নবীনগর উপজেলা

নবীনগর উপজেলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা)  আয়তন: ৩৫০.৩২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৫´ থেকে ২৪°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫০´ থেকে ৯১°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর, আশুগঞ্জ ও রায়পুরা উপজেলা, দক্ষিণে মুরাদনগর উপজেলা, পূর্বে কসবা ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা, পশ্চিমে বাঞ্ছারামপুর ও রায়পুরা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৯৩৫১৮; পুরুষ ২৩০২২৭, মহিলা ২৬৩২৯১। মুসলিম ৪৫৬৬৬৬, হিন্দু ৩৬৭৮৯, খ্রিস্টান ১৬, বৌদ্ধ ১১ এবং অন্যান্য ৩৬।

জলাশয় মেঘনা, পাগলা ও বুড়ি নদী।

প্রশাসন নবীনগর থানাকে ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২১ ১৫৫ ২০০ ৫৩১৫৭ ৪৪০৩৬১ ১৪০৯ ৫১.২ ৪২.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.১৪ ১৮ ৫৩১৫৭ ৩৭৫৯ ৫১.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইব্রাহীমপুর ২৭ ৩১৭২ ৬৩৫৭ ৭২৪০ ৫১.৭
কৃষ্ণনগর ৪৫ ৫০৬৩ ১৪৬৪০ ১৬৪৩৬ ৩১.৫
কৈতলা দক্ষিণ ৪০ ২৬৪৫ ৪৯৭৬ ৫৮৯৭ ৫১.৬
কৈতলা উত্তর ৪২ ২২১১ ৭৪৯১ ৯০২৬ ৪০.৩
জুনেদপুর ৩৬ ৩৩৬৪ ৯৬৪১ ১১২৯৮ ৪৮.২
নাটঘর ৫৮ ৬৪৭৬ ১২৪১৫ ১৩৬৭৫ ৩৮.০
পশ্চিম নবীনগর ৬০ ২৫৭৭ ৮৮১৯ ৯৫৫৫ ৩১.৩
পূর্ব নবীনগর ৬২ ৩২৫২ ৫৯৩৫ ৬৪০২ ৩৫.৯
বরাইল ৮১ ২৫৪৮ ৯৪৩৬ ১০৬০৪ ৩৯.৮
বরিকান্দি ১২ ৩২৬৩ ৮৭৮৬ ৯৯৬৫ ৪৩.৬
বিটঘর (টিয়ারা) ২২ ৩৮৯০ ১২২৭৭ ১৪৮৮৪ ৪৬.১
বিদ্যাকুট ১৩ ৬০০৩ ১৩৯৩০ ১৫৪৩৬ ৩৩.৪
বীরগাঁও ১৮ ২৮২৫ ৮০৪৫ ৯৩৮৭ ৩৫.৩
রতনপুর ৭২ ৬২৯২ ১২১৫৯ ১৪৫৪৪ ৪৪.৪
রসুল্লাবাদ ৬৭ ৩৮৯১ ৮৩৫০ ১০১৩৬ ৫৬.৪
লাউর ফতেহপুর ৪৭ ৩৮৩৮ ৯৬৬৭ ১১১০৪ ৫৪.২
শিবপুর ৮৬ ৬২২৮ ১৫৬৬১ ১৭৮৯০ ৪২.৮
শ্যামগ্রাম ৮৮ ৫৬৫৯ ১২৯২৬ ১৪৫০৬ ৪৫.৪
শ্রীরামপুর ৯০ ৩৬৫৪ ৮৭৯৮ ১০৩৭১ ৪৫.৪
সাতমুরা ৮৩ ৩৫১২ ৬৯৫৮ ৮২৭৪ ৪৮.১
সেলিমগঞ্জ ৭৫ ২২৯৮ ৭৬১৭ ৮৮৪৭ ৪৩.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শাহাপুর মসজিদ (১৮৭৬), মুন্সেফ আদালত (১৮৮৪), দক্ষিণ পাড়া মসজিদ (আহাম্মদপুর), বিদ্যাকুট সতীদাহ স্মৃতি মন্দির, নবীনগর মঠ, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি, কামিনী বালা দেবী আনন্দ আশ্রম, নাটঘর শিবমূর্তি (সপ্তম শতাব্দী), কষ্টি পাথরের বিষ্ণুমূর্তি (সপ্তম শতাব্দী, বাঘাউড়া গ্রাম), কষ্টি পাথরের বিষ্ণুমূর্তি (সপ্তম শতাব্দী, সাতমোড়া গ্রাম)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলা ২নং সেক্টরের আওতাধীন ছিল। মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলের ২৪০০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহণ করেন এবং ৩৩ জন শহীদ হন। নবীনগর সদর ও ইব্রাহীমপুর যোগীধারা ব্রিজ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রণাঙ্গন ছিল। উপজেলার খারঘর, নবীনগর পাইলট হাইস্কুল মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে ও নবীনগর থানা কম্পাউন্ডের দক্ষিণাংশে ৩টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন নবীনগর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৪৭, মন্দির ২৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: দক্ষিণ পাড়া মসজিদ (আহাম্মদপুর), শাহাপুর মসজিদ, বিদ্যাকুট সতীদাহ স্মৃতি মন্দির, হযরত করিম শাহ মাযার, হযরত ওয়ালী শাহ মাযার, হযরত খালেক শাহ চিশতির মাযার, হযরত আদু শাহ মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৬%; পুরুষ ৪২.৮%, মহিলা ৪৪.৩%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯৯, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২, মাদ্রাসা ৫৮৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নবীনগর সরকারি কলেজ (১৯৬৯), নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), শ্যামগ্রাম মোহনী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), বিদ্যাকুট অমর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), কৈতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  সাপ্তাহিক তিতাসের খবর (প্রকাশকাল ২০০৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২২, শিল্পকলা  একাডেমী ১, সিনেমা হল ৪, খেলার মাঠ ২৫, শিল্পীগোষ্ঠী ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৩.৫১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪১%, শিল্প ০.৯৬. ব্যবসা ১৬.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৫৬%, চাকরি ৭.৫৪%, নির্মাণ ১.৪০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৮.৯৪% এবং অন্যান্য ৬.৫০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৯৫%, ভূমিহীন ৪১.০৫%। শহরে ৪৭.৩৮% এবং গ্রামে ৬০.২১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, ধনিয়া, মসুরি, মাষকলাই, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিল, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, নারিকেল, সুপারি।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৫ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৩২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫০০ কিমি; নৌপথ ১০৪.৫৪ কিমি।

শিল্প ও কলকারখানা স’মিল, বরফকল।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫১, মেলা ১০। নবীনগর বাজার, বাঙ্গরা বাজার, বাইশমৌজা বাজার, শ্যামগ্রাম বাজার, শিবপুর বাজার ও ভোলাচং বাজার এবং নবীনগর মেলা, ভোলাচং বৈশাখী মেলা, রাধানগর বৈশাখী মেলা, শ্রীঘর কালী মেলা ও নাটঘর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, পাট, ধনিয়া, কলা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৬.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৩.৭%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৪, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৫, ক্লিনিক ২০, রেডক্রস মাতৃসদন ১, পশু হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় এ উপজেলার ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০১ সালের ১ মে প্রচন্ড টর্নেডোর ফলে মেঘনা নদীতে দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চ নিমজ্জিত হয়ে ২৫০০ যাত্রী নিহত হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [মো. আবু বাতেন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নবীনগর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।