নবযুগ

নবযুগ কলকাতা থেকে প্রকাশিত এক পাতার একটি সান্ধ্য দৈনিক। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালের ১২ জুলাই, কলকাতার ৬ নং টার্ন স্ট্রিট থেকে। পত্রিকাটির মূল্য ছিল এক পয়সা। এর মালিক ও পরিচালক ছিলেন শেরে বাংলা  .কে ফজলুল হক এবং যুগ্ম সম্পাদক  কাজী নজরুল ইসলাম ও কমরেড  মুজফ্ফর আহমদ। পত্রিকায় পরিচালকের নাম মুদ্রিত হতো, কিন্তু সম্পাদকের নাম থাকত না। স্বাধীনচেতা, অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী পত্রিকা হিসেবে এটি পরিচিত ছিল।

ফজলুল হক  কৃষক প্রজা পার্টি গঠনের মানসে একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন; একই সময়ে নজরুল ইসলাম, মুজফ্ফর আহমদ ও কতিপয় সমমনা ব্যক্তি ব্রিটিশবিরোধী গণজাগরণের লক্ষ্যে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশেরও চিন্তাভাবনা করছিলেন। এ ব্যাপারে ফজলুল হকের বাসভবনে একাধিকবার সভা হয় এবং তাতে পত্রিকার নামসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। শেষপর্যন্ত নজরুলের প্রস্তাব অনুযায়ী পত্রিকার নাম হয় নবযুগ।

নবযুগে প্রকাশিত নজরুলের আবেগময় ও বলিষ্ঠ ভাষায় ব্রিটিশবিরোধী সম্পাদকীয় ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করে। দেশ, জনগণ ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এমন সম্পাদকীয় বক্তব্য সেকালে দুর্লভ ছিল। নজরুলের চেষ্টায় এতে কবিতা ও সাংবাদিকতার অপূর্ব মিলন ঘটেছিল। নজরুলের রচনাগুণে নবযুগ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে; এমনকি গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে পত্রিকাটি কোনোদিন দুবারও ছাপাতে হতো।

নবযুগে স্বাধীনতা ও গণজাগরণবিষয়ক লেখা প্রকাশিত হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সতর্ক করে দেয়; এক পর্যায়ে জামানতের ১,০০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ২,০০০ টাকা জামানত দিয়ে নবযুগ পুনরায় প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু অল্পকাল পরে ফজলুল হকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে নজরুল ও মুজফ্ফর আহমদ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে এক বছরের মধ্যে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৪২ সালে ফজলুল হক যখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী তখন তাঁর উদ্যোগে এবং নজরুলের সম্পাদনায় নবযুগ পুনরায় প্রকাশিত হয়। এ সময় কবি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে খুলনার মাওলানা আহমদ আলী সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ পর্বে মোট দুবছর চালু থাকার পর পত্রিকাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

নবযুগে প্রকাশিত কিছু সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ নিয়ে নজরুলের যুগবাণী (১৯২২) গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ সরকার সেটি বাজেয়াপ্ত করে। পরে অবশ্য যুগবাণীর কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।  [আলি নওয়াজ]