নকলা উপজেলা

নকলা উপজেলা (শেরপুর জেলা)  আয়তন: ১৭৩.৮৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৩´ থেকে ২৫°০২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৭´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নালিতাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পূর্বে ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলা, পশ্চিমে শেরপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৮৯৬৮৫; পুরুষ ৯২৮৯৫, মহিলা ৯৬৭৯০। মুসলিম ১৮৫৬৬৬, হিন্দু ৩৯৫৯, খ্রিস্টান ৩২ এবং অন্যান্য ২৮।

জলাশয় প্রধান নদনদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও কংস নদী। কুর্শা বিল, বড়বিলা বিল ও বাইরকান্দি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন নকলা থানা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৭৯ ১০৮ ৩৩০৮৬ ১৫৬৫৯৯ ১০৯১ ৫২.৬ ৪১.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.৪১ ১৬ ৩৩০৮৬ ২০১৬ ৫২.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উরফা ৮৫ ৪৭২৪ ৯৮২০ ৯৯৯৭ ৩৭.৫
গৌড়দ্বার ৪৭ ২৩০৫ ৪৫৯০ ৪৮৫৫ ৪২.৬
গনপদ্দি ৩৮ ৪৬১৩ ১০২৭১ ১০৭৩৫ ৩৯.৪
চন্দ্রকোনা ১৯ ৫১০৫ ১১১৩৩ ১১৫১৯ ৪৪.৫
চর অষ্টাধর ২৮ ৫৬৪৯ি ৯৬১৩ ১০১৪৫ ৩৪.৬
তলকী ৭৬ ৩৫৪৪ ৭৪৩৬ ৭৬১২ ৪৮.৩
নকলা ৫৭ ৪৯০২ ৭৯৬২ ৭৯৮৯ ৩৯.১
পাঠাকাটা ৬৬ ৪৩১৯ ৯০২৫ ৯৬৫৬ ৪৪.৯
বানেশ্বরদী ১৭ ৩৭৪৪ ৬৯১১ ৭৩৩০ ৩৯.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কলাপাড়া মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলার নারায়ণখোলা, গৌড়দ্বার, Ÿড়ইতার ও চন্দ্রকোনায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর এ উপজেলা পাকসেনা মুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন নকলা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২১৮, মন্দির ৪, গির্জা ১, মাযার ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কলাপাড়া মসজিদ, নকলা বাজার বড় জামে মসজিদ, উপজেলা পরিষদ মসজিদ, নকলা বাজার মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.০%; পুরুষ ৪৪.৭%, মহিলা ৪১.৫%।  কলেজ ৪, টেকনিক্যাল কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৭, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নকলা হাজী জাল মামুদ মহাবিদ্যালয় (১৯৭২), চৌধুরী ছবরুননেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), চন্দ্রকোনা রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), আফজালুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯২২), নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), নকলা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৪), পাঁচকাহুনিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩১)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ২৭, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ৩০, ললিতকলা একাডেমি ১, খেলার মাঠ ১২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৮%, শিল্প ০.৯৮%, ব্যবসা ১০.৬৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১৯%, চাকরি ৩.৮৬%, নির্মাণ ০.৮৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৯% এবং অন্যান্য ৭.২৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৭৭%, ভূমিহীন ৩৯.২৩%। শহরে ৫০.৪৪% এবং গ্রামে ৬১.৩০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আখ, গম, ভুট্টা, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি বিভিন্ন স্থানীয় জাতের ধান, তিল, মিষ্টি আলু, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, কুল, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬, গবাদিপশু ৩৯, হাঁস-মুরগি ৩৫, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪১৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, ধানকল, চিড়াকল, করাতকল, তেলকল, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, দারুশিল্প, বেত ও কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ৩। নকলা হাট, চন্দ্রকোনা হাট ও নারায়ণখোলা হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আখের গুড়, কলা, পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.১%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৩.৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৫.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৭৪ সালের কলেরায় এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৫৪ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, সিডা।  [মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নকলা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।