ছোট কাটরা

চার্লস ডয়লীর স্কেচ, ছোট কাটরা (উনিশ শতক)

ছোট কাটরা  বড় কাটরার প্রায় ১৮৩ মিটার পূর্বে হাকিম  হাবিবুর রহমান লেনে বুড়িগঙ্গার তীরে মুগল (পুরাতন) ঢাকায় অবস্থিত। ছোট কাটরা ভবনটি আয়তাকৃতির এবং এর বাইরে থেকে পরিমাপ ১০১.২০ মি ঊ ৯২.০৫ মি এবং ভেতরে ৮১.০৭ মি ঊ ৬৯.১৯ মি। বাইরের প্রাচীর ০.৯১ মি থেকে ১ মি পুরু এবং এর প্রতিরক্ষা বুরুজের দেয়াল যেখানে সব চেয়ে পুরু সেখানে ১.২২ মিটার। এটি বড় কাটরার পরিকল্পনা অনুসারে তৈরী তবে আকৃতিতে অপেক্ষাকৃত ছোট।

ছোট কাটরা-বর্তমান

ইমারতটি দক্ষিণ এশিয়ার ক্যারাভান সরাই-এর নমুনায় নির্মিত ও রাজকীয় মুগল কাটরার অনুরূপ। এতে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি প্রবেশপথ দক্ষিণের প্রবেশপথ প্রধান। কাটরার জানালার খিলানসমূহ তিনভাঁজ বিশিষ্ট। মিনারগুলি মজবুত এবং অন্যান্য মুগল মিনারের তুলনায় মোটা ও প্যারাপেট-বিহীন। প্রাসাদের সিঁড়ি ও মেঝে কাঠ দিয়ে তৈরী। কাঠের সিঁড়িগুলি ছিল বেশ চওড়া। একতলায় একটি কক্ষকে বিভক্ত করা হয়েছে আড়াআড়িভাবে। একটি লম্বা ও অপরটি চওড়া এ দ’ুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ভল্টেড কক্ষসমূহের প্রবেশদ্বারে বড় খিলান যুক্ত আছে। ভল্টেড কক্ষসমূহ মাটির নিচে থাকায় তা ঠান্ডা ও অন্ধকার। কক্ষগুলি অলংকরণবিহীন সাদামাটা। খুবসম্ভবত তা তাহখানার কাজ করেছিল। ভল্টসমূহ মুগল স্থাপত্যের নমুনা হিসেবে অতি সুন্দর। ছোট কাটরা অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও স্থাপত্য ও অলংকরণাদির বৈশিষ্ট্য বিচারে এটি বড় কাটরার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বহুবার সংস্কার করার ফলে প্রবেশপথ দুটির মূল বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন দেখা দিলেও এ দুটি এখনও বর্তমান। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ বেষ্টিত চারপাশের ভবনাদি বহুবার নবায়ন, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। লআদি ভবনে অনেক আধুনিক সম্প্রসারণ হয়েছে। নদীর দিকে তিনতলা বিশিষ্ট প্রবেশপথে কিছু উপনিবেশিক বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। ত্রয়ী জানালায় ও সুউচ্চ পার্শ্ব বুরুজে পরবর্তী সংস্কারের সময় উপনিবেশিক প্রভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।

ছোট কাটরা ভবনটি নওয়াব শায়েস্তা খান ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। বলা হয়, কাটরা নওয়াবের কর্মচারীদের এবং শায়েস্তা খানের বর্ধিত পরিবারবর্গের বসবাসের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়।

বিবেচনাহীন পরিবর্তন ও অনাকাঙ্ক্ষিত নবায়নের ফলে এ ভবনের স্থায়িত্ব বেড়েছে কিন্তু আদি অবয়ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঢাকায় বিদ্যমান দুটি কাটরা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ইমারত নয়। এ ধরনের স্থাপত্য ভবনের মাত্র দুটি বিরল নমুনা বর্তমানে সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে উপনীত।  [আয়শা বেগম]

আরও দেখুন কাটরা