নাচোল উপজেলা

নাচোল উপজেলা (নবাবগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২৮৩.৬৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৫´ থেকে ৮৮°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর-পশ্চিমে গোমস্তাপুর উপজেলা, দক্ষিণ নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে তানোর ও নিয়ামতপুর উপজেলা। এ অঞ্চলের মাটি ধান উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

জনসংখ্যা ১৪৬৬২৭; পুরুষ ৭২৮৯৫, মহিলা ৭৩৭৩২। মুসলিম ১৩০২০৫, হিন্দু ১২৪০১, খ্রিস্টান ২০৬৭ এবং অন্যান্য ১৯৫৪। এ উপজেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: মহানন্দা। লক্ষ্মীকোল বিল ও দামাস বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন নাচোল থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৬৭ ১৯১ ১৭৩৬৪ ১২৯২৬৩ ৫১৭ ৫৫.৬ ৪৪.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৪০ ১০ ১৭৩৬৪ ১৪০০ ৫৫.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কসবা ৩৮ ১৫১৮৩ ১৬৪৬৩ ১৬৬৮৬ ৪২.৫
নাচোল ৫৭ ১৫১৮৪ ১৭৩০০ ১৭৬৩৭ ৪৯.৩
নিজামপুর ৭৬ ১৮৪৯১ ১৩৮৩৬ ১৪১৬১ ৪১.২
ফতেহপুর ১৯ ১৮২৭৯ ১৬৭১৫ ১৬৪৬৫ ৪২.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আলী শাহপুর মসজিদ (ফতেহপুর), কলিহার জমিদার বাড়ি ও মল্লিকপুর জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে  তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। নাচোলের কৃষকবৃন্দ ছিল এ আন্দোলনের প্রাণ। প্রধানত সাঁওতাল কৃষকরা ছিল অগ্রগামী। এ আন্দোলন ‘নাচোল বিদ্রোহ’, ‘তেভাগা আন্দোলন’, ‘নাচোলের কৃষক আন্দোলন’ প্রভৃতি নামে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার প্রতিরোধযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যখন পাকবাহিনী এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছিল সেসময় তাদের প্রবেশ ঠেকানোর লক্ষ্যে নাচোল-আমনুরা রেললাইনের ৩টি সেতু ধ্বংস করে দেয়। ১৯৭১-এর এপ্রিলের শেষ দিকে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের নাচোল থানা যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

বিস্তারিত দেখুন নাচোল উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উজিরপুর দরগা, নাচোল বাজার মন্দির ও দেউপাড়া মঠ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৫.৫%; পুুুরুষ ৪৪.৯%, মহিলা ৪৬.০%। কলেজ ৬, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৭, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাচোল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), নাচোল মহিলা কলেজ (১৯৯৩), নাচোল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), নাচোল প্রাথমিক বিদ্যালয়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৯১%, শিল্প ০.২৯%, ব্যবসা ৯.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.২৫%, চাকরি ৩.৫৪%, নির্মাণ ০.৬৭%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৮% এবং অন্যান্য ৬.৫২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৩.৩৭%, ভূমিহীন ৫৬.৬৩%। শহরে ৪৫.৭৮% এবং গ্রামে ৪৩.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চিনা, কোদা, ম্যারা (ডাল জাতীয়)।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, তাল, নারিকেল, তরমুজ, কুল।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩১৬ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, টমটম (ঘোড়ার গাড়ি)।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ৬। নাচোল হাট, রাজবাড়ী হাট, সোনাইচন্ডী হাট, মল্লিকপুর হাট, নিজামপুর হাট, ভেরেন্ডী গোলাবাড়ী হাট এবং নাচোল বাজারের দুর্গাপূজার মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূিচর আওতাধীন। তবে ৪৬.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৫.৬%, ট্যাপ ২১.৫% এবং অন্যান্য ২.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩১.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫২.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৬.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ২, হোমিওপ্যাথী ডিসপেনসারী ১২০।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, কারিতাস, বার্ড।  [মাযহারুল ইসলাম তরু]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাচোল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।