জেনেটিক রোগ

জেনেটিক রোগ (Genetic Disease) কোনো ব্যক্তির জেনমে অস্বাভাবিক পরিবর্তনজনিত সৃষ্ট যেকোনো রোগকে জেনেটিক রোগ বলা হয়। জেনম (genome) কোষের অভ্যন্তরে অবস্থিত ডিএনএ-এর সমষ্টি যা ক্রোমোসোমের আকারে নিউক্লিয়াসে সুসজ্জিত থাকে। মানুষের জেনমে প্রায় ২৫,০০০ জিন আছে। জিন (gene) ডিএনএ-এরই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ যার মাধ্যমে সকল জৈবিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে এবং বংশ পরম্পরায় পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। জেনেটিক রোগ হতে পারে এক বা একাধিক জিনে পরিবর্তন বা মিউটেশনের কারণে অথবা ক্রোমোসোমে সংখ্যাসূচক বা কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে। এটি হতে পারে ভ্রুণ-পর্যায়ে স্বতস্ফূর্ত মিউটেশনের মাধ্যমে (de novo mutation)) অথবা পিতা-মাতা থেকে, যদি কেউ একজন ঐ রোগের বাহক হন। যখন কোনো জেনেটিক রোগ পিতা, মাতা বা উভয়ের নিকট থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয় তখন তাকে বংশগত রোগ (hereditary disease) বলা হয়।

মানুষের দেহকোষে মোট ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোসোম থাকে। প্রতি জোড়া ক্রোমোসোমের একটি আসে পিতার কাছ থেকে অন্যটি আসে মায়ের কাছ থেকে। এর মধ্যে ২২ জোড়াকে বলা হয় অটোসোম (autosome) ও এক জোড়াকে বলা হয় সেক্স ক্রোমোসোম (sex chromosome)। অটোসোম প্রাণীর বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে সেক্স ক্রোমোসোম পুরুষ ও স্ত্রীর মূখ্য ও গৌণ বৈশিষ্ট্যের নিয়ন্ত্রণকারী। অটোসোম পুরুষ ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে একই, কিন্তু সেক্স ক্রোমোসোমের বিন্যাস পুরুষের জন্য XY ও স্ত্রীর জন্য XX। মিউটেশনের অবস্থান ও ধরনের উপর ভিত্তি করে জেনেটিক রোগের শ্রেণীবিণ্যাস করা হয়ে থাকে। যেমন: অটোসোমাল রেসিসিভ (autosomal recessive), অটোসোমাল ডমিনেন্ট (autosomal dominant), X-ক্রোমোসোমজনিত (X-linked), Y-ক্রোমোসোমজনিত (Y-linked) ও মাইটোকন্ড্রিয়া সম্পর্কিত (mitochondria related)।

ক্রোমোসোমের সংখ্যাসূচক পরিবর্তনের ফলে ও বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক রোগ হতে পারে, যার মধ্যে ডাউনসিন্ড্রোম (Down syndrome), ক্লিনফেল্টারসিন্ড্রোম (Klinefelter syndrome) ও পাতাউসিন্ড্রোম (Patau syndrome) উল্লেখযোগ্য।এযাবৎ প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি জেনেটিক রোগ সনাক্ত হয়েছে। তবে প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় অধিকাংশ জেনেটিক রোগ বিরল প্রকৃতির। [শরীফ আখতারুজ্জামান]