নরসিংদী জেলা

নরসিংদী জেলা (ঢাকা বিভাগ)  আয়তন: ১১৫০.১৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৬´ থেকে ২৪°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪´ থেকে ৯০°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া এবং কিশোরগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে গাজীপুর জেলা।

জনসংখ্যা ২২২৪৯৪৪; পুরুষ ১১০২৯৪৩, মহিলা ১১২২০০১। মুসলিম ২০৯৮৮২৯, হিন্দু ১২৫৭৬৯, বৌদ্ধ ৬৫, খ্রিস্টান ১৫১ এবং অন্যান্য ১৩০।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, শীতলহ্মা।

প্রশাসন নরসিংদী জেলার পূর্বে বৃহত্তর ঢাকা জেলার একটি মহকুমা ছিল এবং এটিকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে রায়পুরা উপজেলা সর্ববৃহৎ (৩১২.৭৬ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা পলাশ (৯৪.৪৩ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১১৫০.১৪ ৭০ ৬১৪ ১০৪৮ ৪৪৭৬৪৫ ১৭৭৭২৯৯ ১৯৩৪ ৪৯.৬
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
নরসিংদী সদর ২১৩.৪৩ ১৪ ১৫৬ ২৭৫ ৭০৭৫২৫ ৩৩১৫ ৫০.৯
পলাশ ৯৪.৪৩ ৫৪ ৭৫ ২১২৬১২ ২২৫১ ৫৮.৬
বেলাবো ১১৭.৯০ - ৫১ ১০০ ১৯০০৮৬ ১৬১২ ৪৮.৫
মনোহরদী ১৯৩.৮৭ ১১ ১২৪ ১৬৫ ২৭৫১১২ ১৪১৯ ৪৯.৯
রায়পুরা ৩১২.৭৬ ২৪ ১১২ ২৩৯ ৫৩৫৭৯৬ ১৭১৩ ৪০.৫
শিবপুর ২১৭.৭১ ১১৭ ১৯৪ ৩০৩৮১৩ ১৩৯৫ ৫৫.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল নরসিংদী শহরে পাকবাহিনীর রকেট বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিরীহ লোক নিহত হয় এবং শতাধিক দোকান ভস্মীভূত হয়। ২৯ এপ্রিল পাকবাহিনী শিবপুর উপজেলার ঘাসিদিয়া নামক স্থানে এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৪ জুলাই বেলাবো উপজেলা সদরের নিকটবর্তী স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে আবুল বাসারসহ ৫ জন শহীদ হন। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে শিবপুর উপজেলার চলনদিয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও এ উপজেলার পুটিয়া নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে একজন ক্যাপ্টেনসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মনোহরদী উপজেলার মনোহরদী হাইস্কুলে পাকসেনা ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়াও আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে মনোহরদি উপজেলার শুকুন্দী ইউনিয়নের দশদোনা গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৬%; পুরুষ ৫০.৬%, মহিলা ৪৮.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নরসিংদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪৯), নরসিংদী মহিলা কলেজ (১৯৫৫), শহীদ আসাদ সরকারি কলেজ, সাটির কালিকুমার হাইস্কুল (১৯০১), বালাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), আদিয়াবাদ মুসলিম হাইস্কুল (১৯১২), খিদিরপুর হাইস্কুল (১৯১২), শিবপুর হাইস্কুল (১৯১৮), স্যার কে জি গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), চরসিন্দুর হাইস্কুল (১৯১৯), ব্রাহ্মণদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), পোড়াদিয়া মুসলিম হাইস্কুল (১৯৩০), পারুলিয়া হাইস্কুল (১৯৩৩), চালাকচর হাইস্কুল (১৯৩৩), নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৪), হাতিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৭৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০১%, শিল্প ৭.২৬%, ব্যবসা ১৭.৮৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৯১%, চাকরি ১০.৫৫%, নির্মাণ ১.৫৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৯৮% এবং অন্যান্য ৯.৮৯%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: বার্তা, উত্তাপ, গ্রামীণ দর্পণ; সাপ্তাহিক: নরসিংদীর খবর, সন্দেশ, অতিক্রম, খোরাক; সাময়িকী: বন্ধন, মেঘনা, গ্রামীণ খবর, নরসিংদী।

লোকসংস্কৃতি দিপান্বিতা, ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া (ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় প্রতি বছর কার্তিকের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে বোনেরা ভাইদের কপালে চন্দন ও কাজলের ফোঁটা দেয়), পুণ্যাহ, জামাই ষষ্ঠী উল্লেখযোগ্য।

বিনোদন কেন্দ্র আরশীনগর পার্ক (নরসিংদী সদর)। [মো. মোশাররফ হোসেন সরকার]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলায়।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নরসিংদী জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; নরসিংদী জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।