চুনারুঘাট উপজেলা

চুনারুঘাট উপজেলা (হবিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৪৯৫.৫০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৪´ থেকে ২৪°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২২´ থেকে ৯১°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে মাধবপুর উপজেলা। প্রাচীন ব্যবসা বন্দর হিসেবে উপজেলা শহরের সুনাম রয়েছে।

জনসংখ্যা ৩০২১১০; পুরুষ ১৪৭১০৮, মহিলা ১৫৫০০২। মুসলিম ২৩৬৫৬১, হিন্দু ৬৩৩৭০, বৌদ্ধ ৬, খ্রিস্টান ৬৪২ এবং অন্যান্য ১৫৩১। এ উপজেলায় খাসিয়া, মণিপুরী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস করে।

জলাশয় খোয়াই ও সুতাং নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চুনারুঘাটথানা গঠিত হয় ১৯১৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১৫৯ ৩৭৩ ১৯৬৫১ ২৮২৪৫৯ ৬১০ ৫৫.৯ ৩৯.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৯৯ ২১ ১৯৬৫১ ২৪৫৯ ৫৫.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আহমদাবাদ ০৯ ১১১০৩ ১৪৫০১ ১৫৫৫২ ৪০.০
উবহাটা ৯৫ ৫৩০৩ ১২৩৬৪ ১২৮৯৩ ৪৩.২
গাজীপুর ৩৮ ১২২৪৭ ১৬৯১৩ ১৮২৫৪ ৩৯.১
চুনারুঘাট ১৯ ৩৯৫৩ ১০৯১১ ১১৪৮৩ ৩৮.৭
দেওড়গাছ ২৮ ১০৭৯৯ ১৪২৮৫ ১৪৮৫৬ ৩৮.৬
পাইকপাড়া ৫৭ ১২৯৫৪ ১৪১৩২ ১৪৫২৮ ৩৫.৮
মীরাহি ৪৭ ৬৫৭৩ ১৩৯১৪ ১৪৯৪৪ ৩৮.৫
রানীগাঁও ৬৬ ১৬০১১ ১৫৪০৫ ১৬৫০৯ ৪২.৯
শাটিয়াজুরি ৮৫ ৮৫১৭ ১০২২৭ ১০৮৭৭ ৪১.২
সানখোলা ৭৬ ১৬২৫৭ ১৪৭০২ ১৫২০৯ ৩৯.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  মুড়ারবন্দর দরগাহ্ শরীফের ভগ্ন শিলালিপি ও স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ।

ঐতিহাসিক ঘটনা এ উপজেলার রাজাপুরে টিপরা রাজা আচকনারায়ণের রাজধানী ছিল। আচকনারায়ণ ১৩০৪ সালে বাংলার সুলতান ফিরুজ শাহের সেনাপতি সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরউদ্দিনের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হন।

মুক্তিযুদ্ধ চুনারুঘাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকগুলি যুদ্ধ হয়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেমা চা-বাগান যুদ্ধ, নলুয়া চা-বাগান যুদ্ধ, কালেঙ্গা বনাঞ্চল যুদ্ধ, হরিণমায়া যুদ্ধ, নালমুখ রাজার যুদ্ধ ইত্যাদি। নলুয়া চা-বাগানে ১টি বধ্যভুমি রয়েছে; উপজেলায় ১টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন চুনারুঘাট উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৩৮, মন্দির ২৯, মাজার ৫। নরপতি গ্রামে সৈয়দ শাহ গদা হাসান (রঃ) ও সৈয়দ শরফুল হাসান (রঃ)-এর মাজার উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৮%; পুরুষ ৪৩.৩%, মহিলা ৩৮.৪%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাধমিক বিদ্যালয় ১১০, কিন্ডার গার্টেন ১, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), গাবতলা দাখিল মাদ্রাসা (১৯৩৩), গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৯), মিরাশী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭), উবাহাটা কুদরতীয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৮৭০), সানখলা দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক তরপবার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৫, লাইব্রেরি ১, কমিউনিটি সেন্টার ২, সিনেমা হল ১, অডিটরিয়াম ১, খেলার মাঠ ১০।

দর্শনীয় স্থান চানপুর ও চন্ডীছড়া চা বাগান।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৭১%, অকৃষি শ্রমিক ১৬.০৩%, ব্যবসা ৮.০৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫১%, চাকরি ৩.৬১%, নির্মাণ ০.৮৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.০৭%, অন্যান্য ১২.৮৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৮.০৪%, ভূমিহীন ৫১.৯৬%। শহরে ৫৫.৭৮% এবং গ্রামে ৪৭.৮১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, সীম, আলু, তিল, সরিষা, চা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৫, গবাদিপশু ৪০, হাঁস-মুরগি ৫২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৬.৯৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩০.৪৮, কাঁচারাস্তা ৪৯১.৪৮ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, সোয়ারী।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প, মৃৎশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লোহার কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩। চুনারুঘাট বাজার, চানপুর বাগান বাজার, আমুরোড বাজার, নালমুখ বাজার ও হাজীগঞ্জ বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চা, ধান।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৯.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

খনিজ সম্পদ  পাহাড়ী অঞ্চলের কাঁচ বালি।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৫.৪%, ট্যাপ ৩.০%, অন্যান্য ১১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৪.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪০.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১, পরিবার পরিরকল্পনা কেন্দ্র ১০, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ২, দাতব্য চিকিৎসালয় ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ৯, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, আশা উল্লেখযোগ্য।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চুনারুঘাট উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।