দামুড়হুদা উপজেলা

দামুড়হুদা উপজেলা (চুয়াডাঙ্গা জেলা)  আয়তন: ৩১১.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৯´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৯´ থেকে ৮৮°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আলমডাঙ্গা এবং মেহেরপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং মেহেরপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮৯৫৭৭; পুরুষ ১৪৫২৬৬, মহিলা ১৪৪৩১১। মুসলিম ২৮৩২৪১, হিন্দু ৪৫৮৫, খ্রিস্টান ১৪১৬, বৌদ্ধ ৪ এবং অন্যান্য ৩৩১।

জলাশয় চিত্রা, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব নদী; কানাইডাঙ্গা খাল, হাতিডাঙ্গা খাল, কার্পাসডাঙ্গা খাল এবং মীরগাঙ্গী বিল, রাইসা বিল ও ডলকা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন দামুড়হুদা থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৭৪ ১০৭ ৬০৭৬৮ ২২৮৮০৯ ৯২৮ ৫১.৯৬ (২০০১) ৪১.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
- ২৫ ৩৩৩৯৬ - ৫৯.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৭.০৩ (২০০১) ২৭৩৭২ ৯৮২ (২০০১) ৪৯.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
দামুড়হুদা ১১ ৯২৭১ ২০৯২৮ ২০৫১৪ ৪৫.৮
পারকৃষ্ণপুর মদনা ২৩ ৭৬২৫ ১২৫১০ ১২৫৪৪ ৪৫.৩
হাউলী ৩৫ ১৪৩৭৫ ২০০০৫ ২০০০৭ ৪৪.৯
জুড়ানপুর ৪৭ ১১৮৯৭ ১৮৪৫১ ১৮২২৪ ৪২.৩
কার্পাসডাঙ্গা ৫৯ ১০৮০৫ ২৩২১৯ ২৩০৭৯ ৪৩.৫
কুড়ালগাছী ৭১ ৭৯৮৩ ১৪৯১০ ১৪৭৩৩ ৩৬.৬
নতিপোতা ৮৩ ১১৩০২ ১৮৫৬১ ১৮৪৯৬ ৩৫.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মালেকুল গাউছের মাযার (চারুলিয়া গ্রাম), রেজাশাহ চিশতির মাযার (কোষাঘাটা গ্রাম), কুতুব-উল আলম শাহ্’র মাযার (মুন্সীপুর), অজ্ঞাত পীরের মাযার ও মসজিদ (শিবনগর), জগন্নাথপুর মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনা এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে নীলবিদ্রোহ ও কৃষক-আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৮৬৯ ও ১৮৭৩ সালের খাজনাবন্ধ আন্দোলনে এ এলাকার কৃষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে এ উপজেলায় বাংলার প্রথম কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে দামুড়হুদার মদনা গ্রামে পাকবাহিনী অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। ৫ আগস্ট উপজেলার বাগুয়ান মাঠে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। একই স্থানে ২৪শে আগস্ট তারিখে শত্রুদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেক দফা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এছাড়া, ২৫ শে নভেম্বর পারকৃষ্ণপুরে পাকবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর আঞ্চলিক সড়কের পাশে শহীদদের স্মরণে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন দামুড়হুদা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২৮, মন্দির ০৪, গীর্জা ০৪, ঈদগাহ ৩০।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.২%; পুরুষ ৪৪.৭%, মহিলা ৪৩.৬%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৯, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ২৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাটুদহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল (১৯১৩), মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), কুড়ালগাছী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৩) কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৬), দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মদনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৭০, সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র ৩, সিনেমা হল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৫৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৮%, শিল্প ০.৫৩%, ব্যবসা ১৪.১১%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৩৪% চাকরি ৬.৫৬%, নির্মাণ ০.১০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.৩৬%, এবং অন্যান্য ৫.৮৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৮১%, ভূমিহীন ৪০.১৯%। শহরে ৪৮.০২% এবং গ্রামে ৬৩.১৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল আখ, ধান, গম, ডাল, আলু, যব, ভুট্টা, পাট, ছোলা, পান, পেঁয়াজ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, সরিষা, তামাক, নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩৪, হাঁস-মুরগী ৪২৪; প্রজনন কেন্দ্র ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪১৬ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি, নৌপথ ১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, চিনিকল, ময়দাকল, বরফকল, স’মিল।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বেতের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ১। দামুড়হুদা হাট, ডুগডুগির হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, কলা, আম, চিনি, পেঁয়াজ, মুগ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬০.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৭%, ট্যাপ ১.৪ % এবং অন্যান্য উৎস ২.৯%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫০.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪২.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ৭.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন।  [ইমন সিদ্দিক]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দামুড়হুদা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।