জাবপোকা

জাবপোকা

জাবপোকা (Aphid)  Homoptera বর্গভুক্ত Aphididae গোত্রের অতি ক্ষুদ্র কোমল দেহবিশিষ্ট, নাশপাতি আকৃতির, উদ্ভিদরস চোষণকারী পতঙ্গ। বহুরূপিতা, পর্যায়ক্রমে পোষক বদলানোর স্বভাব, দেহের অভ্যন্তরে ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটানো ও উদ্ভিদের মধ্যে ভাইরাসজনিত ব্যাধি সংক্রমণের লক্ষণীয় ক্ষমতার দরুন জাবপোকা কৃষির জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জাবপোকা উদ্ভিদের রস চুষে পান করায় উদ্ভিদের সরাসরি ক্ষতি হয় এবং উদ্ভিদের নানা অংশে রোগ লক্ষণ দেখা দেয়। এ পতঙ্গদলের সদস্যদের অধিকাংশই সঙ্ঘবদ্ধভাবে বাস করে বলে রোগের লক্ষণ সাধারণত উদ্ভিদের একাংশে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্ভিদের বর্ধমান কোমল অংশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রান্ত অংশে সচরাচর পাতা কুঁচকানো, কুঁড়ি দুমড়ানো ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। জাবপোকা মধু নির্যাস (honey dew) নিঃসরণ ঘটিয়ে পত্ররন্ধ্র রুদ্ধ করে উদ্ভিদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করে পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন করে। উদ্ভিদের দেহের নানা অংশের উপর জমে থাকা হানিডিউ উদ্ভিদের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর ছত্রাক সৃষ্টিতে মদদ যোগায়। জাবপোকা ডানাবিশিষ্ট অথবা ডানাবিহীন হতে পারে, এক জোড়া কর্নিকল (cornicle) এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলে জাবপোকা রয়েছে, তবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেই এদের অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা যায়। পৃথিবী জুড়ে ২৫০ প্রজাতিরও অধিক জাবপোকা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পতঙ্গ।

বাংলাদেশে অধিকাংশ জাবপোকা শনাক্ত করা যায় নি। বিভিন্ন পোষক উদ্ভিদ থেকে ২০টি গণের অর্ন্তভুক্ত ৩০টি জাবপোকার নাম কেবল তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা পৃথিবীতে শনাক্তকৃত জাবপোকার ০.৭৫ শতাংশ এবং প্রাচ্যদেশসমূহ ও ভারতে শনাক্তকৃত সংখ্যার যথাক্রমে ২.৯৪ ও ৪.৫৯ শতাংশ।

অধিকাংশ জাবপোকার জীবনচক্র জটিল। কতকগুলিতে অনিষিক্ত ডিম থেকে সরাসরি ভ্রূণ গঠিত হয়। আবার কিছুসংখ্যক জাবপোকা পর্যায়ক্রমে অপুংজনি ও যৌনজনি (holocyclic) অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে অনিষিক্ত ডিম থেকে সরাসরি ভ্রূণ সৃষ্টি করে এবং যৌনজননের মাধ্যমেও ভ্রূণের জন্ম দেয়। এ দেশে বর্ষাঋতু শেষে হেমন্তের আগমনে ডানাযুক্ত অপুংজনি-জাত জাবপোকা গ্রীষ্মে সুপ্তিকাল কাটানোর পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে এবং সঙ্গে সঙ্গে পোষক উদ্ভিদ নির্বাচন করে। এ পোষক উদ্ভিদেই এরা অপুংজনি প্রক্রিয়ায় প্রজনন শুরু করে। জাবপোকা শীতঋতুর মাঝামাঝি অধিকসংখ্যক শাবকের জন্ম দেয়। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে পোকার সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। বসন্তের শেষে এরা পোষক উদ্ভিদের মূল ও অন্য উদ্ভিদের (সচরাচর কতকগুলি তৃণগোত্রীয় আগাছা) ফাঁক-ফোকরে গ্রীষ্মনিদ্রা যায়।  [বিধান চন্দ্র দাস]