দেলদুয়ার উপজেলা

দেলদুয়ার উপজেলা (টাঙ্গাইল জেলা)  আয়তন: ১৮৪.৫৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৫´ থেকে ২৪°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫০´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে টাঙ্গাইল সদর এবং বাসাইল উপজেলা, দক্ষিণে নাগরপুর উপজেলা, পূর্বে মির্জাপুর উপজেলা, পশ্চিমে নাগরপুর এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২০৭২৭৮; পুরুষ ১০০৬৩৮, মহিলা ১০৬৬৪০। মুসলিম ১৮৩৯৯০, হিন্দু ২৩২৭৪, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ৮ এবং অন্যান্য ১।

জলাশয় ধলেশ্বরী নদী ও গুমলী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন দেলদুয়ার থানা গঠিত হয় ১৯৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২৪ ১৬৭ ১৪১০২ ১৯৩১৭৬ ১১২৩ ৫১.০ ৫১.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.২৬ ১৪১০২ ১৩৭৪ ৫১.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আটিয়া ১১ ৫৭০৩ ১৫৩০৭ ১৫১২১ ৫১.৮
এলাসিন ৪৭ ৬১৫৭ ১৩৩১০ ১৪৫৮৭ ৫৯.৮
ডুবাইল ৪১ ৪৮২০ ১১৬৮৪ ১২৯৫৫ ৫৪.৪
দেউলী ৩৫ ৪১৮৩ ৭৯৩৭ ৮৭৮১ ৫০.২
দেলদুয়ার ২৩ ৫৯৫৭ ১৪৭৬৮ ১৬১৭৪ ৫২.০
পাথরাইল ৭১ ৪৬৮৯ ১৬২৪১ ১৫৫৬২ ৫০.৫
ফাজিলহাটী ৫৯ ৪৭৭৮ ৯৯৮৭ ১০৯০৫ ৪৮.৩
লাউহাটী ৬৫ ৬৩১১ ১১৪০৪ ১২৫৫৫ ৪৩.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আতিয়া মসজিদ (১৬০৬ সাল)।

মুক্তিযুদ্ধ ৩ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে উপজেলার সাটিয়াপাড়া-গোড়ান এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর বিভিন্ন সময় এলাকার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ছোট ছোট অপারেশন চলে, তবে অক্টোবর মাসে মোটামুটি বড় অপারেশন বা সম্মুখযুদ্ধ উপজেলার যেসব স্থানে অনুষ্ঠিত হয় সেগুলির মধ্যে ঐ-খোলা, মঙ্গলহোড়, গজিয়াবাড়ি-গমজানি, আটিয়া, হিংগানগর ও এলাসিনের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

বিস্তারিত দেখুন দেলদুয়ার উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫০, মন্দির ৪০. মাযার ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৬%; পুরুষ ৫৫.০%, মহিলা ৪৮.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:  সৈয়দ মহববত আলী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫), সৈয়দ আবদুল জববার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), বেলায়েত হোসেন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯২), ডা এফআরখান পাইলট ইনস্টিটিউট (১৯৬০), বোরহানুল উলুম আহমদিয়া ইয়াছিনিয়া মাদ্রাসা (১৯৭৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪০, সিনেমা হল ২, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ১, খেলার মাঠ ৩০।

পর্যটন কেন্দ্র  দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি, হিঙ্গানগরের রাজবাড়ি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৭.৯১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৯%, শিল্প ২.২০%, ব্যবসা ১৩.১৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১৭%, চাকরি ৮.৪৩%, নির্মাণ ০.৯৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৪৯% এবং        অন্যান্য ১৭.৯৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.১৩%, ভূমিহীন ৩৯.৮৭%। শহরে ৫১.৯৮% এবং গ্রামে ৬০.৭৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, আখ, আলু, গম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি ডাল, মিষ্টি আলু, তিল।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২২, গবাদিপশু ৬০, হাঁস-মুরগি ২৮৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৪.৭৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২.৫৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯১.৪২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন ঘোড়া ও গরুর গাড়ি, পাল্কি ও ডুলি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫৫, মেলা ৬। দেলদুয়ার হাট, লাউহাটি হাট, রূপসীর হাট, নল্লাপাড়া হাট, এলাসিন হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, পাট, আখের গুড়, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৮.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৭%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ২.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৭৫.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, সিডো।  [তপন কুমার দে]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দেলদুয়ার উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।