ডোমার উপজেলা

ডোমার উপজেলা (নীলফামারী জেলা)  আয়তন: ২১৬.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°০২´ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৬´ থেকে ৮৮°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নীলফামারী সদর উপজেলা, পূর্বে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা, পশ্চিমে দেবীগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪৯৪২৯; পুরুষ ১২৫৩৩৮, মহিলা ১২৪০৯১। মুসলিম ২০৩৩৬২, হিন্দু ৪৫৯৫৪, বৌদ্ধ ৫ খ্রিস্টান ৩২ এবং অন্যান্য ৭৬।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনেশ্বরী, বুড়ি তিস্তা, দেওনাই।

প্রশাসন ডোমার থানা গঠিত হয় ১৮৭৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ৪৭ ৪৭ ৪০১৭৩ ২০৯২৫৬ ১১৫৩ ৫০.৭ (২০০১) ৪৬.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্ললা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৪২ (২০০১) ১২ ১৭০২৭ ১৭৬৫ (২০০১) ৬৪.২
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২১.৪৮ (২০০১) ২৩১৪৬ ৯৪৫ (২০০১) ৫১.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন(একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
কেতকীবাড়ী ৭৬ ৪৬৯৫ ৮৯১৬ ৮৯৬৭ ৪৯.৩
গোমনাতি ৪৭ ৭০৫৪ ১২৮৫৫ ১২৫৬৫ ৪৪.১
জোড়াবাড়ী ৬৬ ৫৭৭৩ ১২০৮৪ ১১৯৬৩ ৫১.৬
ডোমার ৩৮ ৪১৯২ ৯৭২৮ ৯৬০৮ ৪৯.৭
পাঙ্গা মটুকপুর ৮৫ ৬০৩৪ ১১৬৫১ ১১১২৫ ৪২.১
বামুনিয়া ১৭ ৪৮১০ ৮৩২৮ ৮০৯১ ৪৯.০
বোড়াগাড়ি ২৮ ৭৪৭১ (২০০১) ১৩৮১৪ ১৩৫৬৬ ৪৫.২
ভোগদাবাড়ি ১৯ ৯০৪৭ ১৮২৫৯ ১৮৫৬৬ ৫১.৬
সোনারায় ৯৫ ৭০৫৩ ১২৬০২ ১২৭৬৩ ৪৩.৩
হরিণচড়া ৫৭ ৪৮০৭ ৮৫৬৬ ৮৩৮৫ ৪৩.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ময়নামতির দূর্গ (হরিণচড়া), শাহ কলন্দরের মাযার (সোনারায়)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২১ সালে ব্রিটিশ সরকার এবং জোতদার জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সাধারণ কৃষকেরা ডোমারকে স্বাধীন স্টেট ঘোষণা করে। ১৯৪২ সালের ১৮ ও ১৯ জুলাই এ উপজেলায় কৃষকসভার প্রাদেশিক সম্মেলন অনূষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু, কৃষক নেতা মনসুর হাবিবুল্লাহ, নৃপেন চক্রবর্তী প্রমুখ যোগ দেন। ১৯৪৬-৪৭ সালে এ অঞ্চলে ব্যাপক আকারে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষভাগে ডোমারের সব শ্রেণীর মানুষ ৬৩ টি রাইফেল এবং নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সৈয়দপুর পাকসেনা-ক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং দারওয়ানী থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। আগস্ট মাসে কেতকীবাড়ীর শিয়ালডাঙ্গিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়।

বিস্তারিত দেখুন ডোমার উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২০০, মাযার ৭, মন্দির ৫০।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৩%। পুরুষ ৫১.৪%, মহিলা ৪৫.২%। কলেজ ৫, কারিগরি কলেজ ৪, কৃষি কলেজ ১, মাধ্যমিক স্কুল ৪৪, ভকেশনাল স্কুল ৩, মাদ্রাসা ১৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৭, লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ৪, নাট্যমঞ্চ ১, মহিলা সংগঠন ১, নাট্যদল ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.০৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৬৯%, শিল্প ০.৩৮%, ব্যবসা ১২.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭৮%, চাকরি ৪.২৮%, নির্মাণ ০.৯৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৯% এবং অন্যান্য ৫.০৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.১৯%, ভূমিহীন ৪৮.৮১%। শহরে ৪২.১৩% এবং গ্রামে ৫৩.১৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, তামাক, আলু, হলুদ, মরিচ, সবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, ভাদই ধান, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, লিচু।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ১০৯.১১ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৫৬০.১০ কিমি; রেলপথ ৩১.০০ কিমি; নৌপথ ২৬২.০০ কিমি; রেলস্টেশন ৩, বাসস্ট্যান্ড ২।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, তেলকল, বরফকল, করাতকল ইত্যাদি।

কুটিরশিল্প বাঁশশিল্প, কাঁসাশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ ইত্যাদি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৫, মেলা ১। বসুনিয়া, আমবাড়ি  বোড়াগাড়ি হাট উলেল্লখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পাট, আদা, পিঁয়াজ, টমেটো, আলু, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় মোটা দানার বালু (ডোমার স্যান্ড) পাওয়া যায়।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.২%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ৪.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪২.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪০.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৬.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১০, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, প্যাথলজিক্যাল সেন্টার ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে ডোমার উপজেলায় বহুলোক প্রাণ হারায়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, পিসফুল বাংলাদেশ সোসাইটি।  [রিয়াসত করিম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ডোমার উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।