ছুটি খান

ছুটি খান  গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৪-১৫১৯) ও তৎপুত্র নাসিরুদ্দীন নুসরৎ শাহের রাজত্বকালে (১৫১৯-১৫৩২) চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের শাসনকর্তা। তাঁর পিতা পরাগল খান ছিলেন হোসেনশাহী আমলে চট্টগ্রামের সৈন্যাধ্যক্ষ ও প্রাদেশিক শাসনকর্তা (শের-ই-লস্কর) এবং পিতামহ রাস্তি খান ছিলেন সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহ-এর রাজত্বকালে (১৪৫৯-১৪৭৪) চট্টগ্রামের শাসনকর্তা (মজলিস-ই-আলা)। ছুটি খান, তাঁর পিতা ও পিতামহ চট্টগ্রামের স্থানীয় অধিবাসী ছিলেন। তারা বংশ পরম্পরায় গৌড়ের সুলতানের প্রিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন সেনাপতি হিসেবে চট্টগ্রামের শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। পিতার মতোই ছুটি খান একজন দক্ষ শাসক ও বীর যোদ্ধা ছিলেন। ত্রিপুরার তৎকালীন রাজা ধন্যমাণিক্য শক্তি সঞ্চয় করে ১৫১৩ ও ১৫১৫ সালে দু’বার চট্টগ্রাম আক্রমণ করেন। এ সময় ছুটি খান যুদ্ধ করে ত্রিপুরা বাহিনীকে পরাজিত ও বিতাড়িত করেন। তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের বিস্তীর্ণ অংশ অধিকার করেন বলেও প্রতীয়মান হয়। সুলতান নুসরৎ শাহের সঙ্গে ছুটি খানের অন্তরঙ্গতা ছিল। পিতা পরাগল খান ত্রিপুরা বিজয়ে ব্যর্থ হলেও ছুটি খান সে কাজ সম্পন্ন করেন। সে জন্য হোসেন শাহের দরবারে ছুটি খানের বেশ কদর ছিল।

পিতা পরাগল খানের মতো ছুটি খানও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁরই নির্দেশে রাজসভার কবি শ্রীকর নন্দী সংস্কৃত মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বটি বাংলা পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে অনুবাদ করেন (১৫১৮-১৫২০)। তাই এটি ‘ছুটি খানি মহাভারত’ নামে পরিচিত। ছুটি খান শুধু দক্ষ শাসক ও বীর যোদ্ধাই ছিলেন না, ধর্মপালন ও জনগণের সুবিধা-অসুবিধার প্রতিও তাঁর মনোযোগ ছিল। তাঁর জনহিতকর কাজগুলো তারই প্রমাণ। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার পরাগলপুর মৌজার দেওয়ানপুর গ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ছুটি খান মসজিদ ও তৎসংলগ্ন বিশাল দিঘি লস্কর ছুটি খানের স্মৃতি বহন করছে। এ ছাড়া রাউজান উপজেলার চিকদাইর গ্রামের কাহার পাড়ায় একটি প্রাচীন দিঘি আছে। দিঘিটি ছোট খাঁ বা ছুটি খাঁর দিঘি নামে পরিচিত। গবেষকদের অভিমত, এই দিঘি খননকারী হচ্ছেন ছুটি খাঁ। তাদের মতে, ত্রিপুরা সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযানকালে ছুটি খান সসৈন্যে কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন এবং সৈন্যদের ও জনগণের প্রয়োজনে দিঘিটি খনন করান।  [আহমদ মমতাজ]