তেরখাদা উপজেলা

তেরখাদা উপজেলা (খুলনা জেলা)  আয়তন: ১৮৯.৪৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫০´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৪´ থেকে ৮৯°৪৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালিয়া উপজেলা, দক্ষিণে রূপসা উপজেলা, পূর্বে মোল্লাহাট উপজেলা, পশ্চিমে দিঘলিয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ১১৬৭০৯; পুরুষ ৫৮৩৬৩, মহিলা ৫৮৩৪৬। মুসলিম ৯৪৪৭৭, হিন্দু ২২২২০ এবং খ্রিস্টান ১২।

জলাশয় প্রধান নদী: আঠারোবাঁকী।

প্রশাসন তেরখাদা থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৩২ ৯৯ ১১৯৭৭ ১০৪৭৩২ ৬১৬ ৫২.০ ৪৮.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.১৭ ১১৯৭৭ ১১৭৮ ৫২.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
অজুগড়া ১৩ ৮৪৭২ ৭৩৫১ ৭৩৫৮ ৪৯.১
তেরখাদা ৮১ ৫৫৩৬ ১১০০৩ ১০৯২২ ৫৩.১
বারাসাত ২৭ ১০৪৩৪ ১০৮৯৬ ১১২০৩ ৪৬.৭
মধুপুর ৪০ ৬৮৮৯ ১০৫৮১ ৯৬৭৩ ৪২.৪
শচীয়াদহ ৫৪ ৯০৫৪ ৮৭৭৯ ৮৮১৭ ৫১.০
শাগলাদহ ৬৭ ৬০৫০ ৯৭৫৩ ১০৩৭৩ ৪৮.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তেরখাদা উপজেলা ৯নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১৫ মে পাকবাহিনী সাহাপাড়া ও সাচিয়াদহ গ্রামে ব্যাপক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা পাতলা ক্যাম্প থেকে সমগ্র উত্তর খুলনা এলাকায় জুড়ে যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং পাকবাহিনী যুদ্ধের ৯ মাসে তাদের মূলঘাটি পাতলা ক্যাম্প কখনো দখল করতে পারেনি। তেরখাদায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে এবং ১টি স্বাধীনতা উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন তেরখাদা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১৪, মন্দির ৫৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সাকাতিবাড়ি মসজিদ, পোদ্দারবাড়ি মসজিদ, পানতিতা বড়বাড়ি মসজিদ, নাচুনিয়া মসজিদ, আটালিয়ার মসজিদ এবং কালিমন্দির, বুড়িমার গাছতলা (তীর্থস্থান) উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৫%; পুরুষ ৪৯.৯%, মহিলা ৪৭.০%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নর্থ খুলনা ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৬), চিত্রা মহিলা কলেজ (২০০২), শতদল কলেজ (২০০২), ইখড়ী কাটেঙ্গা ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩২), শহীদপুর খান এ সবুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৯), পঞ্চপল্লী আতিয়ার রহমান মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯৫), ইন্দুহাটি নেপাল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৩), আটলিয়া সিদ্দিকিয়া আলীম মাদ্রাসা (১৯৫৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, নাট্যদল ২, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.৫০%, অকৃষি শ্রমিক ২.০২%, শিল্প ১.৯৫%, ব্যবসা ১০.৬১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬১%, চাকরি ৮.৩১%, নির্মাণ ০.৭২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩১% এবং অন্যান্য ৪.৮১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.২৫%, ভূমিহীন ৩৪.৭৯%। শহরে ৫৭.০৬% এবং গ্রামে ৬৬.০৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, নারিকেল, আখ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কুল, নারিকেল, জামরুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯২২৫ (চিংড়ী ঘেরসহ), গবাদিপশু ১০৭, হাঁস-মুরগি ৪২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ২২৩ কিমি; নদীপথ ১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটা কল, তেলকল, ইটের ভাটা, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৩। কাটেঙ্গার হাট, তেরখাদা হাট, জয়সেনা হাট, পাতলা হাট, শেখরপুর হাট, ছাগলদহ হাট এবং তেরখাদা মেলা, বুড়িমার গাছতলা মেলা (ছাগলদহ) ও পাতলা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  গলদা চিংড়ি, নারিকেল, ধান, কুল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৮%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৩.১%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে সহনীয় মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৪.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল  ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, প্রশিকা।  [একরামুল কবির]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তেরখাদা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।