জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) হলো দীর্ঘকালীন আবহাওয়ার ধরন পর্যবেক্ষণনোত্তর প্রাপ্ত আবহাওয়া পরিবর্তনের দলিল, এবং এই পরিবর্তন সাধারণত বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মূলত মৌসুমী আবহাওয়ার ধরন এবং কয়েক বছর ধরে ঘটে যাওয়া বৃষ্টিপাতের পরিমাণকে নির্দেশ করে। জলবায়ু পরিবর্তন আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ধরণ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। বর্তমান গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পস্তরের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর মেরুর দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ বিষুব রেখা এবং দক্ষিণ মেরুর তুলনায় অধিক। বৈশ্বিক তাপমাত্রার এমন অসম বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই আবহাওয়ার ধাঁচ অনুমান করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার উপর নির্ভরযোগ্যতা হারানোর ফলস্বরূপ ফসল রোপণ, বৃদ্ধি এবং ফসল তোলার সময় নির্ধারণে ব্যাঘাত ঘটছে। গত ২-৩ বছরের ব্যবধানে পৃথিবী দীর্ঘ খরা, হারিকেন, বন্যা, শৈত্য প্রদাহ এবং অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে আছে। ক্যালিফোর্নিয়া, কানাডা, নর্ডিক দেশগুলির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রাজিলে ২০১৮ সালে এবং সম্প্রতি গ্রিস, স্পেন এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। আইপিসিসি (জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকার প্যানেল), ২০২১-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য চরম প্রাকৃতিক ও আকস্মিক ঘটনাকে দায়ী করা হয়েছে। উষ্ণ তাপমাত্রার প্রভাবে মেরু অঞ্চলে অতিদ্রুত ও বৃহৎ আকারে বরফের আস্তর ও হিমবাহ গলে যাচ্ছে। এই অতিরিক্ত পানি বর্ধিত তাপমাত্রার কারণে সম্প্রসারিত হচ্ছে, যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং উপকূল রেখায় সমুদ্রের পানির অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালদ্বীপ এবং অন্যান্য দ্বীপসহ বিশ্বের নিচু অঞ্চলের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ যাবতকাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যায় যে জলবায়ুর এই পরিবর্তন সমসাময়িক সময়ে পূর্বের তুলনায় খুব দ্রুত ঘটছে এবং এর জন্য দায়ী মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপ। প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল এবং কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রক্রিয়া হাজার বছরের সঞ্চিত কার্বনকে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে তাপ আটকে রেখে উষ্ণতা বৃদ্ধি করে যা ‘গ্রিন হাউস গ্যাস প্রভাব’ নামে পরিচিত । আবাদী জমি বাড়ানোর জন্য বন নিধন বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এছাড়া মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস যথাক্রমে ‘গ্রিন হাউস গ্যাস প্রভাব’ বৃদ্ধির জন্য দায়ী দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান গ্যাস। প্রাণিসম্পদ চাষ, কর্ষণ এবং নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার এসব গ্রিন হাউস গ্যাসের মুক্তির প্রধান কারণ। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের হার মোতাবেক, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মোট অনুপাত ৭৬%, মিথেন ১৬%, নাইট্রাস অক্সাইড ৬% এবং ফ্লোরিনযুক্ত গ্যাস ২%। তবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় অন্য গ্যাসগুলির সম্ভাব্য তাপ ধারন ক্ষমতা অনেক গুণ বেশি। [জেবা ইসলাম সেরাজ]