তন: ৩৮২.৩৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৯´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৫´ থেকে ৮৮°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ধামইরহাট উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে মহাদেবপুর উপজেলা, পূর্বে বদলগাছি উপজেলা, পশ্চিমে সাপাহার ও পোরশা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৩১৯০০; পুরুষ ১১৬৭২৪, মহিলা ১১৫১৭৬। মুসলিম ১৮২১৯০, হিন্দু ৩৫৮২১, বৌদ্ধ ৭৬, খ্রিস্টান ৪৭৭৭ এবং অন্যান্য ৯০৩৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহালী, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় আত্রাই ও শিব নদী।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯০৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ২৮৬ ২৯৮ ২১৬৭০ ২১০২৩০ ৬০৬ ৬৯.৬ ৫০.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.৮২ ১৫ ২১৬৭০ ১৮৩৩ ৬৯.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আকবরপুর ১২ ৮৪৩১ ১০৮৪৮ ১০৬২৮ ৫২.৭
আমাইড় ১৭ ৮৪১৬ ১০১৩৫ ১০৩৯৮ ৪৩.৬
কৃষ্ণপুর ৪৩ ১০২৩৮ ১১৩৬৮ ১১৩৬৫ ৪৬.৫
ঘোষনগর ৩৪ ৭৫০১ ১০৯৩২ ১০৯৪২ ৫২.১
দিবর ২৫ ৭৭৮৫ ৮৩২০ ৮২৭৬ ৫৩.২
নজিপুর ৬০ ৪৯৫৭ ৬২৮০ ৫৯৮২ ৫৩.৮
নির্মইল ৬৯ ৯০৯৪ ৬৫৫৪ ৬৪৪৬ ৪৭.৭
পত্নীতলা ৮৬ ৮৬৬০ ১০৭৩০ ১০৭৫৬ ৫০.৫
পাটিচরা ৭৭ ৭৮৪৪ ৯৯৬১ ৯৫৯০ ৫৭.৫
মাটিন্দর ৫১ ৮৭১৭ ১০২৫৪ ১০১৮৫ ৫৪.২
শিহাড়া ৯৪ ৯১৫৫ ১০১০৪ ১০১৭৬ ৪৭.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দীবর দীঘি ও ভীমের পাণ্ঠি (১০৭৫), দিব্যক জয়স্তম্ভ, আমাইড় দীঘি, কাঞ্জন দীঘি, যৌগীর ঘোপা উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মহাদেবপুর, শিশুগ্রাম, পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। স্থানীয়ভাবে দুর্গাপুর যুদ্ধের কথা এখনও জনস্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে আছে।

বিস্তারিত দেখুন পত্মীতলা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৩৬, মন্দির ১৪৭, গির্জা ৯, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৫%; পুরুষ ৫৪.৫%, মহিলা ৫০.৫%। কলেজ ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২২, মাদ্রাসা ২৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নজিপুর সরকারি কলেজ (১৯৭৩), নজিপুর মহিলা কলেজ (১৯৯৫), কাঁটাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), নজিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), সরলা বালা (গান্ধী) বালিকা বিদ্যালয় (১৯২০), নজিপুর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬৯)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২৪, থিয়েটার গ্রুপ ২, সিনেমা হল ৪, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ৬।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮০.২৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.০৭%, শিল্প ০.৭০%, ব্যবসা ৭.৭৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.০৫%, চাকরি ৩.৬৪%, নির্মাণ ০.৪১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৬% এবং অন্যান্য ২.৯৪%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, পিঁয়াজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, যব, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫, গবাদিপশু ৪, হাঁস-মুরগি ৩০, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৫ কিমি; কাঁচারাস্তা ১৮ কিমি; আধা-পাকারাস্তা ৩২১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, চালকল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৯, মেলা ১২। মধইল হাট, শিবপুর হাট ও নজিপুর হাট এবং চৈত্র সংক্রান্তিতে ত্রিমোহনী মেলা, বারুণীর স্নান মেলা, কাশীপুর মেলা, পদ্মপুকুর মেলা, যত্নিপত্নী মেলা ও দো-চায়ের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  গুড়, ধান, চাল, তরমুজ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় দস্তার খনি (আমবাটি), চুনাপাথর (চকনিরখিন) ও চীনামাটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৩.৭%, ট্যাপ ৩.৬% এবং অন্যান্য ১২.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৭.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪০.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, হাসপাতাল ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ৬।

এনজিও কারিতাস, কেয়ার, প্রশিকা, ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [শামসুল আরেফিন তুহিন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পত্নীতলা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।