গোরকই

গোরকই  ঠাকুরগাঁও জেলাধীন রাণীশংকৈল থানায় অবস্থিত নাথপন্থিদের একটি প্রাচীন ধর্মীয় কেন্দ্র। গোরক্ষনাথের (নয়- বারো শতক) স্মৃতিবাহী মন্দির ও আশ্রম সম্বলিত এ কেন্দ্র প্রায় ৪০৪৬ বর্গ মিটার জমির উপর বিস্তৃত ও পার্শ্ববর্তী আবাদি জমি থেকে প্রায় ১.৬ মিটার উঁচু। এফ ও বেল প্রণীত ভূমি নকশায় (জে এল নং- ১৪) স্থানটির চিহ্ন এখনও বিদ্যমান। এখানে ৮টি ছোট ছোট মন্দির ও প্রস্তরনির্মিত একটি অতি প্রাচীন কূপ আছে।

আশ্রম চত্বরের পশ্চিমাংশের মাঝামাঝি স্থানে অর্ধপ্রোথিত একটি ইমারত দেখা যায়। ইমারতটির ভূমি পরিকল্পনা আয়তাকার। এর মেঝে সমতল ভূমি থেকে ১.৩৬ মি গভীরে অবস্থিত। মেঝেটির ঠিক মধ্যবর্তী অংশে পাথরের বাঁধাই করা একটি গোলাকার কূপ দেখা যায়। কিছুটা বাঁকাভাবে (curved) সাইজ করে কাটা অমসৃণ বেলে পাথরের খন্ড বসিয়ে অতি নিখুঁতভাবে কূপটি নির্মাণ করা হয়েছে। গোরকই-এর অদূরে কুমারগঞ্জের কূপটি উদঘাটনের পূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই ছিল একমাত্র প্রস্তরনির্মিত কূপ। স্থানীয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের কাছে এ কূপের পানি অত্যন্ত পবিত্র।

উল্লিখিত ইমারতের দক্ষিণাংশের সংলগ্ন ভূমিতে একটি দক্ষিণমুখী ইমারত আছে। এটা গোরক্ষনাথের সমাধি নামে পরিচিত। দুকক্ষবিশিষ্ট এ ইমারতের উপরাংশ ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে ওঠা চতুষ্কোণাকার একটি শিখর দিয়ে ঢাকা। কক্ষের ভেতরে প্রবেশের জন্য দক্ষিণ দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে একটি খিলান দরজা আছে। উক্ত দেয়ালে অবস্থিত অপর একটি সংকীর্ণ খিলান দরজার নিচ দিয়ে এ কক্ষ থেকে উত্তরের দিকের অপেক্ষাকৃত ছোট কক্ষটিতে যাওয়া যায়। এখানে একটি আয়তাকার বেদির উপর প্রায় শিবলিঙ্গাকার একটি প্রতীক উৎকীর্ণ আছে। ধারণা করা হয় যে, এটি নাথগুরুদের সমাধির প্রতীক চিহ্ন। গোরক্ষনাথের সমাধি থেকে ৪.১০ মি দক্ষিণে ধীরচাই মহন্তের সমাধি অবস্থিত।

প্রত্নকেন্দ্রটির পূর্ববাহুর দেয়াল ঘেঁষে পাশাপাশি আরও তিনটি ইমারত দাঁড়িয়ে আছে। মধ্যবর্তী ইমারতটি একটি এক কক্ষবিশিষ্ট পশ্চিমমুখী ইমারত। কক্ষটির অনুভূমিক কার্নিশের উপর একটি অর্ধ গোলাকার গম্বুজ আছে। কক্ষের ভেতরে পূর্ব দেয়ালে নরমুন্ডবেষ্টিত একটি কালীমূর্তি সংস্থাপিত আছে। কালীমন্দিরের অদূরে অনুরূপ আর একটি কক্ষ দৃষ্ট হয়। এটি মৎসেন্দ্রনাথের সমাধি বলে কথিত। কালীমন্দির বরাবর উত্তরের অংশে অপরূপ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একটি কক্ষ পাওয়া যায়। দক্ষিণমুখী কক্ষটির ভেতরে সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত একটি শিবলিঙ্গ আছে। লিঙ্গমন্দিরের উত্তর পশ্চিমে অনুরূপ আকৃতিতে নির্মিত আর একটি শিবমন্দির দৃষ্ট হয়। এ মন্দির বরাবর পশ্চিমে প্রায় ১২ মি দূরত্বে আর একটি আয়তাকার দ্বিতল ইমারত দেখা যায়। অপেক্ষাকৃত নতুন এ ইমারতের দক্ষিণে দরজার চৌকাঠে একটি প্রস্তরফলক বা লিপি ছিল। এ ফলক বর্তমানে দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত (ক্রমিক সংখ্যা: ব, শ-৮) আছে। পন্ডিতদের ধারণা, ফলকটি এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত বাংলা অক্ষরে উৎকীর্ণ ফলকগুলির মধ্যে প্রাচীনতম।  [মোঃ ওসমান গণী]