দধি

দধি বা দই একপ্রকারের অম্লপক্ক দুগ্ধজাত খাদ্য। বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক দুধে উপস্থিত ল্যাকটোজ নামক শর্করা গাঁজনের ফলে দুধ জমাট বেধে দধিতে পরিণত হয়। কুসুম গরম দুধের সাথে ২-৩% হারে দই-বীজ যোগ করে ৩৭-৪২° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৪-১২ ঘণ্টা রেখে দুধ জমাটবদ্ধকরণের মাধ্যমে দই তৈরি করা হয়। সাধারণভাবে ২-৩ দিন আগে তৈরি দধিকে দই-বীজ বলে, যা উপকারি ব্যাকটিরিয়া সমৃদ্ধ। দই-বীজে উপস্থিত অণুজীবের প্রভাবে দুধের শর্করা ভেঙ্গে এসিড তৈরি হয়, যা দুধকে জমাট বাধতে সাহায্য করে। পশ্চিমা দেশগুলোতে দধিকে ইওগার্ট বলা হয়। তবে ইওগার্ট তৈরিতে সুনির্দিষ্ট বীজ ব্যবহার করা হয়, যা দধির বীজ থেকে কিছুটা স্বতন্ত্র।

অ¤েøর উপস্থিতির কারণে দধির স্বাদ কিছুটা টক। চিনি মিশ্রিত দুধ থেকে মিষ্টি দই এবং চিনি ছাড়া দুধ থেকে টক দই তৈরি হয়। দধি সাধারণভাবে দুধের তুলনায় অধিক সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। দধিতে উপস্থিত অণুজীব মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি হিসেবে প্রমাণিত। এই অণুজীবগুলো মানব পরিপাকতন্ত্রে উপস্থিত ক্ষতিকর অণুজীবকে ধ্বংস করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। দধিতে সাধারণত ৪-৫% চর্বি, ৫-৯% আমিষ, ৪-১৫% শর্করা ও ০.৮% হারে খনিজ লবণ থাকে। কক্ষ তাপমাত্রায় ২ দিন পর্যন্ত এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (৪° সেলসিয়াস) অবস্থায় ১২ দিন পর্যন্ত দধি উপাদেয় থাকে।

দুধ জ্বাল দেওয়ার মাত্রার উপর নির্ভর করে দই-এর বর্ণ সাদা থেকে শুরু করে হালকা খয়েরি হতে পারে। দধি থেকে জনপ্রিয় পানীয় লাসসি, বোরহানি, ঘোল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। টক দধি অনেক সময় চিনি, ফল বা ফলের রস মিশ্রিত করে পরিবেশন করা হয়। দধি সাধারণভাবে একটি পদ হিসেবে সরাসরি খাওয়া হয়। তবে বিভিন্ন ধরনের রন্ধন কার্যেও টক দধির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ যেমন কোর্মা, রেজালা, দৈ বড়া প্রভৃতি। বিভিন্ন ধরনের স্বাদবর্ধক খাদ্য উপকরণ তৈরিতেও দধি ব্যবহার করা হয় যেমন রাইতা, সালাদ, ইত্যাদি।

ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে তৎকালীন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে (বর্তমান ইরাক) দধি তৈরির প্রণালি আবিষ্কৃত হয়েছিল। দধি তৈরিতে গরু ছাড়াও অন্যান্য গৃহপালিত পশু যেমন মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত দুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ভুরিভোজের পর এবং নাস্তা হিসেবে দধি পরিবেশনা বাঙালি ঐতিহ্য। বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে দধি উৎপাদন ও বিক্রয় করা হয়। তবে বগুড়া জেলা উন্নতমানের দধির জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে মহিষের দুধ থেকে তৈরি টক দই জনপ্রিয়। উৎকৃষ্ট স্বাদ ও গন্ধের কারণে সারা বিশ্বে দধি বিশেষভাবে সমাদৃত। [রায়হান হাবিব]

আরও দেখুন দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য