তামাক

তামাক (Tobacco)  Solanaceae গোত্রের বড় পাতাবিশিষ্ট উদ্ভিদ Nicotiana tabacum। এর শুকনো পাতা সাধারণত সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা ও পান খাওয়ার জর্দায় ব্যবহূত হয়। তামাক উষ্ণমন্ডলীয় আমেরিকার উদ্ভিদ হলেও কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের অনেক আগ থেকেই ভারতীয়রা এটি ব্যবহার করত। স্পেনীয়রা ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকো থেকে তাদের দেশে তামাক নিয়ে আসে। অতঃপর স্পেনীয় ও পর্তুগিজরা প্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় তামাকের প্রসার ঘটায়। জ্যাঁ নিকোট নামে এক ব্যক্তি ফ্রান্সে তামাকের ব্যবহার প্রচলন করেন আর তাই তাঁর নামেই তামাকের নাম দেওয়া হয় Nicotiana।

তামাক গাছ

১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা ভারতে তামাক নিয়ে আসে, তবে তা ছিল সাধারণ তামাকের আরেকটি ঘনিষ্ট প্রজাতি নিকোটিন তামাক Nicotiana rustica, সম্ভবত এটি ছিল প্রাক্-কলম্বীয় যুগে মেক্সিকোতে প্রথম চাষকৃত আদি তামাক। সাধারণ তামাকের (ভার্জিনিয়া জাত) প্রবর্তনের পূর্বে এটিই ছিল বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে চাষকৃত তামাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্জিনিয়া তামাক ভারতে আসে ১৯২০ সালে। N. rustica তামাকের চাষ এখন উত্তর-ভারত, রাশিয়া ও পূর্ব-ইউরোপে সীমিত হয়ে পড়েছে। নিকোটিন তামাক সাধারণ তামাকের তুলনায় অধিক নিকোটিনসমৃদ্ধ (৪-১০%)।

তামাকের পাতায় নিকোটিন নামক একপ্রকার উপক্ষার থাকে। তামাকের ধূমপান মানুষকে কিছুটা আনন্দ দিলেও প্রকৃতপক্ষে নিকোটিন বিষাক্ত পদার্থ। তাই তামাকের ধোঁয়া মোটেও ভাল নয়। এর প্রভাবে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার অন্যতম।

তামাকের চাষ প্রায় সবধরনের জমিতেই করা চলে। যেসব এলাকার গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো সেসব অঞ্চলে এ গাছ ভাল জন্মে। বাংলাদেশে তামাক রবিশস্য হিসেবে চাষ করা হয় প্রায় ৭৩,৫৩৫ একর জমিতে। বছরে গড়ে প্রায় ৩৮,০০০ মে টন তামাক উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান তামাক উৎপাদনকারী জেলা হচ্ছে রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালী। তবে রংপুর ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে তামাকের চাষ করা হয়। রংপুরে মতিহারি ও জাতি তামাক বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়। হুঁকায় সাধারণত মতিহারি তামাকের ব্যবহার করা হয়। চুরুট তৈরির কাজে জাতি তামাক বেশি উপযোগী।  [মোস্তাফা কামাল পাশা]

আরও দেখুন আফিম; গাঁজা