চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার, মহামহোপাধ্যায়

চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার, মহামহোপাধ্যায় (১৮৩৬-১৯১০)  সংস্কৃত পন্ডিত ও কবি। ১৭৫৮ শকাব্দের (১৮৩৬) ১৩ কার্তিক বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে তাঁর জন্ম। পিতা রাধাকান্ত সিদ্ধান্তবাগীশও ছিলেন একজন সং’ঙতে পন্ডিত।

চন্দ্রকান্ত তাঁর পিতার নিকট বঞ্ঝাকরণ ও স্মৃতিশাস্ত্রে প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। পরে তিনি সংস্কৃত-চর্চার দুই প্রধান কেন্দ্র বিষ্ণদ্ধমপুর ও নবদ্বীপে স্মৃতি, ন্যায় ও বেদান্তশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন ও ‘তর্কালঙ্কার’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৮৮৩ সালে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত এখানে শিক্ষাদান করেন। ১৯০৩ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিশিষ্ট সদস্য হন এবং ১৯০৪-১৯০৫ পর্যন্ত পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি ১৮৯৪ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত সদস্যপদ লাভ করেন। প্রাচীনপন্থী পন্ডিতদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ সম্মান লাভ করেন।

এশিয়াটিক সোসাইটির Bibliotheca Indica গ্রন্থমালায় চন্দ্রকান্তের সম্পাদিত একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেগুলির মধ্যে গোভিলগৃহ্যসূত্রম্, কুসুমাঞ্জলিপ্রকরণম্, পরাশরস্মৃতি, ভট্টদীপিকা, ত্রিকান্ডমন্ডন, কাত্যায়নপ্রদীপঃ, গোভিলপরিশিষ্ট এবং কালনির্ণয়টীকা প্রধান। জার্মান পন্ডিত হার্মান ওল্ডেনবুর্গ চন্দ্রকান্ত সম্পাদিত গোভিলগৃহ্যসূত্রমের ইংরেজি অনুবাদ করেন এবং ম্যাক্সমুলার সেক্রেড বুক অব দ্য ইস্ট গ্রন্থমালায় তা প্রকাশ করেন। এতে চন্দ্রকান্তের খ্যাতি পাশ্চাত্যেও বিস্তার লাভ করে। তাঁর রচিত কয়েকটি মৌলিক সংস্কৃত গ্রন্থ হচ্ছে সতীপরিণয়ম্ (মহাকাব্য), চন্দ্রবংশম্ (মহাকাব্য), কৌমুদীসুধাকরম্ (দৃশ্যকাব্য), অলঙ্কারসূত্রম্, উদ্বাহুচন্দ্রালোকম্ (স্মৃতি), তত্ত্বাবলী (দর্শন) প্রভৃতি।

১৮৮৭ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি প্রবর্তিত হলে প্রাচ্যবিদ্যায় কৃতিত্বের জন্য প্রথম যাঁরা এ উপাধি লাভ করেন, চন্দ্রকান্ত ছিলেন তাঁদের অন্যতম। ১৮৯৭ সালে তিনি কলকাতাবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রথম ‘শ্রীগোপাল বসু মল্লিক ফেলো’ নির্বাচিত হন। এ পদে তিনি পাঁচ বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন। পদটিতে নির্বাচিত ফেলোকে নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর হিন্দুদর্শন, বিশেষত, বৈদাস্ত সম্পর্কে কতগুলি বক্তৃতা দিতে হতো। চন্দ্রকান্তের বক্তৃতাগুলি ১৮৯৯ থেকে ১৯০৪ সালের মধ্যে একাধিক খন্ডে প্রকাশিত হয়। চন্দ্রকান্ত স্ত্রীশিক্ষাবিষয়ে উদার ও আধুনিক মত পোষণ করতেন এবং তিনি তাঁর শিক্ষা নামক গ্রন্থে স্ত্রীশিক্ষাকে জাতীয়করণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। ১৯১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।  [রবীন্দ্রনাথ সরকার]