জুড়ী উপজেলা

জুড়ী উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা)  আয়তন: ১৮৬.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২২´ থেকে ২৪°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০১´ থেকে ৯২°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বড়লেখা উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে ত্রিপুরা ও আসাম সীমান্ত, পশ্চিমে কুলাউড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৮৯৫৮; পুরুষ ৭৩২৪০, মহিলা ৭৫৭১৮। মুসলিম ৯৭২৭১, হিন্দু ৪৮০৬৪, খ্রিস্টান ৫৩০, বৌদ্ধ ৫ এবং অন্যান্য ৩০৮৮। এ উপজেলায় খাসিয়া ও মণিপুরী  আদিবাসি জনগোষ্ঠী বসবাস করে।

জলাশয় জুড়ী নদী এবং হাকালুকি হাওর উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রাগনাছড়া, পুটিছড়া, কাউলীছড়া, কুইয়াছড়া খাল এবং চালতা, তুরল, পিংলা ও গড়কুড়ি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ২০০৪ সালের ২৬ আগস্ট জুড়ী উপজেলা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭১ ১৪২ ১৩২৯১ ১৩৫৬৬৭ ৮০০ ৫৭.২ ৫১.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৪৫ ১৩২৯১ ২০৬১ ৫৭.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন(একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গোয়ালবাড়ি ২৯ ৮০৫৮ ১০৮৯৫ ১১৬৪৬ ৫৩.৫
জায়ফরনগর ৪৭ ৯৫২৫ ১৯২৭৫ ২০১৯৮ ৫৬.৩
পশ্চিম জুড়ী ৫৫ ৭৪০৮ ১১৪৯৩ ১১৪২১ ৫১.৮
পূর্ব জুড়ী ৬৭ ৮০৬২ ৯০৫৬ ৯৫০৯ ৬২.৩
ফুলতলা ২৩ ৭৩৬৪ ৯৭২৬ ৯৪৬১ ৩৯.৭
সাগরনাল ৮৩ ৮৪১১ ১২৭৯৫ ১৩৪৮৩ ৪৭.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্তমান উপজেলার আওতাধীন এলাকায় শহরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের নিয়ন্ত্রনাধীন বিভিন্ন চা কারখানায় হামলা চালায় এবং কালভার্ট ও ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। ২ ও ৩ ডিসেম্বর ফুলতলা, সাগরনাল ও কাপনাপাহাড় এলাকায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচ- লড়াই সংঘটিত হয়। ৪ ডিসেম্বর জুড়ি শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার জুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে জাগধারী পুকুর পাড়ে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন জুড়ী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৭০, মন্দির ৪০, গির্জা ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫২.৩%; পুরুষ ৫৪.৩%, মহিলা ৫০.৫%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০, ব্র্যাক স্কুল ৪০, কেজি স্কুল ১০, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: তৈয়বুন্নেছা খানম একাডেমি ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), জুড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯৪), নয়াবাজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৮)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৯.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ১২.৭৭%, ব্যবসা ১১.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪৮%, চাকরি  ৭.৩১%, নির্মাণ ০.৯৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.০২% এবং অন্যান্য ১৮.৮০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৭.৩৫% এবং ভূমিহীন ৬২.৬৫%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, চা।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, আনারস, কলা, কমলালেবু।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৭ কিমি, আধা-কাঁচারাস্তা ৮, কাঁচারাস্তা ১৫৫ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি।

শিল্প ও কলকারখানা করাতকল, চালকল, চা কারখানা, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, হার্ডবোর্ড কারখানা, হিমাগার প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, বেতশিল্প, শীতলপাটি শিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লী-বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৪.৫%, ট্যাপ ২.০% এবং অন্যান্য উৎস ৩৩.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৫.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর, ৫১.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং ১৩.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

খনিজ সম্পদ  এ উপজেলায় ইউরেনিয়াম ও চীনা মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ৬, হাসপাতাল ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ২০। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি চা বাগানে চা শ্রমিকদের জন্য নিজস্ব হাসপাতাল রয়েছে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [মোঃ আব্দুল মান্নান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জুড়ী উপজলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।