ঝালকাঠি জেলা

ঝালকাঠি জেলা (বরিশাল বিভাগ)  আয়তন: ৭০৬.৭৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২০´ থেকে ২২°৪৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর ও পূর্বে বরিশাল জেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা, দক্ষিণে বিশখালী নদী ও বরগুনা জেলা।

জনসংখ্যা ৬৮২৬৬৯; পুরুষ ৩২৯১৪৭, মহিলা ৩৫৩৫২২। মুসলিম ৬১৩৭৫০, হিন্দু ৬৮৫৭২, বৌদ্ধ ১৯৫, খ্রিস্টান ১০৫ এবং অন্যান্য ৪৭।

জলাশয় প্রধান নদী: বিষখালী, গজালিয়া, নলছিটি, কালিজিরা।

প্রশাসন ১৯৭২ সালে মহকুমা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে নলছিটি উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৩১.৪২ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ৩১.৩% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা কাঁঠালিয়া (১৫১.২৯ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৭০৬.৭৬ ৩২ ৩৯৬ ৪৫৫ ১১২০০৩ ৫৭০৬৬৬ ৯৬৬ ৬৬.৭
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কাঁঠালিয়া ১৫১.২৯ - ৪৭ ৫২ ১২৪২৭১ ৮২১ ৬৫.৩
ঝালকাঠি সদর ১৫৯.৪৫ ১০ ১৫৮ ১৯০ ২১৬৩৪৮ ১৩৫৭ ৬৮.৮
নলছিটি ২৩১.৪২ ১০ ১১৯ ১৩৮ ১৯৩৫৫৬ ৮৩৬ ৬৭.২
রাজাপুর ১৬৪.৫৮ - ৭২ ৭৫ ১৪৮৪৯৪ ৯০২ ৬৩.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল পাকসেনারা ঝালকাঠি সদরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে হত্যাকা-, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে। ৫ মে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির সঙ্গে পাকসেনাদের মাদ্রা, ভীমরুল ও পেয়ারা বাগানের লড়াইয়ে রাজাকারসহ ২১ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৩ মে নলছিটি উপজেলায় পাকসেনারা ৯ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে। ২৩ মে সদর উপজেলার রমানাথপুর শরীফ বাড়ি মসজিদে পাকসেনারা ২৩ জন নামাযরত মুসল্লিকে হত্যা করে । এছাড়া ১৬ জুন রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা মানিকবাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে আটক করে হত্যা করে। ২১ অক্টোবর রাজাপুর থানা প্রাঙ্গনে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৩ নভেম্বর সদর উপজেলার চাচৈর ও প্রমহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি শত্রুমুক্ত হয়। জেলায় ৬টি বধ্যভূমি রয়েছে এবং ২টি স্মৃতিফলক, ১টি স্মৃতিভাস্কর্য (সিটি পার্ক) ও ১টি স্মৃতিস্তম্ভ (আমুয়া ইউপি সংলগ্ন শহীদ হেমায়েত উদ্দিন স্মৃতিস্তম্ভ) স্থাপিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৬.৭%; পুরুষ ৬৭.৬% মহিলা ৬৫.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঝালকাঠি সরকারি কলেজ (১৯৬৪), ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজ, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক কলেজ, ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭২), সিদ্ধকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৮২), কীর্ত্তিপাশা প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), বাউকাঠী বিন্দুবাসিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৮), ঝালকাঠি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৯), নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৩), রায়পুর সৈয়দ আবদুল লতিফ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), চন্দ্রকান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১০), চিংড়াখালী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা (১৯২৪), রাজাপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৪০)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৫.৮৯%, অকৃষি শ্রমিক ৫.২৫%, শিল্প ১%, ব্যবসা ১৬.৪৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫৭%, চাকরি ১৪.৮৯%, নির্মাণ ২.১৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৭৩% এবং অন্যান্য ৯.৭৪%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক শতকণ্ঠ (অবলুপ্ত); সাপ্তাহিক: সূর্যোদয়, অজানা খবর। মাসিক: সুজাবাদ; অবলুপ্ত সাময়িকী: অর্ক, জাগরণ, আগ্রহ, নামতা, শব্দাকাশ, সবুজপত্র, জনয়িতা, সৃষ্টি, শতবর্ষ স্মরণিকা (১৯৭৫), মোহনা (১৯৭৬), চাঁদের হাসি (১৯৭৮), কালান্তর (১৯৭৮), অন্বেষা (১৯৭৮), বাংলার বার্তা (১৯৮৩), বিপ্লবী বাংলা (১৯৮৩), পাড়ি (১৯৮৬), সূর্যালোক (১৯৯২), অজানা খবর (১৯৯৫), আজকের শব্দকোষ (১৯৯৫), নামতা (১৯৯৬), প্রতিভা (১৯৯৬), আগ্রহ (১৯৯৬), সৃষ্টি (১৯৯৬), সাঁকো (১৯৯৭), কামিনী (১৯৯৮) এবং সাপ্তাহিক রোববারের চিঠি (১৯৭২), ধাঁনসিড়ি সাহিত্য সৈকত (১৯৯২), নলছিটি বার্তা, সুগন্ধা বার্তা, সন্দেশ ও বিথিকা।

লোকসংস্কৃতি এ জেলায় ভাটিয়ালী গান, ধুয়া গান, লোকগীতি, বারোমাসি গান, কবি গান, কীর্ত্তন, জারি গান, ছাদ পেটানোর গানের প্রচলন আছে। কথক নাচসহ নানা প্রকার নাচের প্রচলনও লক্ষ করা যায়।  [হুমায়ুন রহমান]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ঝালকাঠি জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ঝালকাঠি জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।