জিরকন

জিরকন (Zircon)  বাদামি, সবুজ, ফ্যাকাশে নীল, লাল, কমলা, সোনালি-হলুদ, ধূসর প্রভৃতি বর্ণের অথবা বর্ণহীন প্রিজমবিশিষ্ট নিওসিলিকেট (neosilicate) মণিক। বিভিন্ন ধরনের বর্ণহীন জিরকন থেকে চমৎকার মূল্যবান রত্নপাথর তৈরি হয়ে থাকে। রত্নকারদের বা জহুরীদের কাছে জিরকন নীলকান্তমণি (jacinth), গোমেদ পাথর (zirconite), হায়াসিন্থ (hyacinth) ইত্যাদি নামে সুপরিচিত। জিরকনিয়াম ধাতুর প্রধান উৎস এ জিরকন। জিরকন মণিক শাঙ্খিক বিভঙ্গ (conchoidal fracture) এবং সমান্তরাল ফাটল বা চিড় (cleavage) প্রদর্শন করে যা কোনো একদিকে দৃশ্যমান হয়। মোহ স্কেলে (Moh’s scale) এর কাঠিন্য মাত্রা ৭। গ্রানাইট, সায়ানাইট, সিস্ট ও কেলাসিত চুনাপাথরে জিরকন মণিক পাওয়া যায়। জিরকন মণিকের গঠনে থোরিয়াম এবং ইউরেনিয়াম তেজষ্ক্রিয় ধাতু জিরকনিয়ামকে প্রতিস্থাপিত করলে কখনও কখনও জিরকন তেজষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জিরকন মণিকে থোরিয়াম ও ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি মণিকটিকে শিলার বয়স নির্ণয়কারী একটি মূল্যবান মণিকে রূপান্তরিত করে। শিল্পে জিরকনিয়াম এবং হাফনিয়াম (hafnium)-এর প্রধান উৎস হচ্ছে জিরকন মণিক। প্রকৃতিতে বালু থেকে, প্রধানত সৈকত বালু থেকে জিরকন আহরিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এবং পটুয়াখালী জেলার সমুদ্র সৈকতে এবং উপকূলীয় দ্বীপসমূহে সৈকত বালি ভারি মণিক প্লেসার (placer) মজুত হিসেবে জিরকন পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিহি থেকে অধিকতর মিহি বালুকণাতে জিরকন মণিক উপস্থিত থাকে। সাধারণত জিরকন মণিক ধারণকারী বালু, ইলমেনাইট, গারনেট এবং রুটাইল ধারণকারী বালুর চেয়েও অধিকতর মিহি হয়ে থাকে। সৈকত বালি প্লেসারে এ মণিকের পরিমাণ সর্বোচ্চ প্রায় ৭% (শিলখালী), সর্বনিম্ন ১% (মাতারবাড়ী দ্বীপ) যদিও গড়ে প্রায় ৪%। বাংলাদেশে জিরকনের মোট মজুত হিসাব করা হয়েছে প্রায় ১৫৮ হাজার টন। নিম্নের সারণিতে উপকূলীয় এলাকা এবং উপকূলীয় দ্বীপভেদে জিরকনের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো:

সারণি বাংলাদেশে জিরকনের এলাকাভিত্তিক মজুত (টন এককে)।

স্থান কাচা বালু ভারি মণিক জিরকন
বদরমোকাম (কক্সবাজার) ১৭৬৫০০০  ৪১১০০০ ৪৯৩২
সাবরং (কক্সবাজার) ৩৪৭৫৫৮ ৬৮৫৮২  ৪১৮৪
টেকনাফ (কক্সবাজার) ১৯৩৯৫৮০  ৪৪২২৯১ ২৮৩০৬
শিলখালী (কক্সবাজার) ২৭৫৬৮২৮ ৪৮৯৭১৪ ৩৩৩০০
ইনানী (কক্সবাজার) ৭২৯২৮৬ ১৭৫৪৭৬ ১০৮৮০
কক্সবাজার ৫১১৯০০০ ৯২০০০০ ২৩০০০
মহেশখালী দ্বীপ (কক্সবাজার) ৪১১৪২৩০ ৭৮৪২১০ ৩৭১১২
মাতারবাড়ী দ্বীপ (কক্সবাজার) ৬৯০৩০ ১৫২১৫ ৭৯৪
নিঝুম দ্বীপ (নোয়াখালী) ৩৭৯৩৩৭ ৯৬৩৪৮ ২০৫২
কুতুবদিয়া দ্বীপ (কক্সবাজার) ৪০৪৬৪৬ ১২০০০০ ৩৯০০
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) ২৮৭২৪৮৬ ৮৩১৬৬৮ ৯৬৪৭
মোট  ২০৪৯৬৯৮১ ৪৩৫৪৫০৪ ১৫৮১১৭

উৎস  বদরুল ইমাম, বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ, ১৯৯৬।

[সিফাতুল কাদের চৌধুরী]