নোয়াখালী সদর উপজেলা

নোয়াখালী সদর উপজেলা (নোয়াখালী জেলা) আয়তন: ৩৩৬.০৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৮´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৪´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বেগমগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে সুবর্ণচর উপজেলা, পূর্বে কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) ও কবিরহাট উপজেলা, পশ্চিমে কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫২৫৯৩৪; পুরুষ ২৫২৭৭২, মহিলা ২৭৩১৬২। মুসলিম ৫০৯২৫২, হিন্দু ১৫৬৪০, বৌদ্ধ ১৮৫, খ্রিস্টান ৮৪১ এবং অন্যান্য ১৬।

জলাশয়  মেঘনা নদী ও নোয়াখালী খাল।

প্রশাসন  নোয়াখালী সদর উপজেলা শহরের পূর্বনাম ছিল সুধারামপুর। নোয়াখালী সদর থানা গঠিত হয় ১৮৬১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। ১৮৭৬ সালে নোয়াখালী পৌরসভা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১৬৬ ১৭৩ ১৩০৮৪২ ৩৯৫০৯২ ১৫৬৫ ৭১.১৪ (২০০১) ৪৪.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৮৮ (২০০১) ৩৬ ১০৭৬৫৪ ৪৭৮৩ (২০০১) ৭৫.৩
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.০০ (২০০১) ২৩১৮৮ ২১৩৩ (২০০১) ৬১.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আন্ডারচর ২১ ১১৬০৩ ১৮৩৭৫ ২১৭৩৫ ১৯.৪
অশ্বদিয়া ২৩ ৪৫৯৭ ১৫২০১ ১৬৩২২ ৪৯.৯
ইওয়াজবলিয়া ৫০ ১০১২৭ ২২২৮৭ ২৩৭৬৭ ৩৮.৪
কাদির হানিফ ৬০ ২৯০৯ ১৫৭৮০ ১৬৩০৭ ৬৬.৪
কালাদরাফ ৬৫ ৮৯৯২ ১৬৯৩৯ ২২১৯১ ৩০.৪
চরমাতুয়া ৪০ ৪৩৫৩ ১৩১০১ ১৪৮৫০ ৫৩.৬
দাদপুর ৪৫ ৩৪১৯ ১০৮৭১ ১২৯১১ ৪৭.০
ধর্মপুর ৪৭ ১১৪২৬ ২০৩৮৪ ২১৯৪৯ ৩৩.৫
নিয়াজপুর ৭৫ ৩৯৮৯ ১৩৯৫১ ১৫৪৪৬ ৫৪.৮
নোয়ান্নাই ৮৫ ৩৮৩৭ ১৪৪৪২ ১৬৩৪০ ৫৫.৬
নোয়াখালী ৮০ ৬২২০ ১৫৮৫২ ১৬৯৯১ ৫৪.৪
পূর্ব চর মাতুয়া ৯০ ৫০২৭ ১১০৬০ ১০৯৮৬ ৩৮.২
বিনোদপুর ২৫ ২৪২৭ ৯৫৮১ ১০৬৬১ ৫৮.৬

সূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ  পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯৫), খলিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ (কাদির হানিফ ইউনিয়ন),  নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ (মাইজদি কোর্ট, ১৮৪১)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকবাহিনী উপজেলায় প্রবেশ করে। ১৮ জুন সোনাপুর এলাকার শ্রীপুর গ্রামে পাকসেনারা ৭০ জন নিরীহ গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। উপজেলার ফেনী পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, চরমটুয়া খাদ্যগুদাম রাজাকার ক্যাম্প, মাইজদী শহর ও অন্যান্য কয়েকটি স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। উপজেলার ৩টি সড়ক শহীদ নূর মোহাম্মদ, শহীদ মেজর মেজবাহউদ্দীন, শহীদ জসীমউদ্দীনের নামে নামকরণ করা হয়। ৭ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন নোয়াখালী সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ, খলিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ, কবির পাটোয়ারী জামে মসজিদ, শ্রীরাম ঠাকুরের মন্দির উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৭%; পুরুষ ৫৩.৬%, মহিলা ৫০.০%। কলেজ ১১, আইন কলেজ ১, মেডিকেল এসিস্টেন্ট ট্রেনিং স্কুল ১, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ২, পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউিট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৫, মাদ্রাসা ৩১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নোয়াখালী সরকারি কলেজ (১৯৬৩), ব্রাদার আন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), আহমদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), অরুণচন্দ্র আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৪), পৌরকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), নোয়াখালী জেলা স্কুল (১৮৫৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: নোয়াখালী বার্তা; সাপ্তাহিক: আজকের উপমা, অবয়ব, নয়াবার্তা, জাতীয় নূর, দিশারী; অবলুপ্ত: নোয়াখালী হিতৈষী, ছোলতান, তানজিন, উপকূল বার্তা, পূর্ব বাঙ্গালী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৪, টাউন হল ১, ক্লাব ৫, সিনেমা হল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস  কৃষি ৪৯.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৫৯%, শিল্প ০.৯৭%, ব্যবসা ১৩.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৬৭%, চাকরি ১৪.৪৬%, নির্মাণ ১.৬২%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৭৯% এবং অন্যান্য ৯.৪৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা  ভূমিমালিক ৫৬.৩০%, ভূমিহীন ৪৩.৭০%। শহরে ৪১.২৫% এবং গ্রামে ৫৮.৭৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল  ধান, আখ, ডাল, চীনাবাদাম, সয়াবিন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, তিসি, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, নারিকেল, পেঁপে, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  গবাদিপশু ৩৭, হাঁস-মুরগি ৬৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব  পাকারাস্তা ২০০.৬৬ কিমি; আধা-পাকারাস্তা ৪৫.২৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮১৪.৩৬ কিমি; রেলপথ ৭ কিমি। রেলস্টেশন ৪।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন  পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা  সুয়েটার কারখানা, ব্রেড ও বিষ্কুট কারখানা, কোমলপানীয় প্রস্ত্তত কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, চালকল, আটাকল, বরফকল, তেলকল।

কুটিরশিল্প  স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা  হাটবাজার ৫৫, মেলা ৩। মাইজদী পৌরবাজার, সোনাপুর দত্তের হাট, খাসের হাট, বাঁধের হাট, খলিফার হাট, কালা মুন্সির হাট এবং লক্ষ্মী নারায়নপুর গ্রামের মেলা (পহেলা মাঘ) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  নারিকেল, সুপারি, ধান, মাদুর, শুটকিমাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫২.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৪.৬%, ট্যাপ ৭.২% এবং অন্যান্য ৮.২%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৬৭.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৭.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র  হাসপাতাল ৬, টিবি ক্লিনিক ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পৌর চিকিৎসাকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৮, ক্লিনিক ৬, পশুচিকিৎসালয় ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ  ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলঙ্করী ঘ~ূর্ণঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার বহুসংখ্যক লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও  কেয়ার, ডানিডা, আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, নিজেরা করি।  [মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নোয়াখালী সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।