দশমিনা উপজেলা

দশমিনা উপজেলা (পটুয়াখালী জেলা)  আয়তন: ৩৫১.৮৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°০৮´ থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮´ থেকে ৯০°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাউফল উপজেলা, দক্ষিণে গলাচিপা উপজেলা, পূর্বে লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা, পশ্চিমে গলাচিপা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১২৩৩৮৮; পুরুষ ৬০২৪১, মহিলা ৬৩১৪৭। মুসলমান ১১৫৫৩২, হিন্দু ৭৮৫০ এবং খ্রিস্টান।

জলাশয় প্রধান নদী: তেঁতুলিয়া।

প্রশাসন দশমিনা থানা গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।


উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫০ ৫১ ১৯২৫২ ১০৪১৩৬ ৩৫১ ৫৭.০ ৪৭.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৯৯ ১৯২৫২ ৯৬৩ ৫৭.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
আলীপুর ১০ ১০৬১৮ ১০১৮৩ ১০৩৫৫ ৫০.০
দশমিনা ৫২ ২১৯৯৪ ১৩২৩৪ ১৪১৫৩ ৫৩.২
বহরমপুর ২১ ৯৯৩১ ৭৪৭৬ ৮৪৯৪ ৪৯.০
বাঁশবাড়িয়া ৩১ ৮৯৪ ৮৮৫০ ৯৪০৯ ৫১.৫
বেতাগী সানকিপুরা ৪২ ১০২৪৩ ৯৬২০ ১০০৩৮ ৪৯.৬
রনগোপালদি ৮৪ ২৫২২৫ ১০৮৭৮ ১০৬৯৮ ৩৮.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি বাহিনীর অধীনে সংঘটিত হয়ে নিজেরা এবং জেলার অন্যত্র থেকে অপারেশনে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একত্রে অভিযান পরিচালনা করত। তবে উপজেলার অধিকাংশ স্থান দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বলে এখানে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের তেমন তৎপরতা ছিল না এবং পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনা-সামনি যুদ্ধ হয়নি।

বিস্তারিত দেখুন দশমিনা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৬৮, মন্দির ১১, মাযার ২। মুন্সী আমিরুল্লাহ মসজিদ (আদমপুর-বহরমপুর), সিকদার বাড়ি মসজিদ (বেতাগী সানকিপুরা), তালুকদার বাড়ি মসজিদ (দশমিনা)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৮.৭%; পুরুষ ৫২.৬%, মহিলা ৪৫.১%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৯, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আব্দুর রশিদ তালুকদার ডিগ্রী কলেজ (১৯৭৭), আলীপুর কলেজ (১৯৯৯), দশমিনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৬), গছানী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৮), চাঁদপুরা এবিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬০), নেহালগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৭), দশমিনা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৫৪), দশমিনা ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬৮), আদমপুর ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৫), চর হোসনাবাদ সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  (অবলুপ্ত) দশমিনা বার্তা, দেশ কথা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৭, লাইব্রেরি ২, মহিলা সংগঠন ১, সিনেমা হল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৮৬%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৬৯%, শিল্প ০.৫৭%, ব্যবসা ১০.২৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯৯%, চাকরি ৫.৮৮%, নির্মাণ ১.৪৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৩% এবং অন্যান্য ৮.৯০%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, ডাল, মরিচ, তরমুজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি  কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশুর ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য ও গবাদিপশুর খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮১৩ কিমি; নৌপথ ৬৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, তেলকল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি।

কুটিরশিল্প বাঁশের কাজ, বুননশিল্প, ছোবড়াশিল্প, বোতামশিল্প ইত্যাদি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪১। দশমিনা হাট, নলখোলা হাট, আরজবেগী হাট, রণগোপালদি হাট, গছানি হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ইলিশ মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার ১৪.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ মৎস ও বনজ সম্পদ।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৬%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৫.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৬.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৫৮৪, ১৮২২, ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় এবং ১৮৭৬ সালের বন্যায় বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, ভোস্ড, টেরি-ডেস-হোম্স, বিডিএস, পিডিও।  [গাজী শহীদুল ইসলাম শহীদ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দশমিনা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।