নাঙ্গলকোট উপজেলা

নাঙ্গলকোট উপজেলা (কুমিল্লা জেলা)  আয়তন: ২২৫.৯৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০২´ থেকে ২৩°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৭´ থেকে ৯১°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে সেনবাগ ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা, পূর্বে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, পশ্চিমে লাকসাম উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৭৩৯৮৭; পুরুষ ১৭১৪৫০, মহিলা ২০২৫৩৭। মুসলিম ৩৬৯৪৭৬, হিন্দু ৪৪৯০, বৌদ্ধ ১০, খ্রিস্টান ৭ এবং অন্যান্য ৪।

জলাশয় প্রধান নদী: ডাকাতিয়া।

প্রশাসন নাঙ্গলকোট থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ১৯৩ ২৭০ ২৬৭১৯ ৩৪৭২৬৮ ১৬৫৫ ৫২.৬ ৫১.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.০৬ ২১ ২৬৭১৯ ২০৪৬ ৫২.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আদ্র ১১ ৪৭৩৮ ১৭৪৬৯ ২০১৪১ ৫২.২
জোড্ডা ৬০ ৬৪৭১ ১৮৯৩৭ ২২৮৮০ ৫০.৪
ঢালুয়া ৪৩ ৬১৮৯ ১৪৮০৪ ১৭৫৭৪ ৫০.২
দৌলখাড় ৫১ ৫৫৪৯ ১৮৯১২ ২৩৩৮৭ ৫০.৫
পেরিয়া ৮০ ৩৬৫৯ ১২৪৩১ ১৪৫২১ ৫৬.৩
বক্সগঞ্জ ৩৪ ৩১৫৯ ১০২১১ ১২৪৬৪ ৫২.৯
বঙ্গড্ডা ১৭ ৩১৯৯ ১১৩৫২ ১৩২২৮ ৫৬.৮
মক্রবপুর ৭৩ ২৯৭৫ ৮৯৭৩ ১০৫৮৮ ৫২.৩
মোকরা ৬৯ ৪৯৮৭ ১৪৪৪৯ ১৭৪৫৯ ৪৯.৫
রায়কোট ৮৬ ৬৩৫৯ ১৭৯৭৩ ২১১৯৫ ৪৭.৮
সাতবাড়িয়া ৯৪ ২২৫০ ৩৫৩৯ ৪৩০৩ ৫৬.৩
হেসাখাল ৫৭ ২৩৮৩ ৯৪৩৪ ১১০৪৪ ৪৩.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পাটোয়ার দীঘির পাড়ে পুরাতন কিল্লা।

মুক্তিযুদ্ধ মুুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। পাকবাহিনী উপজেলার তেজের বাজারে ১১ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। তাছাড়া স্থানীয় রাজাকাররা ১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে হাসানপুর রেলস্টেশনের পাশে মাটিতে পুঁতে রাখে। উপজেলার বটতলী বাজারের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর একটি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকবাহিনী পালিয়ে যায়। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ২টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ২টি গণকবর (পরিকোট ও তেজের বাজার) রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন নাঙ্গলকোট উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬৫০, মন্দির ৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: নাঙ্গলকোট বড় মসজিদ, খন্দকার বাড়ি জামে মসজিদ, মোকরা শাহী জামে মসজিদ, তিলিপ জামে মসজিদ, হেসাখাল শ্রী শ্রী কালীমন্দির, বেলঘর মন্দির, ওহিয়াজোড়া কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫১.২%; পুরুষ ৪৯.৭%, মহিলা ৫২.৪%। কলেজ ৯, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩১, স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৯, মাদ্রাসা ৩৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাসান মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪), চলন কলেজ (১৯৮৫), হোমনাবাদ আদর্শ কলেজ (১৯৮৫), ভোলাইন কলেজ (১৯৯৫), ময়ুরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), দৌলখাড় উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), নাঙ্গলকোট এ আর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় (১৯৮৮), বাদশা মিয়া হাইস্কুল, মন্ডলী উচ্চ বিদ্যালয়, শাকতলী উচ্চ বিদ্যালয়, পাটোয়ার সিনিয়র মাদ্রাসা, নাঙ্গলকোট এ ইউ কামিল মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  সাপ্তাহিক নাঙ্গলকোট বার্তা (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১০২, খেলার মাঠ ১০, নাট্যমঞ্চ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৫.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৫%, শিল্প ০.৭৯%, ব্যবসা ১২.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯১%, চাকরি ১৪.৩৯%, নির্মাণ ১.৪২%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৮.৪২% এবং অন্যান্য ১০.২০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৩.১৩%, ভূমিহীন ৩৬.৮৭%। শহরে ৬০.০৭% এবং গ্রামে ৬৩.১৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ভুট্টা, কলাই, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, তুত, পান, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, আনারস, তরমুজ, কামরাঙ্গা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য প্রজনন ও বিপনন কেন্দ্র ১১, হাঁস-মুরগি ১০, নার্সারি ১১, পশু প্রজনন কেন্দ্র ১৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩২৫.৯৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৯.৭৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৫২.৮৩ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি; নৌপথ ৭.৮৮ কিমি। কালভার্ট ৭২৪, ব্রিজ ২৩।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, বরফকল, ইটের ভাটা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাট বাজার ৪০, মেলা ৪। নাঙ্গলকোট বাজার, ওমরগঞ্জ বাজার, চড়িয়া বাজার, জোড্ডা দৌলখাড় বাজার ও বক্সগঞ্জ বাজার, ঢালুয়া বাজার, মাহিনী বাজার, হেসাখাল বাজার, দায়েমচাতী বাজার এবং পৌষসংক্রান্তি মেলা (মোকরা গ্রাম) ও বৈশাখী মেলা (আজিয়ারা) উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৯.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৭%, ট্যাপ ১.১% এবং অন্যান্য ৭.২%। উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৭৫.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, পবিরার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪২, ইপিআই কেন্দ্র ২৪, ক্লিনিক ২, মানসিক হাসপাতাল ১,  মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৫৮, ১৯৯৮ ও ২০০২ সালের বন্যায় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলে ঘরবাড়ি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, মানব কল্যাণ সংস্থা। [মো. মোবাশ্বের হোসেন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাঙ্গলকোট উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।