নামায

নামায  ফারসি শব্দ, আরবিতে সালাত যার অর্থ ধর্মীয় প্রার্থনা। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয়। সালাত সকালে, মধ্যাহ্নে, দ্বিপ্রহরের পর, বিকেলে, সন্ধ্যায় ও রাতে পাঁচবার আদায় করতে হয় ( আল-কুরআন, ১১:১১৪, ২০:১৩০, ২৪:৫৮, ৩০:১৭-১৮)। দিনে পাঁচবার নামায পড়া বাধ্যতামূলক। নামাযে আরবি ভাষা ব্যবহূত হয়। মক্কা শরীফের মসজিদুল হারামে অবস্থিত পবিত্র কাবার দিকে মুখ করে একা অথবা সমবেতভাবে জামাআতে নামায আদায় করা যায়।  জামাআতে নামায পড়ায় সওয়াব বেশি। বাংলাদেশে মহিলারা সাধারণত ঘরেই নামায আদায় করেন।

নামাযের জন্য নামাযীদের পোশাক ও দেহ পবিত্র থাকা প্রয়োজন। নামাযের জায়গাটিও পবিত্র হওয়া জরুরী। নামাযের জন্য সাধারণত জায়নামায বা মাদুর ব্যবহার করা হয়। নামায আদায় করার সময় মাথায় টুপি পরা সুন্নাত এবং জুতা খুলে রাখাই প্রচলিত বিধান। নামাযের জন্য  উযু করতে হয়।

নামাযের সময় হলে প্রতিটি মসজিদ থেকে মুয়াযযিন আযানের ঘোষণা দেন। নামাযীরা হাত দুদিকে ঝুলিয়ে প্রথমত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। তারপর নিঃশব্দে নামাযের নিয়্যাত করা হয়। নিয়্যাতে আদায়কৃত নামাযের নাম ও রাকাতের সংখ্যা উল্লেখ করতে হয়। এরপর দুহাত কাঁধ বরাবর তুলে আল্লাহু আকবর বলে তকবীর বলতে হয়। এর পরের পর্ব কিয়াম (দাঁড়ানো) যাতে দাঁড়িয়ে হাতদুটি সামনের দিকে ভাঁজ করে শরীরের সহিত রাখা হয় এবং আরবিতে সুরা পাঠ করা হয়। কিয়ামের পর রুকূ। এ সময় নামাযীরা দুই হাত হাঁটুর ওপর রেখে মাথা নত করে। অতঃপর হাঁটু ভাঁজ করে বসে কপাল ও নাক মাটিতে রাখে। এর নাম সিজদা। সিজদা দুটি। এ ক’টি কাজ সম্পন্ন হলে এক রাকাত পূর্ণ হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাকাত শেষ করার পর ডান ও বাম দিকে মাথা ঘুরিয়ে সালামের মধ্য দিয়ে নামায শেষ হয়। সালামের পরে সাধারণত আরবি অথবা মাতৃভাষায় মোনাজাত করা হয়।

নামাযে সাধারণত দাঁড়ানো অপরিহার্য হলেও বিশেষ অবস্থায়, যেমন অসুস্থতা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বসে কিংবা বিছানায় শুয়েও নামায আদায় করা যায়। তখন রুকূ ও সিজদার জন্য নির্ধারিত অঙ্গসঞ্চালনের পরিবর্তে আঙ্গুল ও মাথার সঞ্চালনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়।

নামাযের ভিন্নতা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক রাকাতের সংখ্যাও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ফজরের নামাযে ফরজ রাকাতের সংখ্যা দুই, মাগরিবের তিন এবং জোহর, আছর ও ইশার প্রত্যেকটিতে চার। যদি কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কোন নামায আদায় করা না যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে তা ক’াযা হিসেবে অবশ্যই পড়তে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের অতিরিক্ত আরও চারটি ঐচ্ছিক নামায রয়েছে। সেগুলি হলো: ইশরাক, জুহা (চাশত), আওওয়াবীন এবং তাহাজ্জুদ। ইশরাক নামায আদায় করা হয় সূর্যোদয়ের পরে, জুহা সকাল ৯টার পরে ও জোহরের আগে, আওওয়াবীন মাগরিবের পরে এবং তাহাজ্জুদ দুপুর রাতের পরে।

প্রাত্যহিক নামাযের অতিরিক্ত আরও কতগুলি বিশেষ নামায পড়ার ব্যবস্থা আছে। যেমন সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার জুম‘আর নামায (যা ফরজ), রমজানের সময় বিশ রাকাতের তারাবিহ নামায (যা সুন্নাত), দুই রাকাত ঈদের নামায (যা ওয়াজিব), এবং কারও মৃত্যু হলে তার জানাজার নামায (যা ফরজ কিফায়া)। নামাযের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাযাহাবে নগণ্য কিছু পার্থক্য থাকলেও নামাযের মূল বৈশিষ্ট্য একই রকম।

নামাযে বেশ কয়েকটি আমল সম্পাদন করতে হয়। সেগুলির ১৩টি ফরজ। ৭টি নামায শুরু করার পূর্বে সম্পন্ন করতে হয়। এগুলি আহকাম নামে পরিচিত। এই ৭টি আহকাম হচ্ছে:  শরীর পাক হওয়া; পরিধানের কাপড় পাক হওয়া; নামাযের জায়গা পাক হওয়া; সতর ঢাকা-পুরুষের নাভীর উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীর মুখ, হাত (কব্জির পর থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত) ও পায়ের পাতা ব্যতিত সারা দেহ ঢাকা; কেবলা মুখী হওয়া; ওয়াক্ত অনুসারে নামায আদায় করা; এবং নামাযের নিয়্যাত করা। আরকান নামে পরিচিত অপর ৬টি আমল নামাযের ভিতর আদায় করতে হয়। এগুলি হচ্ছে: তকবীর তাহ্রীমা বলা; কিয়াম (নামাযে দাঁড়ানো); কিরাআত পাঠ করা; রুকু করা; সিজদা করা; এবং শেষে বৈঠক করা।

এছাড়া নামাযের ১৫টি কাজ ওয়াজিব, ২৮টি সুন্নত এবং ৩০টি  মুস্তাহাব। ফিক্হ কিতাবে এগুলির বিবরণ আছে।  [নিয়াজ জামান]