ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড

ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (এনসিসিবিএল)  ১৯৮৫ সালে ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এর উদ্দেশ্য ছিল সম্পদ গতিশীলতার মধ্য দিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতকে উন্নত করা এবং পুঁজি বাজার তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ কোম্পানির ১৬টি শাখা ছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে ৩৯ কোটি টাকা পুঁজি নিয়ে ১৯৯৩ সালে একটি ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এনসিসি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করার পর থেকেই এটি গ্রাহকদের কম্পিউটারভিত্তিক সেবা দিয়ে আসছে। ব্যাংকের ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট পর্যায়ের গ্রাহকদের ডিপোজিট এবং ক্রেডিট কর্মসূচিগুলি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে ব্যাংকটির ১২২টি শাখা রয়েছে।

১৯৯৩ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরুর সময় ব্যাংকটির প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ৭.৫০ মিলিয়ন সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত ৭৫০ মিলিয়ন টাকা অনুমোদিত মূলধন এবং ১.৯৫ মিলিয়ন শেয়ারে বিভক্ত ১৯৫ মিলিয়ন টাকা পরিশোধিত মূলধন ছিল। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ২০,০০০ মিলিয়ন এবং পরিশোধিত মূলধন ৯৪৫৯ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে দেশে প্রতিষ্ঠিত ২টি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কোম্পানির মধ্যে একটি ছিল ন্যাশনাল ক্রেডিট লিমিটেড। ৫০ মিলিয়ন টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে গঠিত এনসিএল ৮ বছর কাজ করার পর বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে এনসিএল-এর দায় ও পরিসম্পদ নিয়ে এনসিসিবিএল গঠন করা হয়।

এনসিসিবিএল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বহুমুখী বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবসায়ে নিয়োজিত রয়েছে। ব্যাংকটির মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমগুলি হচ্ছে আমানত সংগ্রহ, ঋণদান, বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রা ও আমদানি-রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স সার্ভিসেস। তবে সম্প্রতি ব্যাংকটি গ্রাহক-ভিত্তিক ব্যক্তিগত ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ওপর অধিক জোর দিয়েছে। ফলে তারা ইতোমধ্যে একটি সমৃদ্ধ গ্রাহকভিত্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি স্ব-প্রণীত নীতিমালা অনুসারে ঋণ দিয়ে থাকে। প্রচলিত শিল্প ঋণ প্রদান/অর্থায়ন এবং বাণিজ্যিক ঋণ ব্যতীত ব্যাংকটি বিভিন্ন প্রকারের ভোক্তা ঋণ স্কিম (Consumer Credit Schemes) চালু করেছে। উক্ত স্কিমসমূহের মাধ্যমে ব্যাংকটি স্থায়ী আয়ের ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একটি গ্রাহকভিত্তি তৈরি করার প্রয়াস চালায়। এনসিসিবিএল ইজারা অর্থায়ন, প্রকল্প ঋণ, শিল্প ঋণ এবং অন্যান্য অগ্রিম প্রদান কার্যক্রমও পরিচালনা করে। অন্যান্য ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে সিন্ডিকেট ঋণ প্রদানেও ব্যাংকটি অংশগ্রহণ করে।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান মিলিয়ন টাকায়

বিবরণ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০
অনুমোদিত মূলধন ২০০০০ ২০০০০ ২০০০০
পরিশোধিত মূলধন ৮৮৩২ ৯২৭৪ ৯৪৫৯
রিজার্ভ ৮৮৪৪ ১০০৯৪ ১১৩৭০
আমানত ১৯১৩৪৪ ২০০০১৮ ১৯৭০২১
ক) তলবি আমানত ২৪৮৩১ ২৭৫২৯ ৩২৭০৮
খ) মেয়াদি আমানত ১৬৬৫১৩ ১৭২৪৮৯ ১৬৪৩১৩
ঋণ ও অগ্রিম ১৭৩৮৬৭ ১৭৯০৩৭ ১৭৮১৫৯
বিনিয়োগ ৩৩৪৭১ ৩৭৭৩৯ ৪৩৪৮২
মোট পরিসম্পদ ২৪০৫২৮ ২৫৬৮৮৭ ২৫৭৬৬৯
মোট আয় ২২৪৩০ ২৫৫৬২ ২১৭৪২
মোট ব্যয় ১৬২৪৬ ১৮৮৬৫ ১৬৪৯৮
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা ১৮০০১৪ ২১৮৮৬১ ১৯৯১১৯
ক) রপ্তানি ৪৮৫৭৭৭ ৬৮২৯৩ ৫৮৩৫৫
খ) আমদানি ১০১৯৪৪ ১০৭৭১৯ ৯৬১৪৮
গ) রেমিট্যান্স ২৯৪৯৩ ৪২৮৫০ ৪৪৬১৬
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ২১৪৫ ২১৪৮ ২১৬৪
ক) কর্মকর্তা ১৯১০ ১৯১২ ১৯৪২
খ) কর্মচারি ২৩৫ ২৩৬ ২২২
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়) ৩৫৯ ৩৩৩ ৩৪০
শাখা (সংখ্যায়) ১১৬ ১২১ ১২২
ক) দেশে ১১৬ ১২১ ১২২
খ) বিদেশে
কৃষিখাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৭৫২ ৪২০৯ ৪৩৫৮
খ) আদায় ৭২২ ৮৪৯ ১০৩২
শিল্পখাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৭৭২৩১ ৫২০২৩ ৫১৪৭০
খ) আদায় ৬১৯৫৩ ৫০৬৪০ ৪৮০৮১
খাতভিত্তিক ঋণের স্থিতি
ক) কৃষি ও মৎস্য ৪৬৬৮ ৪৬৮৪ ৪৫৬০
খ) শিল্প ৪২৫১৯ ৪৪৬৪৫ ৪১১৭৫৫
গ) ব্যবসা বাণিজ্য ৫৮২৯৭ ৬০২৭১ ৫৬১০২
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন ১৪৫৪ ১৫২৬ ১৪৯৩
সি.এস.আর ১১১ ১৬৬ ২৫৬

উৎস  আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১

চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদ ব্যাংকটির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকটির জন্য ব্যবসায়িক ও কৌশলগত নীতিসমূহ অনুমোদন করে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং তিনি তার কাজের জন্য পরিচালক পর্ষদের নিকট জবাবদিহি করেন। ২০২০ সালে ব্যাংকটির শাখা ১২২ এবং মোট কর্মকর্তা কর্মচারির সংখ্যা ২,১৬৪। বিশ্বর ৩৪০টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সাথে এনসিসিএল-এর প্রতিসংগী সম্পর্ক রয়েছে। এনসিসিএল আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন নিকাশ ব্যবস্থাপক সুইফট এর সদস্য এবং ১৯৯৮ সালে নভেম্বর থেকে মানিগ্রামের সাথে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]